শিল্পীদের বেদনার কথা শোনার কেউ নেই
সুরমা টাইমস বিনোদনঃ শিল্পী মেহরিন। অনেক দিন ধরে গায়কীতে মাতিয়ে রেখেছেন পপ গানের শ্রোতাদের। সম্প্রতি বাংলাদেশি আইডলের বিচারকদের একজন তিনি। সংগীত চর্চা, বর্তমান অবস্থা, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা ও সম্ভাবনা, স্বপ্ন ও পরিকল্পনা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন শাহবাজ জাহেদ
ঈদে কি আপনার কোনো অ্যালবাম অথবা গান রিলিজ হচ্ছে?
হ্যাঁ রেডিও রিলিজ বলতে পারেন। একটা গান ‘আধো আলো আঁধারে।’ সুর করেছেন হাবিব ওয়াহিদ।
‘জ্যাম অ্যান্ড ফ্যাম ২’ নামের একটা আন্তর্জাতিক অ্যালবামে আপনার গান করার কথা ছিল।
হ্যাঁ ওটা অলরেডি রিলিজড। যে কেউ ওদের ওয়েবসাইটে লগইন করে গানটা শুনতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে অ্যালবামটা পাওয়া যায়। আমাদের এখানে বোধহয় অ্যালবাম আকারে এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।
প্লেব্যাক কেমন লাগে?
আমি খুব বেশি প্লেব্যাক করিনি। তবে করতে চাই। আমার কণ্ঠস্বরটা যেহেতু একটু অন্যরকম এটা সিনেমার দর্শকরা কীভাবে নিবে তাই ভাবি। আইয়ুব বাচ্চুর সুরে ‘রং নাম্বার’ সিনেমার জন্য একটা প্লেব্যাকে আমি কণ্ঠ দিয়েছিলাম। এনামুল করিম নির্ঝরের পরের ছবিতে একটা করেছি।
না কেন, ভারতে সুনিধি চৌহান, আলিশাদের কণ্ঠস্বরও তো ঠিক মেলোডিয়াস নয়। কিন্তু তাদের শ্রোতার সংখ্যা তো আরো বেশি।
হবে হয়ত। আমাদের দর্শকরা হয়ত জিনিসটা এখনো নিতে পারছে না।
পপ ছাড়া অন্য কোনো গান করার পরিকল্পনা আছে কি?
আমি একটা অ্যালবামে নজরুলের গান করেছি। যেহেতু আমার গুরু সুধীন দাস, ফেরদৌস আরা সেহেতু ক্লাসিক্যাল, নজরুল বা রবীন্দ্র নাথের গান ইত্যাদি নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন আছে। একজন শিল্পীর একেকটা ওয়ে থাকলেও প্রকৃত শিল্পীকে তো সব গানই টানে।
গানের সঙ্গে আপনার শারীরিক এক্সপ্রেশন খুবই আনন্দ দেয় দর্শক শ্রোতাদের। অভিনয় করবেন কবে?
আমি ইতোমধ্যে অনিমেষ আইচের একটা নাটকে অভিনয় করেছি। এই মুহূর্তে নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। ‘অদ্ভুতুড়ে’ ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছি। তবে নিয়মিত হওয়ার আশা করি না। আমি গানের মানুষ, গান নিয়েই থাকতে চাই।
একজন সার্থক সংগীত শিল্পীর কি কি গুণ থাকা জরুরি।
প্রথমত আমি নিজেকে সার্থক মনে করি না। একজন সংগীত শিল্পীর সার্থক হয়ে উঠার কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। কারণ তার পথটাই একটা যাত্রা। যার শুরু আছে শেষ কোথায় সে সম্পর্কে তিনি জানেন না। তবে সংগীত শিল্পী নিয়মিত তালিম নেবেন, চর্চা করবেন। নতুন কিছু করার জন্য তিনি আনচান করবেন এটাই স্বাভাবিক।
সম্প্রতি এক সুরকার সম্পর্কে আপনি অভিযোগ এনেছেন যে, তিনি আপনার সঙ্গে দেওয়া কমিটমেন্ট রক্ষা না করে টাকা মেরে দিয়েছেন। আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি এখন কোন পথে?
হ্যাঁ তিনি তো আমার সহকর্মী, তাই নয়? আমি মিডিয়াতে তার নাম বলিনি। তার সঙ্গে সম্পর্কটা একেবারে নষ্ট করতে চাইনি। কিন্তু আমাদের সঙ্গেই যদি এসব করা হয় তাহলে নতুনদের অবস্থান কোথায়? এটা শুধু আমার সঙ্গে নয়, আরো অনেকের সঙ্গেই হয়েছে। কিন্তু আমি বলেছি, তারা বলেননি তফাতটা এই। একটা বিষয় কি জানেন? আমরা গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিই কিন্তু আমাদের বেদনার কথা শোনার কেউ নেই।
ইদানীং আপনার গানগুলো ফেসবুকে আপলোড করছেন। সামাজিক গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?
দেখেন আমাদের দেশের শিল্পী-তারকারা এখন একটু সামাজিক গণমাধ্যমে সচেতন হচ্ছেন। কিন্তু অন্যান্য দেশের শিল্পী-তারকারা অনেক আগ থেকেই দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। কারণ এক হিসেবে এই দর্শকরাই আমাদের শিক্ষক-সহযোগী। তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্যই তো আমাদের গান গাওয়া। তো তাদের সঙ্গে সরাসরি যদি যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় সেটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা সম্পর্কে বলেন
অনেক ধরনের সমস্যা আছে। বিদেশে যে পরিমাণ খরচ করে স্টুডিওতে গান রেকর্ড করা হয়, এর এক ভাগও বাংলাদেশে খরচ করা হয় না। যাঁরা আয়োজক তাঁরা সব সময় কীভাবে কম খরচে কাজ আদায় করা যায় সে চিন্তায় থাকেন। অনেক সময় শিল্পীদের সঠিক সম্মানী ভাতা পর্যন্ত দেওয়া হয় না। ভালো মানের গানের চর্চার জন্য এসব বিষয়ে অবশ্যই পরিবর্তন আনা জরুরি ।
শিল্পী জীবনের কোনো হতাশার কথা বলবেন?
হতাশা নয় ঠিক কিছু সিস্টেম লস কষ্ট দেয়। যেমন ধরেন এত কষ্ট করে লিখে সুরারোপ করে কম্পোজিশন করে গান গাইছি। সেটা পাইরেসি হয়ে চলে যাচ্ছে। গান যা তা কি আসলে মোবাইলে শোনা যায়? এটা খানিকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। আসলে মোবাইল বা ছোট ডিভাইসগুলোতে গানটির ৩০ শতাংশও আসে না।
গানে কতদূর যেতে চান?
এর চেয়ে বলেন কতদিন গান করতে চাই। বলব আজীবন। গানে কতদূর সফল হলাম তার চেয়ে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ গানকে ভালোবাসা। গানের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়া। গান আমার অস্তিত্বের সঙ্গেই জড়িত। সুতরাং অস্তিত্ব যতদিন থাকবে গানও ততদিন করতে পারব।
বাংলাদেশি আইডলের বিচারক হিসেবে অনুভূতি কেমন?
এটা একটা আলাদা রকমের অনুভূতি। আমি সবসময় নতুনত্ব পিয়াসী। এত নতুনদের এক সঙ্গে উঠে আসতে দেখে কার না ভালো লাগে বলুন। প্রথমে আমি রসিক মানে রসগ্রহীতা পরে বিচারক। নিঃসন্দেহে এই দায়িত্বের জন্য আমি সম্মানিত বোধ করছি।