সোনিয়া-মোদির ভাগ্য নির্ধারণ আজ
সুরমা টাইমস ইন্টারন্যাশনালঃ ভারতের ১৬তম লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফায় ১০টি রাজ্যের ৮৯টি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। বুধবার সকাল সাতটা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। আজকের এই নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতের রাজনীতির প্রথম সারির নেতাদের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ভাগ্য নির্ধারণ হবে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদির। এ ছাড়াও বেশ কয়েক জন হেভিওয়েট প্রার্থীরও ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তারা হলো-রাজনাথ সিং, লালকৃষ্ণ আদবানি, অরুণ জেটলি, মুরলি মনোহর জোশী, শ্রীপ্রকারশ জয়সওয়াল, উমা ভারতী, ফারুখ আব্দুল্লাহ, শরদ যাদব, সংগীতশিল্পী বাপ্পী লাহিড়ি, জর্জ বেকার, পরেশ রাওয়াল, জাভেদ জাফরি, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্র নায়িকা শতাব্দী রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। যেসব আসনে এই নেতাদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে তার মধ্যে গুজরাটের বরোদা (ভাদোদরা) আসনের প্রার্থী বিজেপির নরেন্দ্র মোদি, গান্ধীনগরে লালকৃষ্ণ আদভানি, উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি আসনে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, লক্ষেষ্টৗ আসনে বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং ও কানপুরে বিজেপির সহসভাপতি মুরলি মনোহর যোশি। কানপুরে যোশির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সোওয়াল, পাঞ্জাবের অমৃতসরে বিজেপির রাজ্যসভা নেতা অরুণ জেটলি, কংগ্রেসের ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিং, ঝাঁসিতে বিজেপির ঊমা ভারতী এবং বিহারে সংযুক্ত জনতা দলের সভাপতিশারদ যাদব লড়ছেন। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহর আসনেও ভোট চলছে। এ ছাড়াও ভোট গ্রহণ চলছে অন্ধপ্রদেশ বিভক্ত হওয়ার পর গঠিত তেলেঙ্গানা রাজ্যের ১৭টি, গুজরাটের ২৬টি, পাঞ্জাবের ১৩টি, মধ্য ও পূর্ব-উত্তর প্রদেশের ১৪টি এবং পশ্চিমবঙ্গের ৯টি আসনে। এ ছাড়া বিহারের সাতটি এবং কাশ্মীর, দাদরানগর হাভেলি এবং দমন ও দিউতে একটি করে আসনে ভোট হবে। এ পর্বের সঙ্গে শেষ হবে ৪৩৩ আসনের ভোট। বাকি থাকছে ১০৫টি আসন। এই ১০৫টি আসনে ভোট হবে আগামী ৭ ও ১২ মে। আজকের ভোটে ১০টি রাজ্যে প্রায় ১৪ কোটি ভোটার অংশ নিচ্ছেন। প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২৯৭।- গান্ধী পরিবারের খাসতালুক বলে পরিচিত উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বী কম প্রভাবশালী বলে তার জয় নিশ্চিত। একমাত্র চিন্তা জয়ের ব্যবধান বাড়ানো নিয়ে। এ আসন থেকে ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী নিজে এবং তার পর সোনিয়া গান্ধী লাগাতার জয়ী হয়ে আসছেন। এবার সোনিয়ার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী দিল্লির আইনজীবী অজয় আগরওয়াল, বহুজন সমাজ পার্টির প্রদেশ সিং ও আম আদমি পার্টির অর্চনা শ্রীবাস্তব। গত নির্বাচনে সোনিয়া গান্ধী তিন লাখের বেশি ভোটে জয়ী হন। এবার উত্তর প্রদেশের শাসক সমাজবাদী পার্টি সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী দেয়নি। সোনিয়ার হয়ে এখানে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করছেন তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এ কেন্দ্রে এযাবৎকালের ১৫ বারের ভোটে কংগ্রেস ১২ বার জয়ী হয়েছে। অন্ধ প্রদেশ রাজ্য দ্বিখণ্ডিত করে তেলেঙ্গানা রাজ্য ১৭ আসন নিয়ে গঠিত হওয়ার পর এই প্রথম সেখানে ভোট হতে চলেছে। এ ছাড়া অন্ধ প্রদেশ বিধানসভার নির্বাচন হচ্ছে একসঙ্গে। গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস অবিভক্ত অন্ধ থেকে ৩৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল বলেই কেন্দ্রে সরকার গঠন সহজ হয়েছিল। এবার তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন নিয়ে কংগ্রেসের ভেতরেই বিদ্রোহ হয়েছে। বহু সাংসদ দল ত্যাগ করেন। কংগ্রেস এখানে দুর্বল হয়েছে বলেই কেন্দ্রে সরকার গঠন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তেলেঙ্গানাভুক্ত ১৭টি আসনের মধ্যে গত ভোটে কংগ্রেস ১২টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু এবার সে সংখ্যা ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এখানে কংগ্রেসের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস)। -এরাই দীর্ঘদিন ধরে পৃথক রাজ্য গঠনের আন্দোলন করছিল। ফলে তারা রাজ্য গঠনের কৃতিত্ব দাবি করছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী এখানকার মানুষ রাজ্য গঠনের জন্য সোনিয়া গান্ধীকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন। ফলে এখানে কংগ্রেস কিছু আসন পেতে পারে। এখানেও কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি ও আঞ্চলিক দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। -বিজেপি পৃথক রাজ্য গঠনে সমর্থন করলেও তেলেগু দেশম বিরোধিতা করেছে। কংগ্রেস ভেঙে এখানে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএসআর রেড্ডির ছেলে জগন মোহন রেড্ডি পৃথক দল গঠন করেন। কিন্তু তিনিও তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিরোধিতা করেছেন। ফলে তেলেঙ্গানা এলাকার ভোটে তিনিও তেমন কোনো সাফল্য পাবেন না। তবে অবশিষ্ট অন্ধ, যা সীমান্দ্র বলে পরিচিত, সেখানে তিনি সাফল্য পেতে পারেন। এখানে তারকা প্রার্থী মেডাক কেন্দ্রে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির কে চন্দ্রশেখর রাও। ভোটের প্রচারে চন্দ্রশেখর রাও বলেছেন, ভোটের পর রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের সরকারকে সমর্থন করবেন। নরেন্দ্র মোদিকে তিনি সমর্থন করবেন না। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট মঙ্গলবার দূরদর্শনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যেমন দেবগৌড়ার নেতৃত্বে তৃতীয় মোর্চা সরকার গঠিত হয়েছিল, তেমনি এবারও কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে কেন্দ্রে তৃতীয় মোর্চা সরকার গঠিত হবে।’ তিনি এও বলেন, ‘আঞ্চলিক দলের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হবেন। কংগ্রেসকে বাইরে থেকে সে সরকারকে সমর্থন করতে হবে, যদি তারা বিজেপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে চায়।’ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ প্যাটেলও বলেছেন, কংগ্রেস প্রয়োজনে তৃতীয় মোর্চা সরকারকে সমর্থন করতে পারে। সূত্র: ওয়েবসাইট