গ্রামের পথে তাওহীদের লাশ : রবিবার সিলেটে অর্ধদিবস হরতাল
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে ছাত্রদলকর্মী তাওহীদের লাশ তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ইউনিয়নের বড় গোপালপুর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামসুর রহমান মাতব্বরের ছেলে। বুধবার রাতে ওসমানী মেডিকেল কলেজের আবু সিনা ছাত্রবাসে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জন্য ছাত্রদল দায়ি করছে ছাত্রলীগকে।
এদিকে তাওহীদুল ইসলাম খুনের ঘটনায় ছাত্রদলের ডাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে লাগাতার ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোন ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তাওহীদের খুনীদের শনিবারের মধ্যে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলে রবিবার সিলেট মহানগরীতে আধাবেলা হরতাল পালিত হবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি এমএ হক। ওসমানী মেডিকেল কলেজে তাওহীদের দ্বিতীয় জানাজা শেষে তিনি এ ঘোষনা দেন।
তাওহীদুল ইসলাম খুনের ঘটনায় তার চাচা আনোয়ার হোসেন মাতব্বর বাদি হয়ে সিলেট কোতোয়ালী থানায় একটি এজহার দায়ের করেছেন। এজহারে তাওহীদের খুনীদের অজ্ঞাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাওহীদের চাচা আনোয়ার হোসেন জানান- তাওহীদের বাবা ও তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাওহীদ ছাত্রদল করত বলে তাদের জানা নেই। ৩ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে তাওহীদ ৩য় ছিল বলে জানান তিনি।
এদিকে, সকাল সোয়া ১০টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ মসজিদ মাঠে তাওহীদের ১ম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, হাসপাতালের পরিচালকসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
জানাজা শেষে তাওহীদের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আরেকদফা জানাজা পড়ার অনুরোধ জানান। সকাল সোয়া ১১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাওহীদের জানাজা পড়েন। জানাজায় অংশ নেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি এমএ হক, সহ সভাপতি বদরুজ্জামান সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ, ছাত্রদলের কেন্দ্রয় সহ সভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল, ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম নাচন, সাঈদ আহমদ, সাফেক মাহবুব প্রমুখ। এরপর তার লাশ গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তার স্বজনরা।
জানাজা শেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী জানান- তাওহীদের খুনী যে হোক তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, ছাত্রদলের ডাকা ধর্মঘটে বৃহস্পতিবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে কোন ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কিছু শিক্ষার্থী কলেজে আসলেও ধর্মঘটের কারণে তারা ফিরে যান। তাওহীদের খুনীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, সিলেট নগরীর কাজলশাহ এলাকায় মা ও বোনকে নিয়ে একটি বাসায় ভাড়া থাকত তাওহীদ। বুধবার সন্ধ্যায় চৌহাট্টাস্থ আবু সিনা ছাত্রাবাসের ১০০৩ নম্বর রুমে তাওহীদকে কুপিয়ে ও বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখার পর রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী।
হত্যাকান্ডের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ি করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান বলেন- সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ নেতা রাফি মোবাইল ফোনে তাওহীদকে আবু সিনা ছাত্রবাসে ডেকে নেন। আর মূর্মূর্ষ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগ নেতা শরীফুল। এতেই বোঝা যায় ছাত্রলীগই তাওহীদকে খুন করেছে।