তাহিরপুরে কথিত বিশেষজ্ঞ ও কবিরাজের ছড়াছড়িতে সাধারন মানুষ দিশেহারা

ইউএনও সহযোগীতা করছেন না —- ডা. আনসারী
আনসারী মিথ্যাচার করছেন—- ইউএনও ইকবাল হোসেন

pic-sunamganj dr-drougসুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল সীমান্তঘেষা তাহিরপুর উপজেলায় আধুনিক চিকিৎক, বিশেষজ্ঞ কবিরাজের হাতে সাত ইউনিয়নের সাধারন মানুষকে প্রতিনিয়ত অপচিৎিসার শিকার হতে হচ্ছে। হাজারো ভুয়া চিকিৎসক আর কবিরাজের ফাঁদে পড়ে অপচিকিৎসা , জীবনের ঝুকি সহ অহেতুক আর্থীক অপচয়ের মুখে সাধারন মানুষ প্রতারণার শিকার হলেও জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকতা , উপজেলা প্রশাসন এমনকি আইনশৃংখলা বাহিনীও এদের প্রতারণা বন্ধে গত ৪৩ বছরেও কোন আইনি পদক্ষেপ নেয়নি বলে ভোক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে এবং এলাকার বিভিন্ন ভোক্তভোগী মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, প্রায় আড়াইলাখ জনসংখ্যা অধুষ্যিত এ উপজেলাবাসীর একমাত্র ভরসা ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক,জনবল, রোগ নির্ণয়ের উপকরণ ঔষধের স্বল্পতা সহ নানা অব্যবস্থাপনা অনিয়মের কারনে এমনকি উপজেলা সদরের সাথে সাত ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও এ উপজেলার সাধারন মানুষ হাতুড়ে ভুয়া ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ, কবিরাজের কাছে গিয়ে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। নানা বাহারি নাম আর অভিজ্ঞতার ঝুঁরিভড়া চটকদার সাইবোর্ডের আড়ালে সর্বরোগের নিরাময়ের আশ্বাসে এ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, হারবাল ও পরবর্তীতে ঝাঁড়,ফুঁক,তাবিজ কবল, তৈল , কলা, সুতাপড়ার শিকার হয়ে অর্থ খোয়ানোর পাশাপাশী প্রতিনিয়ত হাজারো শিশু ,আবাল বৃদ্ধ বণিতা জীবনের ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। এভাবে উপজেলা সদর, সুলোমানপুর, মোয়াজ্জেমপুর, পন্ডুপ, কাউকান্দি, বালিয়াঘাট নতুনবাজার, শ্রীপুর, টেকেরঘাট, বড়ছড়া, চারাগাঁও,বাগলী শুল্ক ষ্টেশন, জঙ্গলবাড়ি, চাঁনপুর, টিলাবাজার,লাউড়েরগড়,বিন্নাকুলি, মাণিগাঁও চকবাজার, ঘাগটিয়া চকবাজার, সোহালা, ইসলামপুর, জামতলা,একতাবাজার ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট সহ পুরো উপজেলার হাটবাজার ও বিভিন্ন গ্রামে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই হাজার ভুয়া চিকিৎসক ও কবিরাজ গত কয়েকযুগ ধরে স্থায়ী ধান্দার ফাঁদ পেতে বসেছে।
উপজেলার বানিয়াগাঁও’র গ্রামের বাসিন্দা ও প্রাক্তন ইউপি সদস্য সিজিল মিয়া বলেন, কিতা কইতাম নতুন বাজার, শ্রীপুরবাজার ও সীমান্তের কয়েকটি বাজারে এমন ক’জন চিহ্নিত ডাক্তার আছইন যারা দিনের বেলায় ডাক্তার আর রাতে জুয়ারী না অয় চোরাচালান ব্যবসা করে। বাগলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ চন্দ্র বললেন,বাগলী থেকে একজন রোগী নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে অথবা তাহিরপুর হাসপাতালে যেতে হলে হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাই বাধ্য হয়ে এলাকার মানুষ এলাকাতেই অপচিৎিসার শিকার হয়ে অর্থ খোয়াচ্ছেন।
পরিবেশ ও মাবাধিকার উন্নয়ন সোসাইটি তাহিরপুর শাখার উপদেষ্টা মজিবুর রহমান বললেন, ঝুালমুড়ি আর পান সিগারেটের দোকানের আদলে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে গজিয়ে উঠেছে ড্রাগ লাইসেন্সবিহিন ফার্মেসী। এসব ফার্মেসীতে আমদানি নিষিদ্ধ ঔষধপত্র ছাড়াও নাম সর্বস্ব কোম্পানীর মানসম্পন্ন নয় এমন হরেক রকম ঔষধের বোতল আর বক্স সাজিয়ে রেখে ডাক্তার সনদ লিখে অভিজ্ঞার লেশ না থাকলেও সাধারন মানুষকে ব্যবস্থাপত্র সহ চড়াদামে ঔষধ ধরিয়ে দিয়ে হাজার টাকার পকেট কাটছে। সাবেক সেনা সদস্য মোবারক হোসেন বললেন, কি বলব বাদাঘাট বাজারে এমনও ডাক্তার রয়েছে যারা অষ্টম শ্রেনীর গন্ডি পার হতে পারেনি মাঝে মাঝে বাংলায় ব্যবস্থাপত্র লিখে দেয় অতচ ব্যবস্থাপত্রে এলএলএফ, যৌন মা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ উপাধি ধারণ করে , জেনারেল প্র্যাকটিশনার , জরুরী অপারেশনে অভিজ্ঞ ইত্যাদী লিখে সাধারন মানুষকে প্রতারণা করে প্রতি ব্যবস্থাপত্রে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আবার নাম সর্বস্ব কোম্পানীর ঔষধ দিয়ে বাড়তি কমিশন ও মুনাফা আদায় করছে। বিভিন্ন হাট বাজার গ্রামে এমনও কথিত ডাক্তার রয়েছেন তারা এ্যালোপ্যাথিক, হোমিও প্যাথিক, তাবিজ কবজ ঝাাড়ফুক সহ তদবিরের নামে মোরগ ছাগল গরু ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে মানুষজনকে সর্বশান্ত করলেও রোগ তো দুর হবে দুরের কথা উল্টো মানসিক রোগী বানিয়ে ফেলছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, উপজেলা আ’লীগের সাবেক সহ সভাপতি নুরুল আমিন বললেন, শুনেছি বিভিন্ন হাটবাজারে বিভিন্ন সময় ড্রাগ সুপার কার্যালয়ের লোকজন এসে টাকা পয়সা নিয়ে নিরবেই চলে যায়, কার ড্রাগ লাইসেন্স আছে আর কার নেই কিংবা এক জনের ড্রাগ লাইসেন্সে কয়টা ঔষধের দোকান চলছে তার খোঁজ নেয়ার সময় হয়ত তাদের হাতে নেই। বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বললেন, তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তার অত্র উপজেলায় দুই বছরেরও অধিক সময় পার করলেও তার কেবল মাত্র সার্টিফিকেট বাণিজ্য আর ব্যবস্থাপত্র বিক্রি, সিট বাণিজ্য অবৈধ ফার্মেসী, ডায়গনিষ্টক সেন্টারের সাথে কমিশন বাণিজ্য আদায় করা ছাড়া আর কোন সফলতা উনার আছে বলে আমাদের জানা নেই, ভুলে কোনদিন কোন বাজারে এসে এসব ভুয়া ডাক্তারদের ব্যাপারে কোন প্রকার খোঁজ নিতে তিনি আগ্রহী নন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আবুল হাশেম আনসারী অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন, আসলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা পুলিশ সহযোগীতা না করার কারনে বিভিন্ন হাট বাজারে ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছিনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বললেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনসারী মিথ্যাচার করছেন তিনি ভুলেও কোন দিন ভুয়া ডাক্তার ও কবিরাজদের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেননি।
সিভিল সার্জন ডা. নিশিত নন্দি মজুমদার বললেন, এমবিএস ছাড়াও আর কারো ব্যাবস্থাপত্রে কিংবা সাইনেবোর্ডে ডাক্তার লিখার আইনগত ভিক্তি নেই এমনকি যারা সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার তারাও তাদের দেয়া ব্যবস্থাপত্রে ডাক্তার লিখতে পারেননা। এসব ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা আনসারীকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সমন্বয় করে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে অতচ আনসারীর বিরুদ্ধেই অভিযোগের অন্ত নেই তাকে নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এছাড়াও তিনি আরো বললেন, লাইসেন্স বিহিন ঔষধের দোকান গুলোর ব্যপারে ড্রাগ সুপার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন তিনি কেন নেননা সেটা উনার ব্যাপার।