ঢাকার গুরুত্ব জানান দিতেই আসছেন সুষমা

susomaসুরমা টাইমসঃ তিনদিনের সফরে বুধবার ঢাকা আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এটাই তাঁর প্রথম একক বিদেশ সফর। বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
আপাতদৃষ্টিতে এটা ‘শুভেচ্ছা সফর’ হলেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দেবেন যে দেশে সরকার বদল হতেই পারে কিন্তু মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার পাবে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলি।
বলা বাহুল্য, অনেকেরই ধারণা যে, এ দুটি দেশের সম্পর্ক সরকার-কেন্দ্রিক। কিন্তু ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সুসম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং তা দাঁড়িয়ে আছে উভয় দেশের অভিন্ন জাতীয় স্বার্থের ওপর। এ কথাও ঠিক যে, একাধিক ইস্যুর সফল বাস্তবায়ন এখনো ঝুলে আছে – যার একটা সন্তোষজনক এবং গ্রহণযোগ্য সমাধান হওয়া দরকার। আর আলোচ্য সফরে সেটাই হবে সুষমা স্বরাজের প্রথম পদক্ষেপ।
তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে: বাংলাদেশের দিক থেকে জরুরি হলো তস্তা নদীর পানি বন্টন যেটাকে পণবন্দি করে রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চুক্তি সই করেও, তা কার্য়কর করতে পারেনি। মমতার মতে, চুক্তি বাস্তবায়িত হলে পশ্চিমবঙ্গে জলাভাব দেখা দেবে।
দ্বিতীয় ইস্যু স্থলসীমা চুক্তি তথা ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল হস্তান্তর।মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠকে বকেয়া দুটি চুক্তি প্রাধান্য পেয়েছে। মোদি কথা দিয়েছেন যে, চুক্তি দুটি কার্যকর করতে তাঁর সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবেন। আর তারপরই চুক্তি দুটি রূপায়নের সম্ভাবনা নতুন করে খতিয়ে দেখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে নির্দেশ দেন তিনি। চুক্তি দুটি কার্যকর করতে মোদি সরকার যে বাস্তবিক আন্তরিক – সেই বার্তা নিয়েই যাচ্ছেন সুষমা স্বরাজ। তবে এর জন্য সময়সীমা বেধেঁ দেয়া হয়ত সম্ভব হবে না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের কথায়, ‘‘নিরাপত্তা, সীমান্ত সহযোগিতা এবং ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলি দমনে ঢাকা যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।”
স্থলসীমা চুক্তিতে নীতিগতভাবে রাজি ছিল বিজেপির একাংশ: ঐ চুক্তির জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। তার জন্য দরকার ছিল সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। কিন্তু মনমোহন সিং সরকারের কৃতিত্বকে আটকাতে শেষ পর্যন্ত বেঁকে বসে বিজেপি। এবার হয়ত সেই কৃতিত্বই নিতে চাইবে মোদী সরকার।
অন্যান্য যেসব বিষয় আলোচনায় উঠে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে আছে নদী পরিবহন, রেল সংযোগ, শিলং হয়ে ঢাকা-গৌহাটি বাস সার্ভিস। বাংলাদেশের নির্বাচিত নাগরিকদের জন্য ‘মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা’ এবং ‘ওয়ার্ক পারমিট’ দেয়ার বিষয়টি নিয়েও দিল্লি চিন্তা-ভাবনা করছে। তার সঙ্গে সঙ্গে নূর হোসেন নামের বাংলাদেশের এক খুনি, যাকে গত সপ্তাহে কলকাতায় গ্রেপ্তার করা হয়, তাকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হাতে প্রত্যর্পণ করতে ভারত রাজি আছে বলেও জানানো হবে। এছাড়া, প্রবল বর্ষায় গৌহাটি ও আগরতলার মধ্যে রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নদী পথে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নদী বন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় চাল ও গম পাঠানোর অনুমতি দেবার জন্য ঢাকাকে অনুরোধও করতে পারেন সুষমা স্বরাজ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি আমন্ত্রণ-পত্রও তুলে দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।