বাপ্পী দিদির জীবন সংগ্রাম
বিপ্লব রায়, শাল্লা প্রতিনিধি: জীবনের সাপলুডু খেলায় পরাজিত হতদরিদ্র বাপ্পি দিদির সংগ্রাম চলছেই। তার কুলিগিরির আয়েই জীবন চলছে তার পরিবারের। এই সংগ্রামী নারীকে সম্মানের সহিত সবাই বাপ্পী দিদি বলে ডাকেন। ব্যস্ততম শাল্লা উপজেলার আনন্দ পুর গ্রামের বাজারের ব্যবসায়ীদের মাল তোলেই কুলিগিরির কাজ করেই কঠিন জীবিকার পথ বেঁচে নিয়েছে। দিরাই শাল্লায় এই প্রথম একমাত্র কুলির কাজে নিয়োজিত নারী হিসেবে পরিচিত বাপ্পী দিদি। পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে এই কাজটি করার জন্য দিনভর ছুটে চলেন বাজারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এই পেশা গ্রহন করে বাপ্পী দিদি যেমন সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি প্রশংসা পাচ্ছেন সবার। জানা যায়,সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আনন্দ পুর গ্রামে বাপ্পী দিদির বাড়ী। বাবা মাকে নিয়ে বড় অসহায় হয়ে পড়েছেন। এক সময় বাপ্পী দিদি বড় আদরের মেয়ে ছিলেন। পরিস্থিতে বাধ্য হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে আজ কুলিগিরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। বাপ্পী দিদির বাবা অনিল রায়(৬০) প্যারালাইসেস রোগী। আর মা বাসন্তী রানী রায় (৫০) অপ্রকৃতস্ত। বাবা মাকে নিয়েই তার সংসার। বাপ্পী দিদির তিন বোন ছিল। মধ্যম বোন নমিতা রানী রায়(নম) আনসার ভি ডি পির চাকরী পেয়েছিল। চাকরী পাওয়ার পর প্যারালাইসেস রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। পরে বড় বোন সবিতা রানী রায়কে কোনো রকম কষ্ট করে বিয়ে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে পরেও বাপ্পী দিদি সাহস হারায়নি, ভেঙ্গে পড়েনি তার মন, জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করেই চালিয়ে যাচ্ছেন অসহায় পরিবারটি। সাধারন একটি মেয়ে হয়ে যে বোঝা কাঁধে নিয়েছে বাপ্পী, তার সাহসিকতার, সতীত্বের জন্য অসহায় পরিবারটি আজ দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারে। এলাকার লোকজন বলেন, বাপ্পীর সাহসিকতার কারনে অসহায় পরিবারটি অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে ফিরে এসেছে। গতকাল আনন্দ পুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাপ্পী দিদি মাথায় করে ময়দার বস্তা এনে বাজারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দিচ্ছেন। এছাড়াও নৌকা থেকে মাল তোলে ভারি কাজ করতে স্বীকার হয়েছেন তিনি। এব্যপারে বাপ্পী দিদির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা গরীব,অসহায় কাজ করেই আমাদের খেতে হবে। আজ যদি আমার একটি ভাই থাকত, তাহলে হয়তো লেবারের কাজে আসতে হত না। গরীব হলে মানুষ এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়। তিনি আরও বলেন , আমরা গরীব বলে সরকার আমাদেরকে কোনো কিছু সাহায্য করে না। ্এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ সেবাকেন্দ্র থেকে কোনকিছু দেয়নি। সামান্য একজন মেয়ে হয়ে কঠিন মোকাবেলায় এসে দাড়িয়েছি। এই মোকাবেলায় ঠিকে থাকতে পারলে, এবং মা বাবাকে দুবেলা দুমুটো ভাত মুখে তুলে দিতে পারলে আমার জীবনকে ধন্য মনে করব। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সবাই বাপ্পীর জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য ও সহযোগীতা কামনা করছেন।