খালেদার রিট নিষ্পত্তিতে একক বেঞ্চ গঠন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত ও বিচারক নিয়োগ-প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে একটি একক বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। সোমবার এ বেঞ্চে রিটটির শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গত বৃহস্পতিবার কাজী রেজা-উল হকের একক বেঞ্চ গঠন করে ফাইলে সই করেন প্রধান বিচারপতি। রবিবার এ বেঞ্চ সোমবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
গত ২৫ মে খালেদা জিয়ার এক রিট আবেদনের বিষয়ে বিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। ফলে রিট আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। তিনি তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করায় এ বেঞ্চে রিটটির নিষ্পত্তি হবে।
গত ১২ মে খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিট বিবেচনাধীন থাকা পর্যন্ত মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশও চাওয়া হয়।
গত ১৯ ও ২০ মে রিট আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী আর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
খালেদার বিরুদ্ধে ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ঢাকার বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসামাঠের অস্থায়ী আদালতে। এ দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ জুন দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগেও চার্জ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে গত ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ১৬, ১৭ ও ২০ এপ্রিল শুনানি শেষে ২৩ এপ্রিল রিভিশন আবেদনটি খারিজ করে দেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গত ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ-আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশিবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতভবনে চালানোর আদেশ জারি হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ওই দুই মামলা পরিচালনার জন্য ভবনটিকে (যা বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার অস্থায়ী আদালত ছিল) অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
অস্থায়ী আদালতে গত ২১ মে বিচারিক কার্যক্রমের প্রথম দিনে দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন জানান আসামিপক্ষ। আবেদনের শুনানি শেষে ১৯ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের দিন পুনর্নির্ধারণ করেন আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলা দু’টির অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।
ওইদিন খালেদার উপস্থিতিতে মামলা দু’টির চার্জ শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
ওই দিন চার্জ শুনানিতে খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জ গঠন করেন আদালত। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এর আগেও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৪১ বার ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১১ বার চার্জ শুনানির জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক।
এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন-বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর চার জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চার জনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে দুদক।
মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।
মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন-খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।