কমলগঞ্জে ৩ মাস পরও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা উদ্ধার হয়নি : গুম করার অভিযোগ পরিবারের
নুরুল ইসলাম শেফুল: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ৩ মাস পরও এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা উদ্ধার হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে আরেক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধা রেশনের কার্ড নবায়ন করার কথা বলে মা (আমেনা) কে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ৯৭ দিন পরও খোঁজ মিলেনি হতভাগ্য শহীদ জননীর। বৃদ্ধাকে উদ্ধারে পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা নেই। অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনও রয়েছে পুলিশি ধরাছোঁয়ার বাইরে। মায়ের খোঁজে পুলিশসহ বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে অসহায় মেয়ে ঘুরলেও পাচ্ছে না কারও সহযোগীতা। মাকে হারিয়ে এখন পাগল প্রায় আমেনার পরিবারের লোকজন।
শহীদ জননী আমেনার মেয়ে শামছুন নাহার বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হেবজু মিয়ার উত্তরাধীকারী হিসেবে তার মা আমেনা খাতুন (৭০) দীঘদিন যাবত ভাতাসহ রেশন উত্তোলন করে আসছেন। রেশন উত্তোলনের কার্ড মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্ট থেকে নবায়ন করতে হয় বিধায় চলতি বছরের ৩ ফেব্র“য়ারী আমেনা খাতুনকে কমলগঞ্জের দক্ষিণ কুমড়াকাপন গ্রামে বসবাসকারী আরেক মুক্তিযোদ্ধা আনু মিয়া কার্ড নবায়নের কথা বলে ঢাকায় নিয়ে যান। কিন্তু দুই তিন যাবত আমেনার খোঁজ না পাওয়ায় পরিবারের লোকজন আনু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেন। বিগত ১৩ ফেব্র“য়ারী আনু মিয়া শামছুন নাহারকে জানায়, আমেনার খোঁজ পাওয়া গেছে। ০১৯৫৩-৩৬৮৯৫০ নাম্বারে পঁচিশশত টাকা বিকাশ করতে এবং বাইশ হাজার টাকা সাথে নিয়ে খুলনার কয়েরা যেতে হবে। সেখানে আমেনা বেগম একটি ক্লিনিকে ভর্তি আছেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন এ্যাম্বুল্যান্সে আমনাকে বাড়ী আনার কথা বলেন। এরপর থেকে আনু মিয়ার সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ১৭ ফেব্র“য়ারী শামছুন নাহার ঘটনাটি তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মখলিছুর রহমানকে জানান। ওই দিনই মখলিছুর রহমান কমলগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং এবং শামছুন নাহার আনু মিয়াকে অভিযুক্ত করে কমলগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নং ৭০২। তাং ১৯-২-১৪ ইং।
এ ঘটনার ৯৮ দিন অতিবাহিত হলেও বৃদ্ধ মায়ের কোন সন্ধান না পেয়ে এখন পাগল প্রায় আমেনার পরিবারের লোকজন। আমেনার মেয়ে শামছুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কোন সহযোগীতা পাচ্ছেন না। সাংবাদিকদের তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাই ৭১ সালের যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। সেই শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে তার মার খোঁজ না পাওয়ায় তারা আশংকা করছেন আনু মিয়া তার মায়ের সাথে থাকা সমস্ত টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে মেরে ফেলেছে অথবা গুম করেছে। তিনি আরও বলেন, কমলগঞ্জ থানার এস আই আনজির হোসেন তাকে বলেছিলো, গুমের মামলা করবেন না। আনু মিয়া খারাপ লোক আপনাদের ক্ষতি করতে পারে।
জিডির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার এস আই গৌরাঙ্গ কুমার বসু বলেন, আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা আনজির হোসেন ঢাকাস্থ সিআইডি অফিসসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। মাত্র দুতিন দিন হলো তিনি তদন্তের দায়িত্বভার পেয়েছেন। এখন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মখলিছুর রহমান বলেন, আমেনার মেয়ে ১৭ ফেব্র“য়ারী তাকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি শামছুন নাহারকে সাথে নিয়ে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের শরনাপন্ন হন। তিনি আরও বলেন, আনু মিয়া খুব সুবিধাজনক লোক নয়। সে কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে বিভিন্ন সময় বসবাস করে। স্বপ্রনোদিত হয়ে আনু মিয়া আমেনার কার্ড নবায়ন করার কথা বলে তাকে সাথে নিয়ে যাওয়ায় সন্দেহ হচ্ছে আমেনা নিখোঁজ হওয়ার পেছনে আনু মিয়ার হাত থাকতে পারে।
বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার বলেন, আনু মিয়া কমলগঞ্জ উপজেলার মু্িক্তযোদ্ধা নয়। সে বাহির থেকে এসে কমলগঞ্জে ভাড়া থাকতো। বর্তমানে তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তিনি অবিলম্বে আমেনাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. এনামুল হক বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত আনু মিয়ার বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আনু মিয়া কমলগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিন কুমড়াকাপন গ্রামের মীর জাহিদের বাসায় বসবাস করতো। কিন্তু বর্তমানে সে সেখানে অবস্থান করছে না।