ঈদ মানেই মহাদুর্ভোগ; মহা দুর্যোগ!
~মীর আব্দুল আলীম~
ঈদ আসে; জনদুর্ভোগ বাড়ে। ঈদ আনন্দের পাশে এ বিড়ম্বনা যেন লাঘব হয় না কখনো। এদেশে ঈদ মানেই এক মহাদুর্ভোগ; মাহা দুর্যোগ! প্রশ্ন হলো এ দুর্ভোগ লাঘবে আমাদের সরকার কতটা সচেষ্ট? সরকারের মন্ত্রী আমলারা জনদুর্ভোগ লাঘবে হুঙ্কার ছোড়েন; জনগনকে আশ্বাসের বাণীও শোনান, কিন্তু তাবৎ হুমকি-ধমকি, আশ্বস কোনই কাজে আসে না। কেউ কথা রাখে না। কথা দেওয়া, হুঙ্কার, অঙ্গীকার সবই যেন লোক দেখানো। এদেশে কোন ওয়াদাই রক্ষা হয় না। ওয়াদাভঙ্গের প্রতিকারও হয় না কখনো। কি করে ওয়াদা ভঙ্গ করে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাতো দেশবাসী হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে। চোখের সামনে কিভাবে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় করা হয়; কি করে মন্ত্রীর নির্দেশের পরও লঞ্চ, ষ্টিমার, ট্রেনের বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়? কেন রাস্তা-ঘাটের হেন অবস্থা? দেশজুড়ে ব্যাপক ঈদ চাঁদাবাজী হচ্ছে। এক শ্রেনীর রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী, পুলিশ, সরকারী চাকুরীজীবি সবাই ঈদ বকশিশের নামে চাঁদাবাজীতে মাতোয়ারা। সরকার কখনো এসব অনিয়ম বন্ধ করতে পারেনি, এবারও পারছে না। কেন পারছে না?
কথা দিয়েও কথা রাখতে পারেনি যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঈদ উপলক্ষে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সড়ক-মহাসড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী রাখতে খানা-খন্দ মেরামতের ঘোষণা দিয়েছিলেন সরকারের এই মন্ত্রী। কিন্তু সড়কে একি হাল! সড়ক মহাসড়ক জুড়ে গর্ত খানা-খন্দকে ভরা। যেন সড়ক নয় পুকুর ডোবা-নালা। আমাদের কোন কোন সংবাদপত্র একে পানি পথে যুদ্ধ হিসাবেও হেডলাইন কছে। দুইদিনের মধ্যে’ দেশের সব রাস্তা চলাচলের উপযোগী করতে না পারলে ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রী ঘোষনা দেন। মন্ত্রীর এ ঘোষনা কতটা যুক্তিযুক্ত? এর আগে সওজ-এর একজন নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ারকে ১৫ দিনের জন্য দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেন তার অধীন সড়কপথের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যর্থতার জন্য। যোগাযোগমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতে নিশ্চিত কাজ হবে কিনা তাও বলা কঠিন। ৩৬৩ দিনে যে কাজ হয় না মন্ত্রী সে কাজ মাত্র দুই দিনে করার নির্দেশ দিলেই কি অদৌ কাজ হবে? ঈদেও আগেই কেন সড়ক মেরামতের ধুম পড়ে? বছর জুড়ে কি করেন মাননীয় মন্ত্রী ও তাঁর বিভাগ। সড়কও জনপদ বিভাগতো সারা বছর যে সড়ক-মহাসড়ক দেখে রাখার কথা। ঈদের আগে রাস্তা মেরামত আর তদারকির জন্য মন্ত্রীর ২০ দিনের হুকুম জারি কি হাস্যকর নয়? সত্যিই কি বিচিত্র এই দেশ! এ অবস্থা যাত্রীরা নিরাপদে, বিড়ম্বনাবহীন ভ্রমণ করতে পারবে সে রকম নিশ্চয়তাই পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদেশের ২১ হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার সড়ক এখনও এ্যাবড়ো-থেবড়ো; খানা-খন্দে ভরা। প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক এখনও এছাড়া আস্ত ইট, বালি ও খোয়ার মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কারের কাজ চলার কারণে গাড়ি চলছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অবস্থা। রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়কজুড়েও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। যোগাযোগমন্ত্রীর বেঁধে দেয়া সময় পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ। ফলে ঈদকে সামনে রেখে জনগনের ঘওে ফেরা আর নিবিঘœ হচ্ছে না। এ্যাবড়ো থেবড়ো রাস্তায় চলতে গিয়ে মাজা-কোমর ভেঙ্গে তবেই জনগনকে ঘওে ফিরতে হবে। বেশ বুঝতে পারছি জনগনকে ব্যাথা নাশক জাম্বাক আর মালিশ মেখে তবেই ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।
কথা রাখেননি বাস মালিকরাও। বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিন-তারিখের ঘোষণা দিয়ে বাস মালিকদের পক্ষে ঘোষণা করা হয়েছিল, এবার ঈদে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হবে না। সে ওয়াদা তারা রাখেননি। যে পরিবহন কোম্পানির যেভাবে খুশি সেভাবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে এ বছর রেলও পিছিয়ে নেই। একই অবস্থা নৌপথের যাত্রীদেরও, তাদেরও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ঈদের আগে যাত্রীদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা কেন? তাহলে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হবে না, ভ্রমণ হবে নিরাপদ, বিড়ম্বনামুক্ত এমনি আশ্বাস দেওয়া কেন? বিস্ময়ের হলো, এবার রেলওয়েও ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বৃদ্ধির কাতারে সামিল হয়েছে। ‘হাওর এক্সপ্রেস’-এ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে নেত্রকোনা পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১৮০ টাকা। অথচ গত ১৪ জুলাই থেকে যাত্রীদের এ টিকিট নিতে হচ্ছে ২০৫ টাকায়। তেমনি ঢাকা থেকে সড়কপথে নাটোরের ভাড়া ৩৭০ টাকা। কিন্তু ২৫ জুলাইয়ের আগে কিনলে দিতে হবে ৪৫০ টাকা আর পরে কিনলে যাত্রীদের দিতে হবে ৫৬০ টাকা। এটা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। ঈদ উৎসবে এযেন সরকারি প্রতারনা! এই অব্যবস্থাপনা আর কতকাল চলবে?
রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে টিকিট নিয়ে চলছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। টিকিট যেন হয়ে উঠেছে আকাশের চাঁদ; যার নাগাল পাওয়া ভার। এ নিয়ে ভূক্তভোগীদের মাঝে চলছে হা-পিত্যেশ। কেউ কেউ অফিস ছুটি নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পাচ্ছে না। শত কষ্টের পর হতাশ মনে বিনা টিকিটে বাড়ি ফিরছেন। ঈদ পার্বণে বরাবরই তাই হয়। টিকিট নিয়ে ভোগান্তি এ যেন শেষ হবার নয়। তবে সরকার চাইলেই ঘরমুখো মানুষের টিকিট নিয়ে এ বিড়ম্বনা লাঘব করতে পারে। ডিজিটাল সরকার টিকিট বিক্রিতে কেন ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে পারছে না? কেবল মাত্র ইমারজেন্সি টিকিট ছাড়া রেল কাউন্টারে টিকিট বিক্রি পদ্ধতি বন্ধ হওয়া দরকার। টিকিট মিলবে বিকাশের মত পাড়ামহল্লার দোকানে দোকানে। যেখানে মানুষ এখন টাকা লেনদেন করছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। যেখানে দেশের একপ্রান্ত থেকে গ্রামেগঞ্জে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে মুহুর্তের মধ্যে সেখানে ২/৩ শ’ টাকার রেলের কিংবা বাসের টিকিটের জন্য ভোর থেকে রাতঅবধি লাইনে দাঁড়াতে হবে কেন? লাইনে দাড়িয়েওতো টিকিট মিলে না। এ ভোগান্তি সরকারের চরম ব্যর্থতা। তা অবশ্যই সরকারকে দুর করতে হবে। এর আগে কোন কোন দেশের ভিসা পেতেও এমন দীর্ঘ লাইন আর বিড়ম্বনার কথা শুনেছি। সেসব দেশের ভিসার জন্য এখন আর ভোর থেকে লাইনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। অনলাইনেই ভিসার আবেদন করা যায়। পরে তারিখ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় ভিসার জন্য গেলেই সহজে ভিসা মিলে। পাশের দেশ ভারতের বিমান কিংবা রেলের টিকিটও মিলছে অনলাইনে। পাড়ায় মহল্লায়ই তা পাওয়া যায়। দেশ জুড়ে বিকাশের মাধ্যমে মুহুর্তে টাকা ছড়িয়ে দেয়া গেলে সামান্য টিকিট কেন সরকার জনগণের হাতে পৌঁছাতে পারবে না। জনগণের এমন দুর্ভোগ লাঘবে সরকারকে এ জাতিয় পদ্ধতি অবশ্য চালু করতে হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি ব্যাংক-এর ব্যাংককে এ দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মত অলিতে গলিতে অনলাইনে টিকিট বিক্রিও পদ্ধতি অনায়াসেই চালু করা যায় এবং তা এখন সময়ের দাবিও। এ দাবি পুরণ না হলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিশ্চিত ভেস্তে যাবে বৈকি।
ঈদের টিকিট এখন সোনার হরিণ। সেদিন আগাম টিকিট বিক্রির বিড়ম্বনা দেখবো বলে বাসা থেকে হাঁটতে হাঁটতেই কমলাপুর রেলষ্টেশনে পৌঁছি। আমার গ্রামের বাড়ি রাজধানীর কোল ঘেঁষা পূর্বাচল এলাকায়। যানজট থাকলে অনেকটা হেঁটেই পাড়ি দিতে পারি তাই আমার টিকিটের বিড়ম্বনা নেই। পত্রিকা আর টিভিতে টিকিট নিয়ে নানা খবরের পর আমার সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা জাগে। স্টেশনে এসেই আমার অফিসের এক কর্মকর্তাকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আগে সেখানে গেলাম। তিনি অনেকটা গলদঘর্ম; ইন করা শার্ট প্যান্ট থেকে অর্ধেকটা বেরিয়ে এসেছে। বোধ করি ধস্তাধস্তিতে বেচারার এমন দশা হয়েছে। তিনি আমাকে দেখেতো ভয়ে কাতর। কারণ দাস্ত (পাতলা পায়খানা) হয়েছে এমন অজুহাতে তিনি সেদিন অফিস কামাই করেছেন। কি আর করবেন বেচারা? ঈদে যখন বাড়ি যেতেই হবে তখন টিকিটতো চাই চাই। টিকিট যুদ্ধে সামিল হতেই তাকে অফিস ফাঁকি দিয়ে রেল ষ্টেশনে আসতে হয়েছে। তাঁর মতো অনেককেই এভাবে টিকিটের জন্য রেলষ্টেশনে ছুটতে হয়। সেদিন আমি সরেজমিন গিয়ে জানতে পারি, কমলাপুর রেলস্টেশনে আগের রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই টিকিট পাননি। অন্যদিকে সেদিনই রাজধানীর গাবতলী, টেকনিক্যাল, শ্যামলী ও কল্যাণপুরের অধিকাংশ কাউন্টারেই উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী বাসের ৭০ শতাংশ অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। এই হচ্ছে অবস্থা।
ঈদ সামনে রেখে মাসজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে এ দেশে। এজন্য ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে প্রশাসনের তদারকি বাড়ানো উচিত। সরকারি নির্দেশাবলি বা আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া বাস, লঞ্চ ও স্পিডবোটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ঈদে ঘরে ফেরা অনেক শ্রমজীবী মানুষ বাস কাউন্টার-রেলস্টশন কোথাও টিকেট পায় না। দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে টিকিট সংগ্রহ করা গেলেও পথে পথে ভয়ঙ্কর যানজটে ঈদ মাটি হওয়ার শঙ্কায় তটস্থ হয়ে উঠে তারা। সড়ক-মহাসড়কগুলো কেবল ঈদ নয়, সবসময়ের জন্য সংস্কার করে চলাচল উপযোগী করে রাখতে হবে। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে গাড়ির মালিক ও চালকরা যে অনিয়ম করে তা নির্মূল করা জরুরি। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি আটকে পুলিশের নানা ছুতোয় টাকা আদায়ের বিষয়টি আইনের আওতায় আনতে হবে। এজন্য মহাসড়ক ও রাজধানীর ভেতর সর্বত্রই ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসাতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিধি বৃদ্ধি করলে অপরাধ কমে আসবে। আর মানুষের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে। যাত্রী হয়রানি বিষয়ে মনিটরিং টিম গঠন করে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রতারণা-চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কঠোর হলে মানুষের ঈদ উৎসব সার্থক হবে। ঈদকে কেন্দ্র করে হয়রানি, বিড়ম্বনা, প্রতারণা আর চাঁদাবাজির উপদ্রব সকল সীমা অতিক্রম করছে। যোগাযোগমন্ত্রীর শত প্রচেষ্টার পরও যেমন রাস্তা ২০ জুলাইয়ের মধ্যে ঠিক হয়নি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঙ্কারের পরও চাঁদাবাজী ছিনতাই-রাহাজানি বন্ধ হয়নি, বানিজ্যমন্ত্রী শত চেষ্টা চালিয়েও পণ্যমূল্যের বাড়তি দাম রোধ করতে পারেননি। দেশের জনগনের জান মালের নিরাপত্তা বিধান সম্ভব হচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নানা প্রস্তুতির মধ্যেও ভয়ঙ্কর প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে মানুষের সর্বস্ব। ঈদে বাড়িফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ হবে কবে? জনগণের নিরাপদে বাড়িফেরা এবং জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে সরকারকেই। ঝুঁকিপূর্ণ কোনও যান যেন চলাচল করতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা চাই। এজন্য জনগনকে সোচ্চার হতে হবে। আর এ জন্য সরকারের সচেষ্ট ভুমিকাই মূখ্য বলে মনে করি। ইতোমধ্যে ঈদকে ঘিরে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির খবর গণমাধ্যমে উঠে আসছে তা মোকাবেলার জন্য সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপের বিকল্প নেই। জনদুর্ভোগ লাঘব করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
(লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও সম্পাদক- নিউজ-বাংলাদেশ ডটকম। [email protected])