‘ওসির কাজ তদারকি করবে ১৫ আইনশৃঙ্খলা কমিটি’
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ওসির কাজ তদারকি করবে ১৫ আইনশৃঙ্খলা কমিটি। এ জন্য সিলেট মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পৃথক ১৫টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোববার দুপুরে সিলেট মহানগরীর কতোয়ালি থানা আয়োজিত ‘ওপেন হাউস ডে’ অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান পিপিএম এ সিদ্ধান্ত নেন। জনতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে কমিশনার বলেন- ভাল কাজ করলে প্রশংসা পাবেন নতুবা ‘আস-সালামু আলাইকুম’ অর্থাৎ বিদায়। নিজের কর্মদক্ষতার ব্যাপারে কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, আমি নিজেও যদি ভালো কাজ দেখাতে না পারি, তাহলে আমি নিজেও ‘আস-সালামু আলাইকুম’ (বিদায়) বলবো।
অনুষ্ঠানে ওসি আতাউর রহমানকে উদ্দেশ করে পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ঢের অভিযোগ শুনেছি, আর নয়। এখন থেকে সরাসরি অ্যাকশন নিতে হবে। এর জন্যে কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত সিটি করপোরেশনের ১৫ওয়ার্ডে আগামী এক মাসের মধ্যে পৃথক ১৫টি আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।কমিটিতে মসজিদের ইমাম, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমাধ্যমের প্রতিনিধি রাখার পরামর্শ দিয়ে কমিশনার বলেন- এখন থেকে এই কমিটির সদস্যরা ওসির কাজের মূল্যায়ন করবেন।
এদিকে নগরীতে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তারা বলেছেন, অধিকাংশ অপরাধী বহিরাগত। এদের সাথে কতিপয় দুস্কৃতিকারী পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলেও দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা বলেন, ওসমানী হাসপাতালেও পুলিশকে ২শ’ টাকা দিয়ে দালালগোষ্ঠী বিচরণ করে। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়েন রোগীর অভিভবকরা। হাসপাতালের সংরক্ষিত এলাকায় মাদক সেবন-ছিনতাই ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছিনতাই বেড়ে যাওয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে তা নিরসনে প্রদক্ষেপ নিতে পুলিশ কমিশনারের প্রতি আহবান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, কমিউনিটি সম্পৃক্ত না থাকলে পুলিশের পক্ষে অপরাধ দমন সম্ভব নয়। ফলে অপরাধ দমনে সকল শ্রেনীর মানুষের সহযোগীতা প্রয়োজন। পুলিশ কমিশনার বলেন, সিলেট মহানগর এলাকায় প্রতি ৮শ’৫০ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন পুলিশ রয়েছে। তাও আবার সদস্য স্বল্পতা রয়েছে ৬ শতাধিক। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও পুলিশকে জনস্বার্থ ও অপরাধ দমনে কাজ করতে হয়।
এরপরও কোনো ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র পুলিশকে দায়িত্বশীল এবং জনগণের সাথে সুন্দর আচরণের তাগিদ দেন তিনি। রোববার সকাল ১১ টার সময় থানা কম্পাউন্ডে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ নেন। ‘অপেন হাউস ডে’ অনুষ্ঠানে নগরীতে জনভোগান্তি ছিনতাই, খুন ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোর্শেদ আহমদ, জেলা জাসদের সভাপতি কলন্দর আলী, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সামসুল ইসলাম, ড. সাদাত হোসেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউনিন্সলর দিনার খান হাসু, সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল রকিব বাবলু, আব্দুল খালিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি জেবুন্নেছা হক, শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাবেক সভাপতি আনম শফিকুল হক, উপ পুলিশ কমিশনার এজাজ আহমদ (উত্তর), অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুছাসহ পুলিশ প্রশাসনের কর্র্মকর্তাবৃন্দ। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লার সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে ২৪ নভেম্বর থেকে ১৭ মে পর্যন্ত কতোয়ালি মডেল থানার অর্জন সম্পর্কিত দিক তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান।
এই সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ১ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, দুই রাউন্ড কার্তুজসহ দু’টি পাইপগান, ২৮ বোতল ফেনসিডিল, ৪৮ বোতল জেনোসিডিল, ২০৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫২৫ লিটার চোলাই মদ, ১০ পুরিয়া হোরোইন, তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল ও দু’টি সিএনজি অটোরিক্সা। গ্রেফতার করা হয়েছে- ডাকাত ২৪ জন, ছিনতাইকারী ৫৩ জন, চোর ৪৪ জন, ৪ জন অস্ত্রধারী ও মাদক সেবী ৪২ জন।