রানা প্লাজা ধস, ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারাও
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সাভারে বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় শুধু প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই অনুদান দেয়া হয়েছে সাড়ে ২২ কোটি টাকা। এছাড়া আহত-নিহতদের পরিবারকে আরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কিনা, তা নির্ধারণে কাজ চলছে এখনও।
তবে শুধু সরকারই নয়, বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ-ও খরচ করেছে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের বেতন, ক্ষতিপূরণসহ আনুসঙ্গিক খরচ রয়েছে। এর বাইরে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় পশ্চিমা ব্রান্ডগুলোর কাছ থেকে নতুন করে ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (সোয়া তিন কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন। এর আগেও অবশ্য বিভিন্ন ব্র্যান্ড হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব আবদুস সোবহান সিকদার বলেন, ‘‘শুধু প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকেই অনুদান হিসেবে ২২ কোটি ১৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও দাতা সংস্থা উদ্ধার কাজে খরচ করেছে চার কোটি ৬২ লাখ টাকা।” তিনি বলেন, আরো কিছু অনুদান লাগবে কিনা, তা নির্ধারণে কাজ চলছে। তাঁর কথায়, সরকার এই ঘটনায় প্রথম থেকেই আন্তরিক। যখনই যা প্রয়োজন হয়েছে তা দিয়েছে।
সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় গুরুতর আহত ৩৬ জনকে সরকারি উদ্যোগে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে তিন কোটি ৯০ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ৭৯৮ জন নিহতের পরিবারের এক হাজার ৯৯ সদস্যকে ১২ কোটি সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া ১৬৪ জন নিহতের ২২৮ জন আত্মীয়কে দুই কোটি ৭৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক এমাজউদ্দীন চৌধুরী কায়কোবাদকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেয়া ও চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে এক কোটি ছয় লাখ টাকা। যদিও তাঁকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ১২ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে সরকার।
রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনায় আহতদের চিকিত্সার জন্য ২২টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিল হিসেবে এক কোটি ৪২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। ডিএনএ প্রোফাইলিং করতে সরকার দিয়েছে অর্ধ কোটি টাকা। এছাড়া উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দেয়া সেনাবাহিনীকে উদ্ধার কাজের খরচ হিসেবে দেয়া হয়েছে এক কোটি ২১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ঢাকা জেলা প্রশাসন উদ্ধার কাজে খরচ করেছে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিস পেয়ে ২৫ লাখ টাকা। আর ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার পেয়েছেন ২৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে উদ্ধার কাজে খরচ হয়েছে চার কোটি ৬২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা।
এদিকে শ্রমিক অধিকার সংগঠন গ্লোবাল ট্রেড ইউনিয়ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল, ইউএনআই, ক্লিন ক্লোদ্স ক্যাম্পেইন গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা যে ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যে উঠানো হয়েছে। আগামী ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের এক বছর পূর্তির আগেই সব অর্থ উঠানো সম্ভব হবে। এই অর্থ ভবন ধসে নিহতদের পরিবার এবং দুই হাজারের বেশি আহত শ্রমিককে দেয়া হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, যে ২৯টি ব্র্যান্ড রানা প্লাজার কারখানাগুলো থেকে পোশাক কিনতো তাদের মাত্র অর্ধেক এই অর্থ দিয়েছে। তহবিলটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যেসব ব্যান্ড রানা প্লাজা থেকে কিনতো তাদের অনেকের নিজস্বভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। ‘ক্লিন ক্লোদ্স ক্যাম্পেইন’-এর কর্মকর্তা ইনেকে জেলদেনরুস্ট বলেন, গত বছর এই ২৯টি ব্র্যান্ড যৌথভাবে ২২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এ আয়ের মাত্র ০.২ ভাগ এর চেয়েও কম ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। অথচ এসব শ্রমিকের শ্রমেই তাদের বড় অঙ্কের মুনাফা হয়েছে।
ব্রিটিশ বস্ত্র রিটেইলার প্রাইমার্ক জানায়, গত মাসে তারা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিপূরণের জন্য অতিরিক্ত ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে নয় মিলিয়ন ডলার সরাসরি রানা প্লাজার পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ৫৮০ কর্মচারীকে এবং বাকি এক মিলিয়ন তহবিলে জামা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য যেসব ব্র্যান্ড অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে – ক্যানাডার লোব্লাও, ব্রিটেনের বঁ মার্শে এবং প্রিমিয়ার ক্লোদিং, ডেনমার্কের মাসকট, স্প্যানিশ এল কর্তে ইংলেস, ম্যাংগো এবং জারার ইন্ডিটেক্স।