কে ভাড়া করেছিল র্যাবকে : শামীম ওসমান, নাকি নূর হোসেন?
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ রাজধানীর স্থলবন্দর নারায়ণগঞ্জে সম্প্রতি সংঘটিত চাঞ্চল্যকর অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর এলিট ফোর্স র্যাব জড়িত নয় এমনটা বিশ্বাস করা ব্যক্তির দেখা পাওয়া খোদ নারায়ণগঞ্জেই বেশ দুঃসাধ্য। প্রায় একই সময়ে পৃথকভাবে সাত ব্যক্তিকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে তাদের হত্যা করার পর তাদের মৃতদেহগুলো ফেলে দেয়া হয়েছিল অদূরবর্তী শীতলক্ষ্যা নদীতে।
এই ঘটনার পরে র্যাবের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠার পর নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত র্যাবের সদর দফতর র্যাব-১১’র তিনজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার পরে মর্মান্তিক ওই ঘটনার সঙ্গে র্যাবের জড়িত থাকার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর এই বিশ্বাস আরো বদ্ধমূল হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এলিটি ফোর্স হিসেবে ২০০৪ সালে গঠিত হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাব। দেশের সামরিক বাহিনীগুলো অর্থাৎ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী এবং পুলিশের মধ্য থেকে বাছাইকৃত কমিশন ও নন-কমিশন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল এই এলিট ফোর্সটি।
কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই বাহিনীটি গঠিত হয়েছিল, ঠাণ্ডা মাথায় নানা ষড়যন্ত্র ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেই উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বাহিনীর সদস্যরা- যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি প্যানেল মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ তাদের আরো পাঁচ সহযোগীকে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি ব্যস্ত সড়ক থেকে অপহরণের পরে নির্মমভাবে হত্যা করা।
এই পুরো ঘটনার পেছনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ অর্থাৎ মূল পরিকল্পনাকারী ব্যক্তিটি কে এবং তার পরিচয় কী তা নিয়ে শুধু জনসাধারণ কিংবা সচেতন নাগরিকরাই নন, এমনকি নিহতদের পরিবার-আত্মীয়স্বজন এবং ন্যায়বিচারপ্রার্থীরাও অত্যন্ত বিভ্রান্ত, ফলে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানারকম মত।
একটি দল মনে করে- নিহত নজরুলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও আওয়ামী লীগ নেতা এবং একইসঙ্গে একই সিটি করপোরেশনের আরেকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনই এই অপহরণ ও হত্যার মূল চক্রান্তকারী।
আর আরেকটি দল মনে করে- প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মাথা থেকেই মূলত এই ঘটনার পরিকল্পনা বের হয়েছে। নূর হোসেনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই নেতা নজরুলের বিরুদ্ধে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য র্যাব-১১’র ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছেন বলে মনে করেন তারা।
শামীম ওসমান যে শুধু একজন স্থানীয় সংসদ সদস্য কিংবা আওয়ামী লীগের একজন বলিষ্ঠ নেতা তাই নয়, এমনকি রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী মূল বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর নারায়ণগঞ্জে যত বড় বড় অপরাধের ঘটনা ঘটে, তার প্রায় সবগুলোর সঙ্গেই জড়িত মূল ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের গডফাদার হিসেবেও তিনি চিহ্নিত।
অবশ্য সাতজনকে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় থানাগুলোতে যেসব মামলা করা হয়েছে সেগুলোর কোনোটিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে শামীম ওসমানের নাম উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু মামলার মূল সন্দেহভাজন আসামি নূর হোসেন স্থানীয়ভাবে শামীম ওসমানের ‘ডান হাত’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এবং শ্বশুর শহীদুল ইসলামের বিশ্বাস- পুরো ঘটনার মূল হোতা নূর হোসেন।
সেলিনার দাবি, “একবার শুধু নূর হোসেনকে গ্রেফতার করা হোক, সবকিছু তখন এমনিতেই সামনে চলে আসবে।”
গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ তার স্বামীর কাছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ফোনকল এসেছিল বলা জানান সেলিনা। তিনি বলেন, “নজরুল আমাকে অনেকবার বলেছিলেন যে তাকে হত্যা করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র চলছে… তিনি এমনকি আমাকে এটাও বলেছেন যে তাকে হত্যা করার জন্য র্যাব কিংবা পেশাদার হত্যাকারীদের ব্যবহার করা হতে পারে।”
অবশ্য এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নজরুল কিভাবে জেনেছেন সে সম্পর্কে স্ত্রী-কে কিছুই বলেননি তিনি।
সেলিনার বিশ্বাস, তার স্বামীকে হত্যার ঘটনায় ‘নিঃসন্দেহে’ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জড়িত।
এদিকে, র্যাব-১১’র তিনজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করায় কোনো সান্ত্বনাই পাননি নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে যান এমনটা আমি চাইনি, আমি এটাও চাইনি যে তাদের কর্মক্ষেত্র থেকেই তাদের বরখাস্ত করা হোক। বরং যদি তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত তাহলে এই হত্যার পেছনের রহস্য সামনে আসত আর আমি সেটাই চাই।”
র্যাব-১১’র বহিষ্কৃত তিন কর্মকর্তা হলেন- সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সায়ীদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেন এবং নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এস এম রানা। তিনদিন আগে অর্থাৎ ৫ মে সোমবার তারা প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে বহিষ্কৃত হলেও বিষয়টি জনসম্মুখে আসে বুধবার।
শহীদুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সাতজনকে হত্যার ঘটনার পুরো বিষয়টি খুব ভালোভাবেই জানেন এই তিন র্যাব কর্মকর্তা।”
২৭ এপ্রিল জামাতার অপহরণ হওয়ার খবর পাওয়ার পর সাহায্য চাইতে শামীম ওসমানের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন শহীদুল।
তিনি বলেন, “শামীম ওসমান আমাকে বলেছিলেন যে নজরুলকে র্যাব-১১’র সদস্যরা উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। তখন আমি র্যাব-১১’র প্রধান কার্যালয়ে যাই এবং আমার জামাতার জীবন ভিক্ষা চেয়ে আমি কমান্ডিং অফিসার তারেকের পা ধরেও অনুরোধ করি। এমনকি আমি তাকে এটাও বলেছিলাম যে আমার জামাতাকে হত্যা করার জন্য তারা নূর হোসেনের কাছ থেকে যত টাকা পেয়েছেন, তাদেরকে আমি এর দ্বিগুণ টাকা দেব যদি তারা আমার জামাতাকে অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে ফেরত দেন।”
শহীদুল আরো বলেন, “তারেক আমাকে তখন এত জোরে ধাক্কা দিয়েছিলেন যে আমি পড়ে গিয়ে হাঁটুতে ব্যথা পাই।” নজরুলকে হত্যা করেছেন শামীম ওসমান- এমন দাবিও করেন তিনি।
শহীদুল জানান, তারেক তাকেও হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “তারেক আমাকে বলেছিলেন যে অপহরণের ঘটনার সঙ্গে যে র্যাব জড়িত এই কথা যদি কখনো আমি ভুলেও কাউকে জানাই তাহলে তিনি আমাকে ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করবেন।”
তারেক সায়ীদ মোহাম্মদ সম্পর্কে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়ার ভাই হন।
কখনো ক্ষোভে ফেটে পড়ে আর কখনো কান্নায় ভেঙে পড়ে নজরুলের শ্বশুর বলেন, “সত্য শুধু তখনই সামনে আসবে যদি নিরপেক্ষ তদন্ত হয়।”
মজার বিষয় হলো সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আসামি হাসমত আলী হাশু সম্পর্কে শহীদুলের ভাই হন।
শহীদুল জানান, নজরুলকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি জানতে পেরেছিলেন হাশুর বন্ধু জসীমউদ্দিনের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, “যখন আমি জানতে পারলাম যে নজরুলকে হত্যা করার জন্য ছয় কোটি টাকার চুক্তি করা হয়েছে, তখহন আমি এটা চেপে রাখতে পারিনি। অপহরণের পর ওই সাতজনকেই পুরান আদালত ভবনের কাছে অবস্থিত র্যাবের ক্যাম্প অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।”
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এসএম রানা ওই ক্যামের প্রধান ছিলেন, তিনি র্যাব-১১’র অপরাধ দমন কোম্পানি-১’র আহ্বায়কও ছিলেন। আর র্যাব-১১তে নিজ কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি মেজর আরিফ এই ক্যাম্পেও নিয়মিত কাজ করতেন।
শহীদুলের ভাষ্য অনুযায়ী, নূর হোসেনের দলের লোকেরা অপহরণের রাতেই একাধিক মাইক্রোবাসে করে র্যাবের ক্যাম্পে গিয়ে অপহৃতদের হত্যা করেন এবং মৃতদেহগুলো পরে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন।
শহীদুল বলেন, “আমি জানি না এক একজন র্যাব কর্মকর্তা ছয় কোটি টাকার কত অংশ করে পেয়েছিলেন। কিন্তু যে ঘটনা তারা ঘটিয়েছেন তার জন্য আরো অনেক বেশি টাকা পাওয়ার উচিত ছিল তাদের।”
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি এরই মধ্যে র্যাবের ওই তিন সাবেক কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবসহ তাদের পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের ব্যাংক হিসাবও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে দিয়েছে।
এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য র্যাব যে বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই নজরুলের ছোট ভাই মো. আবদুস সালামের।
অপহরণের দিন ২৭ এপ্রিল আদালতের একটি শুনানিতে হাজিরা দেয়ার পর দুপুরের খাবার খেয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে অবস্থিত সালামের নিজ বাড়িতে গিয়ে সালামের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল নজরুলের। ফেব্রুয়ারির ২ তারিখের এক ঘটনায় নজরুলের বিরুদ্ধে নূর হোসেনের দায়েরকৃত এক মামলার শুনানির জন্য সেদিন আদালতে গিয়েছিলেন তিনি।
সালাম জানান, জামিন পাওয়ার পর তার ভাই ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। নজরুল ফোনা সালামকে জানিয়েছিলেন যে তিনি আদালত চত্বর ছেড়ে বেরিয়েছেন এবং যাত্রাবাড়ির দিকে যাচ্ছেন। অবশ্য তার কিছুক্ষণ পর থেকেই নজরুলের ফোনের সংযোগ পাচ্ছিলেন না সালাম। কিন্তু যখন তিনি দেখলেন নজরুলের সঙ্গে থাকা কারোর ফোনেরই সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না, তখনই তিনি সন্দেহ করেন যে খারাপ কিছু একটা ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শামীম ওসমান ও র্যাব কর্মকর্তা তারেকসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সালাম আরো জানান, তারেক সে সময় তাকে উলটো জিজ্ঞেস করেছিলেন যে শামীম ওসমানের সঙ্গে নজরুলের কোনো শত্রুতা আছে কি না। সালাম বলেন, “যখন আমি তারেককে বললাম যে শামীম ওসমানের সঙ্গে নজরুলের কোনো দ্বন্দ্ব নেই তখন তিনি আমাকে শামীম ওসমানের কাছে যেতে বলেন।”
নজরুলের আরো অনেক আত্মীয়স্বজনেরও একই অভিজ্ঞতাই হয়েছে। যখনই তারা সাহায্য চাইতে র্যাবের কাছে গেছেন তখনই তাদের বলা হয়েছে শামীম ওসমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আর যখন তারা শামীম ওসমানের কাছে গেছেন তখন তাদের বলা হয়েছে র্যাবের কাছে যাওয়ার জন্য।
সালাম নিশ্চিত করে বলেন, “নূর হোসেনই আমার ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। আর এই ষড়যন্ত্রের কথা শামীম ওসমান তো জানতেনই, এমনকি এই পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি জড়িতও থাকতে পারেন।”
এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি নূর হোসেন হুমকি দিয়েছিলেন যে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নজরুলকে হত্যা করবেন তিনি।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময়েও একবার নজরুলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল র্যাব। র্যাব-১০’র একটি দল নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে তোলার পর যাত্রাবাড়ির ধলপুরে অবস্থিত তাদের কার্যালয়ে নিয়ে রাখে।
সালাম জানান, সে সময়ে র্যাবকে অনুসরণ করেই পুরো ঘটনাটি দেখেন তিনি। কিন্তু তখন নজরুলকে তাদের কার্যালয়ে নেয়ার বিষয়ে অস্বীকৃতি জানায় র্যাব। পরে ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রবল দেন-দরবারের পরে এক রাতে নজরুলকে ছেড়ে দেয় র্যাব।
সালাম বলেন, “সেদিনও নজরুলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।”
সালাম দাবি করেন, “মৃত্যুর প্রায় তিন মাস আগেই নজরুল সালামকে জানিয়েছিলেন যে র্যাবের বহিষ্কৃত এই তিন কর্মকর্তা তারেক, আরিফ এবং রানা নজরুলকে হত্যা করতে পারে।”
সালামের দাবি, এর আগেও র্যাবের সহায়তায় তার ভাইকে নূর হোসেন হত্যার চেষ্টা করলেও তাতে সফল হয়নি। অপহরণের ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে শামীম ওসমান সালামকে বলেছিলেন, “র্যাব ছাড়া আমি আর কাউকেই ভয় পাই না, যদি নজরুলকে কেউ হত্যা করে তাহলে শুধুমাত্র র্যাবই তা ঘটাবে। এছাড়া আর কাউকে পাত্তাও দিই না আমি।”
তারপরেও সালামের দৃঢ় বিশ্বাস যে হয় পুরো ঘটনার সঙ্গেই শামীম ওসমান জড়িত ছিলেন, কিংবা এই পরিকল্পনার বিষয়ে সবকিছুই জানতেন তিনি।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জের বহু লোক বিশ্বাস করেন যে নূর হোসেনের মতো শামীম ওসমানের হাতে অনেক ভয়ংকর পোষ্য আছেন আর নিহত নজরুলও তাদের মধ্যেই একজন ছিলেন।
তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়ে তাদের কেউই কিছু বলতে রাজি হননি। বছরের পর বছর ধরে তারা দেখে এসেছেন নূর হোসেনের মতো একের পর এক ভয়ংকর দুর্বৃত্ত কিভাবে তৈরি করেন শামীম ওসমান, আর প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার পর চোখের পলক না ফেলেই কিভাবে তাদের ছুঁড়ে ফেলে দেন তিনি।
নজরুল একসময় শামীম ওসমানের লোক হিসেবে পরিচিত থাকলেও ২০১১ সালের ওই নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র হিসেবে জয়লাভের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে তার। আর নারায়ণগঞ্জের মেয়র হিসেবে আইভীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন শামীম ওসমান। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আইভীর সঙ্গে শামীম ওসমানের সম্পর্ক ভীষণ বৈরী।
নারায়ণগঞ্জে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের অতীতে রক্তের ছাপ লেগে আছে কারণ তাদের পরিবারের সদস্যরাও অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন।
এমনই এক পরিবারের সদস্য যিনি অতীতে র্যাবের হাতে পড়েছিলেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান- সম্প্রতি তিন বহিষ্কৃত র্যাব কর্মকর্তা এর আগেও নারায়ণগঞ্জে এই ধরনের বহু অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু অতীতে বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ায় ইদানীং তারা বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন।
কিন্তু এবারের অপরাধের পরবর্তী ঘটনাগুলো ধারাবাহিকভাবেই এই কর্মকর্তাদের হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় তারা পুরো ঘটনাটিই নিয়ন্ত্রণ করতে এত বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, জানান ওই ব্যক্তি।
নজরুলের ভাই সালামের অভিযোগ, অপহৃত হওয়ার ১৫-২০ দিন আগেই নজরুলকে হত্যা করার পরিকল্পনার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও র্যাব তো নয়ই এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নজরুলকে বাঁচানোর জন্য কিছুই করেনি।
আর নজরুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, নজরুলকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি শামীম ওসমানও। সূত্র ঢাকা ট্রিবিউন।