চালককে সতর্ক করার ডিভাইস বানাল ঢাবি শিক্ষার্থীরা
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ গাড়ী চালানোর সময় চালকের অসঙ্গতির তথ্য জানিয়ে সতর্কবার্তা দেবে একটি ডিভাইস। চালক মোবাইলে কথা বললে, অমনযোগী হলে কিংবা অসুস্থ বা মাতাল হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কবার্তা দেবে এটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা চমকপ্রদ এ ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন। ইতোমধ্যে ডিভাইসটি সোহাগ পরিবহন লিমিটেড তাদের গাড়িতে ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় চালকের আচরণের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা খুঁজে পেলে ডিভাইসটি চালককে এবং কন্ট্রোল রুমে সতর্কবার্তা পাঠাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত ব্যতিক্রমী এ ডিভাইস নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন থেকে পরিচালিত খ্যাতনামা ইনফরমেশন সোসাইটি ইনোভেশন ফান্ডের(আইএসআইএফ) নির্বাচিত প্রজেক্টের ২০৯টি উদ্ভাবনকে পেছনে ফেলে ১১তম হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে এটি। এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলের সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় উদ্ভাবন হিসাবেও চিহ্নিত হয়েছে ডিভাইসটি। বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে উপমহাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ ডিভাইস কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান এবং ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এ প্রযুক্তিকে দেশের দূর্ঘটনা রোধে অসাধারণ উদ্ভাবন বলে মন্তব্য করেন। পুরো প্রকল্পটির পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত, তমাল, সাকিব ও নুসরাত। এ বিভাগের গ্রিণ নেটওয়ার্কিং রিসার্চ গ্রুপের অধীনে প্রকল্পটি তৈরি করেছেন তারা। ব্যতিক্রমী এ উদ্ভাবন এবং এর পেছনের গল্প বলতে গিয়ে ড. রাজ্জাক টেকশহরডটকমকে বলেন, এ প্রকল্পের ভাবনাটা ২০১২ সালের। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই যখন চোখে পড়তো সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানির সংবাদ। কিছু করার তীব্র ইচ্ছায় নেমে পড়লেন তিনি। বিজ্ঞানসম্মতভাবে খুঁজে বের করলেন দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো। তারপর এমন একটি ডিভাইস উদ্ভাবনের কাজ শুরু করলেন চার শিক্ষার্থীকে নিয়ে। ড. রাজ্জাক বলেন, ‘ড্রাইভার ডিসট্র্যাকশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামের ডিভাইসটি গন্ধ ও শারিরিক অবস্থা যাচাই করে চালকের মাতাল অবস্থা ধরে ফেলবে। চালকের অসুস্থতাও পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা রয়েছে এটির। চালক যদি অমনোযোগী হয়, সড়ক পথের বাইরে বিলবোর্ড বা অন্য কোথাও তাকিয়ে থাকে তাহলেও ডিভাইসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সময় পরিমাপ করে ঝুঁকি চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা দিতে থাকবে বলে জানান প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে থাকা এ শিক্ষক। গবেষেকরা এটি পরীক্ষার সময় বিভিন্ন কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি সেন্সর, ক্লাউড সার্ভার, ইন্টারনেট মডেম ও থ্রিজি সিম ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া ওয়েব ক্যাম ও কিছু বিশেষায়িত সেন্সরও রয়েছে এতে। ২০১২ সালের শেষের দিকে আইএসআইএফে প্রজেক্টটি পাঠান ড. রাজ্জাক। প্রায় দুই বছর যাচাই বাছাই শেষে এটি পুরো এশিয়া প্যাসিফিকের ২০৯ প্রজেক্টকে পেছলে ফেলে ১১ নম্বর স্থান দখল করে। অনুদান পায় ৩০ হাজার অস্ট্রেলিয় ডলার। গত ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেসের সম্মেলন কক্ষে এক কর্মশালায় প্রায় ৩০ জন গাড়িচালক এই প্রযুক্তির ব্যবহারিক দিক দেখেন। এতে উদ্ভাবন বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. রাজ্জাক। এ কর্মশালাতে উপস্থিত ব্যক্তিরা এটির বেশ প্রশংসা করেন। দেশজুড়ে গাড়ি চালকের এটি ব্যবহার উপযোগী করতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা।