ইলিয়াস আলী কি চিরতরে হারিয়ে গেলেন ?

আজ নিখোঁজের ২ বছর : ইলিয়াসকে বাদ দিয়ে জেলা কমিটি : নেই কোন কর্মসূচী

Elias Ali3সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেটে বিএনপি থেকে মুছে গেল নিখোঁজ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলার সদ্য সাবেক সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর নাম। মঙ্গলবার খালেদা জিয়া ঘোষিত জেলার নতুন আহবায়ক কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি। তাহলে কি ইলিয়াস আলী চিরতরে হারিয়ে গেলেন? যদিও তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাকে সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু কমিটি থেকে ইলিয়াস আলীর নাম বাদ দেয়ায় সিলেটের তৃর্নমূল নেতাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানির গুলসান কার্যালয়ে সিলেট জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে ইলিয়াস অনুসারিরা লুনাকে নতুন কমিটিতে আহবায়ক করার দাবি জানালেও বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অ্যাডভোকেট নুরুল হককে আহবায়ক করে কমিটি ঘোষণা করেন। দলীয়সূত্রে জানাযায়, গত ২০০৯ সালে সিলেট জেলা বিএনপির পূনাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছিল এম ইলিয়াস আলীকে। কমিটি গঠনের প্রায় ৫ বছর ও ইলিয়াস আলী নিখোঁজের দুই বছর পর গত মঙ্গলবার জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হলেও নতুন আহবায়ক কমিটিতে স্থান হয়নি নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সিলেটে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। গত দুই বছর নেতাকর্মিরা ইলিয়াস ইস্যু নিয়ে মাঠে সরব ছিলেন। বর্তমানে ইলিয়াস আলীর ইস্যু নিয়ে মাঠেও নামছেননা নেতারা। শুধু ইলিয়াস আলী নয় রাজনীতির যে কোন কৌশলগত প্রশ্নেই এখন আর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না সিলেট বিএনপির নেতারা। অথচ ৩ বছর আগে সিলেটে সবচেয়ে কৌশলী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিতি ছিল বিএনপির। বিএনপি নেতারা এখন মানছেন ইলিয়াসবিহীন সিলেটে কোন আন্দোলন চাঙ্গা করতে তারা ব্যর্থ। আর সিলেটের কৌশলী বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন রাজনীতিতে উত্থান-পতন থাকবেই।
এ দিকে, আজ বৃহস্পতিবার ২ বছর পূর্ণ হল এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজের। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বাসায় ফেরার পথে ঢাকার বনানী থেকে ‘নিখোঁজ’ হন এম ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়ি চালক আনছার আলী। পরদিন ভোরে তাঁর গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’র জের ধরে তখন উত্তাল হয়ে ওঠেছিল পুরো সিলেট।
আজ নিখোঁজের ২ বছর পূর্তি উপল্েয জেলা ও মহানগর বিএনপি ব্যাপক কোন কর্মসূচি গ্রহন করেছেন বলে জানা যায়নি। তবে ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ বেলা ৩ টায় জিন্দাবাজারস্থ সিতারা ম্যানশন থেকে মিছিল বের করবে বলে জানান ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের একনেতা। আর জেলা বিএনপি বাদ সন্ধ্যা দরগা মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল গফফ্ার বলেন, নতুন কমিটিতে তাদের প্রানপ্রিয় নেতা সদ্য সাবেক জেলা সভাপতি নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্থান না হওয়া অত্যন্ত দুঃখ জনক। তিনি জানান, ইলিয়াস আলী কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-মহাসচিব হচ্ছেন। তার স্ত্রী লুনাকে জেলা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। ইলিয়াস আলী একদিন ফিরে আসবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করে গফফ্ার বলেন, সিলেট বিএনপিকে প্রতিষ্টিত করতে ইলিয়াস আলী অকান্ত পরিশ্রম করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা বিএনপির আগামী কাউন্সিলে নিজে সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি  জানান, ইলিয়াস নিখোজের ২ বছর পূর্তি উপলে আজ কোন কর্মসূচি গ্রহন করেনি মহানগর বিএনপি। জেলা কমিটিতে নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে খুব শীঘ্রই দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব করা হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও ইলিয়াস মুক্তি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, সিলেট জেলা বিএনপিতে ইলিয়াস আলীর স্থান না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। তবে আমাদের প্রিয় নেতাকে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে পদোন্নতি দিয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের গুম নামক কারাগার থেকে ইলিয়াস আলী একদিন ফিরবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।