তথ্য অধিকার আইনকে আরো কার্যকর করতে ‘ধারা ৭’ সংশোধন প্রয়োজন

গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞদের অভিমত

DC Sylhetসুরমা টাইমস ডেস্কঃ তথ্য অধিকার আইনের ‘ধারা-৭’ এর প্রয়োগে তথ্য প্রাপ্তি এবং প্রদানে প্রায়শই নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তথ্য অধিকার আইনের ‘ধারা ৭’ এর সংশোধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সিলেটে অনুষ্ঠিত এ বিষয়ক একটি গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এই অভিমত দেন।
এমআরডিআই, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সিলেটে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনাটির আয়োজন করে।
বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট নগরীর অভিজাত হোটেল নির্ভানা ইন-এ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ ফারুক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান, তথ্য কমিশনের সচিব মো: ফরহাদ হোসেন ও সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম।
গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমআরডিআই এর এ্যাডভাইজার, প্রোগ্রাম অপারেশানস এবং তথ্য কমিশনের প্রাক্তন সচিব নেপাল চন্দ্র সরকার এবং সঞ্চালনা করেন এমআরডিআই এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর।
মূল প্রবন্ধে নেপাল চন্দ্র সরকার তথ্য প্রদানে বাংলাদেশের সাংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদ, তথ্য অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ ও বিশ্বের কয়েকটি উলে¬খযোগ্য দেশের তথ্য অধিকার বিষয়ক আইনে উল্লি¬খিত বিধি নিষেধের সাথে তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭ এর তুলণামূলক বিশ্লে¬ষন উপস্থাপন করেন এবং ধারা ৭ এর কয়েকটি উপধারা হুবহু বহাল রাখা, কয়েকটি পুন:বিন্যাস, দুটি ধারা সংশোধন ও দুটি ধারা বাদ দেয়ার সুপারিশ করেন। পাশাপাশি ধারা ৭(ন) এর শেষে যে অতিরিক্ত শর্তের উল্লেখ রয়েছে তার অপব্যবহারের উদাহারণ তুলে ধরে সেটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি। তিনি ধারা ৭ অপব্যবহারের বেশকয়েকটি উদাহারণও গোলটেবিল আলোচনায় তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ ফারুক এমআরডিআই এর উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ধারা ৭ এর উলেল্লখ করে অনেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই তথ্য প্রদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাইছেন। তথ্য কমিশনের শুনানীতে আমরা এ ধরণের অনেক ঘটনা পাচ্ছি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তথ্য কমিশন তথ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। সংশোধনের মাধ্যমে ধারা ৭ কে আরো সময়োপযোগী করলে এর অপব্যবহার করার সুযোগ কমবে।
বিশেষ অতিথি তথ্য কমিশনের সচিব মো: ফরহাদ হোসেন বলেন, তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই ধারার মধ্যে যদি এমন কোন বিষয় থেকে যায় যা জনগণের তথ্য প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করে তা দূর করা প্রয়োজন। পাশাপাশি এই ধারার বিধানগুলো সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিৎ।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান বলেন, দেশটা জনগণের তাই দেশের সকল তথ্যও জনগণের। তবে দেশের স্বার্থেই কিছু তথ্য প্রকাশ না করা উচিৎ। তবে কেউ যেন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই ধারা ব্যবহার করে জনগণকে তথ্য বঞ্চিত না করে সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, জনগণের জানার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তথ্য অধিকার আইন। তেমনি ৭ ধারাও জনগণকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই। কিস্তু এই ধারার উদ্দেশ্য প্রণোদিত ব্যবহার রোধ করতে হবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে এমআরডিআই এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর বলেন, তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭ এ কিছু তথ্য প্রদান কে বাধ্যবাধকতার বাইরে রাখা হয়েছে। এই ধারার বিভিন্ন উপধারা নিয়ে ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তির সৃষ্ঠি হচ্ছে। আবার অনেকেই এই ধারার অপপ্রয়োগও করছেন। এই প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণে এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের উপলব্ধি যাচাই, এই ধারার সীমাবদ্ধতা অনুসন্ধান এবং সীমাবদ্ধতা দূরিকরণে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইতোমধ্যে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগে গোলটেবিল আলোচনা সম্পন্ন করেছি। আজ সিলেট বিভাগে এটি অনুষ্ঠিত হলো। এই আলোচনাসমূহের সারসংক্ষেপ এবং আলোচনা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা একত্রিত করে এ বছরের তথ্য জানার অধিকার দিবসে ঢাকাঢ অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে উপস্থাপন করা হবে এবং সুপারিশগুলো তথ্য কমিশনের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সিলেট জেলা এবং সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলার সরকারী কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, আইনজীবী ও সাংবাদিকবৃন্দ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।