জননেতা সামাদ আজাদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দেশের প্রথম পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ এর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রবিবার। ২০০৫ সালের এদিনে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের রাজনীতির কালজয়ী এই জননেতা। বৃহত্তর সিলেটবাসীর গর্ব ও জাতীয় রাজনীতির কিংবদন্তী আব্দুস সামাদ আজাদ আজীবন অসাধারণ মেধা নিয়ে মানুষের কল্যাণের রাজনীতি করেছেন। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই রাজনীতিবীদ ১৯২৬ সালের ১৫ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার দুর্গম অজোপাড়াগাঁ ভুরাখালী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মোহাম্মদ শরিয়ত উল্লাহ। সামাদ আজাদ বাবা-মায়ের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন।
সামাদ আজাদ প্রথমে গ্রামের স্কুলে ও পরে দিরাই উপজেলার জগদল ভাটিরগাঁও স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৪৩ সালে সুনামগঞ্জ শহরের সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি যখন সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র অর্থাৎ ১৯৪০ সালে সামাদ আজাদ সুনামগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি হিসাবে ছাত্র রাজনীতিতে পদার্পণ করেন।
১৯৪৮ সালে সিলেট মুরারি চাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ইতিহাস বিষয়ে তিনি এম এ পাশ করেন। তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে সরকার তার এম এ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং আসাম অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগ্রামের সাথে সামাদ আজাদ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এ কারণে ইংরেজ শাসক কর্তৃক গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন এবং তার প্রথম কারা জীবন শুরু হয়।
১৯৪৪-৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনেও রয়েছে এ রাজনীতিবিদের সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাজনীতির লাইম লাইটে আসেন।
১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) আওয়ামীলীগের শ্রম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়ায় পাক সাময়িক সরকার পুনরায় তাকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারীর পর তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং ৪ বছর কারাভোগ করে ১৯৬২ সালে মুক্তিলাভ করেন।
১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সৃষ্ট ষড়যন্ত্রমূলক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি সুনামগঞ্জ-৩ আসন (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) ও সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা-ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ) এ দুটি আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার (স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার) প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
বাঙালী জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব আব্দুস সামাদ আজাদ ছিলেন মুজিবনগর সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা (পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা) এবং ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সামাদ আজাদ বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পুনরায় পান। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।
কর্মসূচি : আবদুস সামাদ আজাদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে তাঁর গ্রামের বাড়ীসহ বিভিন্নস্থানে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, কবর জিয়ারত, মরহুমের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা ইত্যাদি।
আজ সকাল ৮ টায় পারিবারিকভাবে মরহুমের শেলটেক সামাদ আজাদ, ইউনিট থ্রিসি, ৮৩ লেক সার্কাস, কলাবাগানস্থ বাসভবনে কোরআনখানি, বাদ আসর কলাবাগান লেক সার্কাস লেকভিউ জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ১১টায় আবদুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মরহুমের কবর জেয়ারত ও পুস্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে রাজধানীতে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
আব্দুস সামাদ আজাদ পরিষদ, সিলেট : জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ পরিষদ, সিলেট-এর উদ্যোগে আজ রোববার বিকেল ৩টায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সংগঠনের আহবায়ক বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবং সদস্য সচিব আ.ন.ম শফিকুল হক আলোচনা সভায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
আব্দুস সামাদ আজাদ পরিষদ, সুনামগঞ্জ : আব্দুস সামাদ আজাদ পরিষদ, সুনামগঞ্জ-এর উদ্যোগে আজ রোববার বাদ জোহর সুনামগঞ্জ কালেক্টরেট জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বিকেল ৪টায় শহরের রমিজ বিপণীস্থ আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সকলকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য পরিষদের জেলা সভাপতি সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শফিকুল আলম এডভোকেট অনুরোধ জানিয়েছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ : জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে স্মরণসভা ও উপজেলা কোর্ট জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন জানিয়েছেন।
জগন্নাথপুর পৌর আওয়ামী লীগ : পৌর আওয়ামীলীগের ব্যানারে শহরের টিএন্ডটি রোডে বাদ আসর আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শোক র্যালী অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বাদ আসর উপজেলা সদর জামে মসজিদ, সদর বাজার মসজিদ ও তাঁর গ্রামের বাড়ী ভূরাখালী জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও সন্ধ্যায় জগন্নাথ জিউর আখড়ায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য পৌর আওয়ামীলীগের আহবায়ক সুধাংশু শেখর রায় বাচ্ছু ও সদস্য সচিব জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবাব মিয়া অনুরোধ জানিয়েছেন।