আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ সবাই আমাদের বন্ধু : শফী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ হেফাজত নেতা আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন, আজ সন্তানের হাতে মাতা-পিতা খুন হচ্ছেন, ভাইয়ের হাত রঞ্জিত হচ্ছে সহোদরের রক্তে, মা তার সন্তানকে হত্যা করে নতুন নিষ্ঠুরতার জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। উঠতি বয়সী তরুণ-যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নানা রকম পাপ-পঙ্কিলতায় সমাজকে কলুষিত করছে, আশরাফুল মাখলুকাত মানবসন্তানেরা আজ অমানুষের কাতারে শামিল হচ্ছে। আজ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে হেফাজতে ইসলামের শানে রেসালত সম্মেলনে আহমদ শফী একথা বলেছেন।আহমদ শফী বলেছেন, ‘হাসিনা সরকার, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ সবাই আমাদের বন্ধু। এদের সঙ্গে কোনো আদাবত (শত্রুতা) নাই। কেউ যদি বলে, হাসিনা সরকার, ছাত্রলীগ আমাদের দুশমন, এই বুঝাটা ভুল হবে। এদের কাউকে কোনো দিন আমি গালি দেই নাই।’ হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত দুই দিনব্যাপী শানে রিসালত সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফী বলেন, ‘আমরা ভালো হলে সরকার ভালো হবে। আমরা যদি খারাপ হই, সরকার খারাপ হবে। আমাদের ওপর জুলুম অত্যাচার চালাবে।
তিনি বলেন, সমাজ থেকে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি হারিয়েছে। এ জন্য পরস্পরকে দোষারোপ না করে নিজেরা সংশোধন হওয়া জরুরি। ব্যক্তির আত্মশুদ্ধি, পরিবারে পরিপূর্ণ ইসলামী আদর্শ ও অনুশাসন চর্চা করা নেহায়েত প্রয়োজন। কুপ্রবৃত্তিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, শুদ্ধ ও সংযত জীবনযাপনের মাধ্যমে মহানবী সা. ও সাহাবায়ে কেরামের সেই সোনালি যুগ আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির বলেন, আমাদের ঘোষিত ১৩ দফা ইমানি দাবি বাস্তবায়িত হলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা শূন্যে নেমে আসবে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, নারী তার মর্যাদা ও প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে। ঘরে-বাইরে-কর্মস্থলে সর্বত্র পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারবে। আপন-পর কারো দ্বারা নিগৃহীত হবে না।
আমরা আগেই বলেছি, এখনও বলছি হেফাজতে ইসলামের দাবি ও ইমানি আন্দোলনকে বুঝতে চেষ্টা করুন, হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করুন, অযথা মিথ্যাচার করবেন না। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আমরা রাজনীতি করছি না, আমাদের কোনো রাজনৈতিক কোনো লক্ষ্য নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রে যেখানেই মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয়নবীর মান-মর্যাদায় আঘাত হানা হবে এদেশের ইমানদার, নবীপ্রেমিক জনগণকে নিয়ে সেই অপতৎপরতা রুখে দিতে আমরা আজীবন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিনি কেবল আল্লাহ ও রাসূলের দুশমন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আমরা ময়দানে নেমেছি। কাউকে ক্ষমতায় আনা কিংবা ক্ষমতাচ্যুত করা আমাদের কাজ নয়, উদ্দেশ্যও নয়। মিডিয়া, সাংস্কৃতিক অঙ্গণ কিংবা সমাজে আল্লাহ ও রাসূলের শত্রু উগ্র নাস্তিকদের অপতৎপরতা দেশের ইমানদার জনগণ বরদাশত করবে না। হেফাজত নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে কিয়ামত পর্যন্ত লড়ে যাবে।
বিশেষ অতিথির ভাষণে মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, বর্তমান সময়ে নানাদিক থেকে নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারা ব্যাপক প্রসার ঘটছে। বৃহত্তর মুসলিম দেশ হিসেবে সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস না রাখা সরাসরি কুফরী। মহানবী সা.-কে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা জঘন্যতম অপরাধ। এই অপরাধীদের শাস্তি না হলে আল্লাহর আযাব থেকে কেউ রেহাই পাবে না। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের কারণে দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তারা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকিস্বরূপ। তিনি বলেন, দেশের কওমী মাদরাসাগুলো মুসলমানদের সন্তানদেরকে আদর্শ ও নৈতিকমূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দলবাজির স্থান নেই। কুরআন-হাদিসের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে জনগণের ইমান আমল সংশোধনে লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠান যুগযুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী আরো বলেন, ছয় এপ্রিল লংমার্চে চল্লিশ লক্ষ মানুষের, ৫ মে পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের সমাবেশ প্রমাণ করেছে, এদেশের মানুষ রাসূল প্রেমিক। যারা রাসূলের অবমাননা করবে, যারা রাসূল সা.কে নারীলোভী বলবে, লুচ্ছা ইত্যাদি অবমাননাকর কটূক্তি করবে; তাদের এই বেয়াদবি বরদশত করা হবে না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি রাসূলের সাথে যারা বেয়াদবি করে জাতীয় সংসদে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিÍ মৃত্যুদ-ের আইন পাশ করতে হবে। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী এনজিও গরিব-অসহায় লোকদের ধর্মান্তরিত করার মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে।