রাউজানে লম্পট শিক্ষককে গণধোলাই, জুতার মালা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ চট্টগ্রামের রাউজানে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে যৌনকর্ম করে কৌশলে তা ভিভিও করে শেষ পর্যন্ত ধরা খেয়েছেন শিক্ষক নামধারী এক লম্পট। রাউজান উপজেলা জুড়ে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উপজেলার চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেল কবির (৪০) একই বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যৌনকর্মে লিপ্ত হতো। রাশেল কবির যৌনদৃশ্য ভিডিও করে তার কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখতো। এ ঘটনা জানাজানির পর স্থানীয় জনতা শনিবার দুপুরে ওই শিক্ষককে গনধোলাই দিয়ে রাউজান থানা পুলিশে দিয়েছে। জানা যায়, উপজেলার রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অবস্থিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেল কবির দীর্ঘ ৩/৪ বছর ধরে বিদ্যালয়ে বাণিজ্য শাখার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছে। এ সুবাধে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই একটি কোয়ার্টার পায় ওই শিক্ষক। এখানে ছাত্রীদের প্রাইভেট টিউশনির নামে বিভিন্ন সময় যৌন মিলনে বাধ্য করত সে। যেটি প্রকাশ পায় অভিযুক্ত শিক্ষকের ব্যবহৃত ল্যাপটপে ভিডিও ধারনের মাধ্যমে। এসব ঘটনা আঁচ করতে পেরে এলাকার লোকজন তার ল্যাপটপটি জব্দ করে। পরে এর সত্যতা মিলে। ধারন করা ভিডিও চিত্র এলাকার তরুণ-তরুণী শুরু করে সর্বত্র মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তিনি ৩ ছাত্রীর সাথে যৌন মিলনের কথা বললেও ভিডিও ফুটেজে বিভিন্ন ছাত্রীর সাথে মিলনের দৃশ্য দেখা যায়।
অভিযুক্ত শিক্ষককে স্থানীয়রা প্রথমে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে বিদ্যালয় এলাকায় জুতার মালা পরিদর্শণ ও মাথা ন্যাড়া করে রাউজান থানায় সোপর্দ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, শিক্ষক রাশেল শিক্ষকতার নাম দিয়ে বিভিন্ন ছাত্রীকে যৌন মিলনের মত অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ল্যাপটপে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তিনি জানান, ওই অনৈতিক কাজের ভিডিও গুলো এখন রাউজানসহ বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল মোবাইলে পৌঁছে গেছে। এ পর্যন্ত আমরা ৪ টি ভিডিও ক্লিপস আমরা দেখেছি। যে গুলোতে এ বিদ্যালয়ের ৯ম-১০ম শ্রেণীর ছাত্রীদের সাথে রাসেল অবৈধ মেলামেশার চিত্র রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক ৩ বছর ধরে এখানে কর্মরত আছে। তবে আমি নতুন আসায় আগে কি করেছে তা আমি জানি না। এছাড়াও স্থানীয় লোকজন জানান এ শিক্ষক বিদ্যালয়ের ছুটি শেষে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতো। তার কোর্য়াটারের বাসায় কোচিং এর নাম করে সে দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করে আসছিল। কিছু দিন আগে ওই শিক্ষক এক ছাত্রীকে বাথরুমে ঢুকিয়ে অবৈধ কাজে বাধ্য করে। এদিন স্কুলের এক ছাত্রী বাথরুমে যেতে চাইলে র্দীঘক্ষণ দরজা বন্ধ থাকায় সে শিক্ষকদের জানালে ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। তখন সে স্কুলের অন্য শিক্ষকদের ম্যানেজ করে ঘটনা ধামা চাপাদেয়।
এ ঘটনার স্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক রাশেল কবির বলেন, ৩ ছাত্রীর সাথেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এর বেশি নয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাউজান থানার উপপরিদর্শক ময়নাল বলেন, রাসেল কবির নামের এক শিক্ষককে অপকর্মের দায়ে স্থানীয়রা আটক করে থানায় দিয়েছে। থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ আলমগীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।এ ঘটনার পর লম্পট শিক্ষক রাসেল কবিরকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী স্বপন কান্তি চক্রবর্তী। রাউজান থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশঁ বলেন, শিক্ষক রাসেল কবিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শনিবার ঘটনাটি রেল মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে জানানো হলে তিনি লম্পট শিক্ষক রাসেল কবিরকে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দেয়ার জন্য আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কে এই লম্পট শিক্ষক
শিক্ষক রাসেল কবির বরিশাল জেলার ঝালিকাঠি এলাকার বৈশাখীয়া গ্রামের হদুয়ার আবদুর রবের ছেলে। গত ২০০৯ সালে তিনি ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নেন। তার বাবা আবদুর রব তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরর্ত ছিলেন।শিক্ষক রাসেল কবির বলেন, আমার বিয়ের আগে একটি মেয়ের সাথে অনৈতিক সর্ম্পকের ভিডিও চিত্র কম্পিউটারে সংরক্ষিত ছিল । ওই ভিডিও চিত্রটি কম্পিউটারে পেয়ে আমার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ করছে।
উল্লেখ্য, চুয়েট সংলগ্ন এ স্কুলে এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক অভিভাবক নিরাপত্তাহীনতায় মেয়েদের লেখা পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি তারা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য লম্পট শিক্ষক রাসেলের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।