‘রাজনীতির চক্রান্তের শিকার নুর হোসেন , জীবন বাঁচাতে পালিয়ে ভারতে’
ভাড়া ফ্ল্যাটে রাতভর চলত উদ্দাম নৃত্য
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে এই হত্যা মামলার মূল আসামি নূর হোসেন। বলেছে, চক্রান্তের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে কলকাতায় পালিয়ে আসতে হয়েছে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াডের জেরার জবাবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে নূর হোসেন বলে, রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছে সে। আর তাই জান বাঁচাতেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসতে হয়েছে। ভারতে পালিয়ে আসার সময় হুন্ডি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ২ কোটি টাকা নিয়ে এসেছিল নূর হোসেন। সে টাকা গোপন কোনো আস্তানায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কোথায় সেই আস্তানা খোঁজ পেতে নূরকে নিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। জেরায় বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন নূর ভারতে আসার আগেই সেলিম চলে এসেছিল কলকাতায়। যোগাযোগ করেছিল কলকাতায় আশ্রয় নিয়ে থাকা বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে। সেই সময় সেলিমের যোগাযোগ হয়েছিল সুব্রত বাইনের এক সহযোগীর সঙ্গে।
সুব্রত বাইন ২০১২ সালের এপ্রিলে কলকাতায় গ্রপ্তার হয়। এসটিএফ-এর আওতায় তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ এবং জামিন পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে মামলা চলছে। সুব্রত বর্তমানে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দী রয়েছে। সুব্রতর এক সহযোগী সেলিমকে বলে শাহাদাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। নিউ মার্কেট এলাকার এক পানশালায় তার সাক্ষাত্ হয় শাহাদাতের সঙ্গে। প্রভাবশালী এক নেতার আশ্রয়ে কলকাতায় ছিল শাহাদাত।
খুন করেনি নূর?
জেরায় নূর দাবি করেছেন তিনি সেভেন মার্ডারে জড়িত নয়। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এ বিষয়ে এটিএস সেলের এসিপি অনিষ সরকার মঙ্গলবার ইত্তেফাককে বলেন, বাংলাদেশের খুনের মামলার তদন্ত আমরা করছি না। বাংলাদেশের ঐ খুনের মামলা ভারতের কোন থানায় নথিভুক্ত নেই। ফলে ঐ খুনের ঘটনার তদন্ত আমাদের এক্তিয়ারে পড়ে না। আমরা তদন্ত করছি কোন অপরাধ চক্রের মাধ্যমে নূর কলকাতায় লুকিয়ে ছিল। নূরের সঙ্গীরা কোথায় লুকিয়ে আছে তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।
৫ হাজার টাকায় সীমান্ত পার: দালাল চক্রের হাত ধরে ৫ হাজার টাকার চুক্তিতে নূর বেনাপোল অঞ্চল দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। প্রায় একই সময়ে হুন্ডি মারফত কলকাতায় নিয়ে আসেন ২ কোটি টাকা। কয়েকদিন সীমান্ত অঞ্চলের কাছাকাছি থাকার পর এক ব্যবসায়ীর সহায়তায় নূর এসে ওঠেন নিউ মার্কেট অঞ্চলের একটি হোটেলে। ব্যবসায়ীর গেস্ট, তাই হোটেলে পরিচয়পত্রও দিতে হয়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, নিজের অবস্থান যাতে ফাঁস না হয় তার জন্য ২-৩ দিন পর পরই হোটেল বদলে ফেলতেন নূর। এভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় ৭/৮ বার অবস্থান বদলান তিনি। তারপর এসে ওঠেন কৈখালীর ঐ ফ্ল্যাটে। সঙ্গে ওঠে সেলিম আর সুমন।
প্রাইভেট পার্টিতে উদ্দাম নৃত্য:
দিন কোনভাবে কাটলেও রাত হলেই পাগল হয়ে যেতেন নূর। মদ্যপানের সঙ্গে নাচা-গানা দেখতে চলে যেত পানশালায়। কিন্তু নিজের পছন্দ মত না হওয়ায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানেই প্রাইভেট পার্টি বসাতে শুরু করেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেন এসকর্ট গার্লদের সঙ্গে। বার সিঙ্গারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়ে আসতো কল গার্ল। রাত হলেই নূরের ফ্ল্যাটে আনাগোনা শুরু হত অচেনা সব নারীর। আসতো কলকাতায় লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরাও। সন্ধ্যার পর শুরু হত নূরের ফ্ল্যাটে উদ্দাম নাচা, গানা। মধ্য রাত পর্যন্ত চলত আসর। আর এটাই অসন্তোষের কারণ হয়ে ওঠে ইন্দ্রপ্রস্থ আবাসনের বাসিন্দাদের। তারা বিষয়টি পুলিশে জানান। এরপর পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে এক বাংলাদেশি ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছে। পানির মত টাকা ওড়াচ্ছে। কে এই ব্যক্তি? খোঁজ শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ জানতে পারে এক এক রাতে ২-৩ লক্ষ রুপি উড়িয়ে দিত নূর। খুশি হলে এসকর্ট গার্লদের ভাগ্যে জুটতো মোটা অঙ্কের বখশিশ। স্থানীয় দুষ্কৃতদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তে তাদেরও ডাকা হত আসরে। প্রথমে স্থানীয় দুষ্কৃতদের ওপর নজরদারি শুরু করে পুলিশ।