টানা বর্ষনের ফলে পাহাড়ী ঢলের পানিতে নবীগঞ্জ প্লাবিত
কয়েক শতাধিক পরিবার পানিবন্ধী : ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট
উত্তম কুমার পাল হিমেল: গত ক’দিনের টানা অবিরাম বৃষ্টিতে ও পাহাড়ী ঢলের পারি নেমে আসার কারনে নবীগঞ্জের সাধারন মানুষের চলমান জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার কারনে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির কারনে রাস্তা-ঘাটে লোক চলাচল কমে গেছে,বাজারের ফুটপাতের দোকানিরা দোকান খোলতে পারছে না,ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটছে। ফলে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষণে নবীগঞ্জের শহরতলীর ক’য়েকটি এলাকাসহ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় তীরভর্তি এলাকার মানুষ আতংকের মাঝে দিনাপাত কাটাচ্ছেন। অপরদিকে উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল গ্রামে অবস্থিত বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্লান্টে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এলাকার পাহারপুর গ্রামে অন্তত শতাধীক পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। এর ফলে মানুষের ঘরবাড়ী গাছপালা ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার সাধারন মানুষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, বিদ্যুৎ প¬ান্টের পাশ্ববর্তী পিডিপির পাওয়ার প্ল¬ান্ট ২৬ একর ভূমি অধিগ্রহন করে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে ভরাট করছে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না রাখায় বর্ষা মৌমুসে অতি বৃষ্টির কারনে গ্রামের দিকে পানি অতিবাহিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পাহারপুর গ্রামের অন্তত শতাধীক পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। ভরাটের কাজ শেষ পর্যায়ে এলেও পাওয়ার প¬ান্টের পানি নিস্কাসনের সঠিক কোন রাস্তা না থাকায় ওই গ্রামের দিকে পানি অতিবাহিত হয়ে বড় বড় নালা হয়ে বৃষ্টির পানিতে প¬াবিত হচ্ছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ প্রশাসনিক কর্মকর্তা সহ সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়ার হলেও তাদের অবহেলায় গ্রামের মানুষ প্রায় ৪ সপ্তাহ ধরে পানিবন্ধি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের কথায় কোন কর্নপাত না করে বীরদর্পের মতো কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ও স্কুল কলেজের অনেক ছাত্র/ছাত্রী পানিবন্ধি হওয়ার ফলে তাদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। গতকাল সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পাহারপুর গ্রামের অনেক বাড়ি ঘর পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। এতে অনেক পরিবার ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখিন হয়ে পড়ায় অনেকেই বাড়ি ঘর ফেলে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে টানা বর্ষণ। বর্ষণের ফলে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর, পিরিজপুরের ৩টি রাস্তা তলিয়ে গিয়ে পানি উপছে উঠে নবীগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের ওই অংশ তলিয়ে গেছে। ওই সড়কের পানি নিস্কাশনের খালে কিছু প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিতভাবে মাটি ভরাট ও ঘর নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,মংৎপঁঠভা ৎভালংঠ গ্রামের দিন ,মজুর সাইফুর রহমান, মৃত মিয়া ধন উল্লার স্ত্রী আছিয়া বেগম ও মশাহিদ মিয়ার ঘর বাড়ির চারিদিকে জলাবদ্ধতার পানি জমাট হয়ে কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি অতিবাহিত হচ্ছে। এতে ঘর বাড়ি ছেড়ে ওই পরিবারের মতো আরোও অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। একি গ্রামের আশিক মিয়া, নানু মিয়া, লতিফ মিয়া, তৈয়ব আলী সহ আরো অনেকেই বলেন, পাওয়ার প্লান্টের ২৬ একর ভূমির পানি তাদের গ্রামের দিকে অতিবাহিত হওয়ায় পুকুরে চাষকৃত লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ, গাছ পালা, কাচা ঘর বাড়ি সহ রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছে। দূর্ভোগের শিকার গ্রামবাসী বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও এতে কোন কাজ হয়নি। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন গ্রামবাসী। টানা বর্ষণের কারনে অফিস পাড়ায় কর্মচারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও চলতি সময়ে অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। তবে ভারি বর্ষণের কারনে স্থানে স্থানে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটছে। বিদ্যুত বিভ্রাটের কারনে চলমান বিশ্বকাপ খেলার টিভি দর্শকরা খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই ভুক্তভোগিরা শতভাগ বিদ্যুত সচল রাখার জন্য বিদ্যুত বিভাগের কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানিয়েছেন।