ব্রাজিলে সিলেটি যুবক খুন : পরিবারে চলছে শোকের মাতম

Jahed-Ahmed-Borolekhaসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা জাহেদ আহমদ (২৮) ব্রাজিলে খুন হয়েছেন। ২৮ জুন দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার সুড়িকান্দি গ্রামের টিল্লা বাড়ির আব্দুল হক ও রহিমা বেগমের পুত্র । নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় জাহেদ বছরখানেক আগে জীবিকার সন্ধানে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে ব্রাজিল পাড়ি জমান। ব্রাজিলে যাবার প্রায় ৪ মাস পর তিনি বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি পান। সেখানে তিনি একটি পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করতেন।
গত ২৭ জুন শুক্রবার শেষবারের মত বাড়িতে মায়ের সাথে ফোনে কথা হয় তার। এ সময় সে তার মায়ের শারীরিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেয় এবং মাকে চিকিৎসা করানোর জন্য ভাইদের বলে। রমজান উপলক্ষে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন বলেও নিহত জাহেদ তার পরিবারকে জানান।
তবে গত ২৮ জুন সে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরে সাওপাওলো থেকে ৭১১ কিলোমিটার দক্ষিণে প্যারাগুয়ের কাছে পারানা রাজ্যের রাজধানী সিয়া নর্থের কুজেরিয় গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে তার লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় ব্রাজিলের বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
১ জুলাই জাহেদের লাশ হাসপাতাল থেকে গ্রহন করেন প্রবাসী বাংলাদেশী বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুরের বিহাইডর গ্রামের ছাদেক আহমদ। পরে ওই দিন পারানা রাজ্যের লনড্রিনায় জানাজা শেষে স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে তার লাশ দাফন করা হয় বলে নিহতের পরিবার ও প্রবাসীরা জানায়। বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেম জানান, ব্রাজিলে বাংলাদেশী যুবক খুন হওয়ার কোন তথ্য তিনি পাননি।

Jahed's Father and Motherগতকাল বুধবার জাহেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে জাহেদ খুনের ঘটনায় পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। জাহেদের মা-বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জাহেদ তৃতীয়। জাহেদের মা রহিমা বেগম জানান, ‘ঘটনার একদনি আগে ২৭ জুন জাহেদের সাথে মোবাইল ফোনে আমার কথা হয়েছে। সে আমার চিকিৎসা ও রমজানের খরচের জন্য টাকা পাঠাবে বলে বলেছিল। কিন্তু আমার ছেলে আর কোনদিন টাকা পাঠাবে না, আমাকে আর মা বলে ডাকবে না। আমি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’   কথা হয় জাহেদের খালাতে ভাই নাসির উদ্দিনের সাথে, তিনি  জানান, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছেন। প্রথমে জানতে পারেন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। পরে জানতে পারেন তারাবির নামাজ পড়তে বের হয়ে সে বাসায় ফিরে আসেনি। পরে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে তার লাশ পাওয়া গেছে। কিন্তু কি কারনে জাহেদকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন তথ্য তাদের জানা নেই। ব্রাজিলে বসবাসরত কয়েকজন বাংলাদেশী ও জাহেদের দু:ম্পর্কের এক আত্মীয়ের সাথে ফোনে কথা হয় এ প্রতিনিধির। 

তবে জানাজায় উপস্থিত একটি সুত্র জানায়, তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। ধারনা করা হচ্ছে তাকে হয়তো শ্বাস রোধে হত্যা করা হয়েছে। আর অন্য একটি সুত্র জানায়, তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে জাহেদ নিহতের পরদিন একই জায়গায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের সোহেল নামের এক যুবক ছিনতাইকারীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।  ব্রাজিলে বসবাসরত বাংলাদেশীদের একটি সুত্র জানায়, ২৫-২৬ বছর আগে ব্রাজিলে বাংলাদেশীদের আগমন শুরু। বর্তমানে হাজার সাতেক বাংলাদেশীর বসবাস ল্যাটিনের এই সবচেয়ে বড় দেশে। অতীতে বেশ কিছু সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলেন প্রবাসীরা। আহত হয়েছেন অনেকেই। তবে খুনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সেই দুঃখজনক ঘটনাই ঘটল ২৮ জুন রাতে।