ভাটি বাংলার হাওরাঞ্চলে ফের নৌ-পথে চাঁদাবাজি
জনতার হাতে আটক ৩
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হাওর ও নদী পথে কিছুটা পানি বৃদ্বি হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুরের হাওরাঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার নদী পথে আবারো শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। এদিকে গতকাল শনিবার স্থানীয় জনতা বেহেলীর রাঙ্গিয়া নদী থেকে চাদা তোলার সময় ৩ চাঁদাবাজকে হাতেনাতে আটক করে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ওই নদী পথে বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকার চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ব চাঁদাবাজরা। চাঁদাবাজদের সাথে সরকার দলীয় কিছু পাতি নেতাদের সম্পৃক্ততা ও শেল্টার রয়েছে বলেও জানান তারা। এ নৌ-পথে যারা চাঁদাবাজি করে তারা খুবই ভয়ঙ্কর। সরকারের শুক ষ্টেশন থেকে রয়েলিটি কৃত এলসির কয়লা বহনকারি বলগেট কার্গোর নৌকায় প্রকাশ্যে পেশাদার চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজি এ যেন নিত্য-নৈমত্যিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের নিষ্ঠুরতা আর মারমুখী হুমকীতে বলগেট নৌকার মাঝিরা প্রতিনিয়তই আতংকীত অবস্থায় জীবনের ঝুঁকিনিয়ে নদীপথে চলাচল করছেন ।
তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া, টেকেরঘাট, ছাড়াগাঁও শুক ষ্টেশ থেকে কয়লা, ফাজিলপুর থেকে বালু ও নুরী পাথর ক্রয় করে সারা দেশে যোগান দেয় ব্যবসায়ীরা। এসব আমদানিকৃত পণ্য বহনের একমাত্র মাধ্যম জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও ধর্মপারর নদীপথ। ঐ নদীপথে বলগেট, কার্গো, নৌকা গুলো চলাচলের সময় ৮-৯ টি স্থানে ইঞ্জিন চালিত ছোট নৌকা দিয়ে চাঁদা আদায় করেই চলছে সংঘবদ্ব ওই চাঁদাাবাজ চক্রটি। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক নৌকা ও শতাধিক কার্গো থেকে হাজার-হাজার টাকা চাঁদা অদায় করা হয় বলে জানা গেছে। চাঁদাবাজদের কথামতো চাঁদা না দিলে মারপিটসহ প্রান নাশের হুমকি দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের কে। এ সব চাঁদাবাজদের বিরুদ্বে জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা থানায় একাধিক চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে।
গতকাল শনিবার স্থানীয় জনতা বেহেলীর রাঙ্গিয়া নদী থেকে চাদা তোলার সময় বেহেলী ইউনিয়নের মাহমুদ গ্রামের আব্দুস ছালামের পুত্র সাধু মিয়া (৩০), আব্দুল কাদিরের পুত্র শিরিন মিয়া (২৮) ও হোসেন আলীর পুত্র বজলু মিয়াকে (২৯) আটক করা হয়। অপরদিকে একই দিন সকাল ৮ টায় দুর্লভপুরের ঘাটে নৌ-শ্রমিকদের নৌকায় চাঁদাবাজির খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে ভোক্তভোগীদের কাছ থেকে জানাযায়, দুলৃভপুরের আনোয়ার ও তার সহযোগীরা সাচনা বাজার ইউনিয়নের দুর্লভপুরের নৌকাঘাটের নামভাঙ্গিয়ে চলতি নদীতে মালবাহী ভলগেট,কার্গো থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করছে বলে জানাযায়। তার প্রতিবাদে সকাল ৯টা থেকে প্রায় শতাধিক মালবাহী নৌযান নোঙ্গর করে করে প্রতিবাদ করে। ভুক্তভোগী মালবাহী নৌ শ্রমিকরা তাৎক্ষনিক স্থানীয় সাংবাদিক, থানা পুলিশ, জনপ্রতিনিধিদেরকে অবহিত করলে তারা ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। ভোক্তভোগী কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর, পাথুরিয়া, আশুগঞ্জ ও ঢাকা জেলার পরিবহন গুলোর মধ্যে রয়েছে, তালুকদার পরিবহন, দয়াল শাহ, গাউছিয়া, মুক্তা এন্ড সুইটি, মা-বাবার দোয়া, ভাই-ভাই এন্টার প্রাইজ, নয়নমণি, এমভি মা, সামিরা, বদরুল, ফাইজা এন্ড মনিরা, নদীয়া পরিবহনসহ প্রায় শতাধিক পরিবহনের নৌ শ্রমিকরা তাদের যানচলাচল বন্ধ রেখে এরিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে।
কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর নৌ মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক জাহিদ মিয়া জানান, আমাদের নৌযান থেকে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা চাদা দাবী করে, আমরা জামালগঞ্জ থানাকে ফোন দিয়ে আপাতত নৌ চলাচল বন্ধ রেখেছি।
জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এক এসআই দুর্লভপুরের ঘটনা স্থলও পরিদর্শন করেছেন। সহকারী পুলিশ সুপার (দিরাই সার্কেল) গনিউজ্জামান লস্কর’র সাথে জামালগঞ্জ থানা দেখা হলে তিনি জানান,চাদাবাজ যেই হউক তাকে আটক করা হবে। থানার দোহাই দিয়ে কেউ এই কাজ করলে সে যেই হোক না কেন তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীম জানান, নদীপথে চাদাবাজীর সাথে কোন ক্রমেই সরকারদলীয় কেউ জড়িত নয়। দুর্লভ পুরের ব্যাপারে তিনি বলেন যারা বর্তমানে ঘাটের দায়ীত্বে আছে তারা সরকারের রাজস্ব দিয়ে ইজারা নিয়েছেন জানি। তবে কেই যদি অতিরিক্ত টাকা তুলে সেটি অবশ্যই অন্যায়। এ বিষয়ে আমার জানা নেই।