কানাইঘাটে জামায়াত নেতাদের লাগামহীন অপকর্মে তৃণমূলে চাপা ক্ষোভ
কানাইঘাট (সিলেট) সংবাদদাতা: সিলেটের কানাইঘাটে কয়েকজন বিতর্কিত দায়িত্বশীল পর্যায়ের জামায়াত নেতা কর্তৃক রাজনৈতিক মামলা পরিচালনা, সরকার দলীয়দের হাতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা, দলীয় কর্মসূচী বাস্তবায়নসহ নানা অজুহাতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ও গোঁপনে আদায়কৃত অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ, ক্ষতিগ্রস্থ নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর না নেওয়া ও দলীয় তৎপরতায় সাড়া না দিয়ে নামে বেনামে বিভিন্ন সুদি কোম্পানি খুলে ব্যবসায় জড়িয়ে সংগঠন সম্পর্কে নেতিবাচন ধারণার জন্ম দেওয়ায় এনিয়ে স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিশেষ করে বড় বড় রাজনৈতিক মামলাগুলোকে পুঁজি করে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে নিরিহ নেতাকর্মী ও সমর্থকদেও কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায়ের ঘটনা ফাঁস হওয়ায় কানাইঘাট জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিককালে এনিয়ে দলের নেতাকর্মীরা মুখ খোলতে শুরু করায় দলের সাধারণ সমর্থকদের তোপের মুখে বিতর্কিত এসব নেতারা অনেকটা আত্মগোঁপনে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। যে কোন সময় তারা বিক্ষোব্ধ নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্চিত হতে পারেন বলে ধারণা অনেকের।
জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার সাথে আলাপ করে ও সরেজমিন ঘুরে জানাযায়, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বৃহত্তর সিলেটে জামায়াতের শক্তঘাটি বলে চিহ্নিত কানাইঘাটে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উপর্যুপরী মামলা দায়ের করা হয়। বিভিন্ন সময়ে উপজেলার ২শতাধিক নেতাকর্মী মাসের পর মাস কারা নির্যাতনের শিকার হন। আর এই সুযোগে কানাইঘাটের বাসিন্দা সিলেট জেলা পূর্বের জনৈক বিতর্কিত জামায়াত নেতার যোগসাজসে উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওঃ আব্দুল করিম, নায়েবে আমীর মাওঃ আব্দুল মালিক, সেক্রেটারী কামাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারী শরিফ উদ্দিন ও কানাইঘাট পৌর জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর মাষ্টার ফয়ছল আহমদ মিলে নিরীহ নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনার জন্য জমাকৃত অর্ধলক্ষাধিক টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করেন। বিদেশ থেকে শিবিরের সাবেক দায়িত্বশীলরা সংগঠনের নেতাকর্মীদের এমন দুরাবস্থায় লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠালেও তারা এসব টাকা মামলার কাজে ব্যয় না করে পুলিশকে ঘোষ দেয়ার কথা বলে নিজেদের পকেটে পুরিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদেও হাতে কানাইঘাট উপজেলা যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম খুঁন হলে এঘটনায় জামায়াত-শিবিরের অর্ধশত নেতাকর্মীদেও বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পুলিশি হয়রানির ভয়ে জামায়াত-শিবির এমনকি সাধারণ লোকজনও মাসের পর মাস ঘর ছাড়া ছিলেন। এ সুযোগে ঐ মামলাকে কেন্দ্র কওে বিশেষ কালকশনের নামে দেশ বিদেশ থেকে অন্তত ২০ লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে থানা পুলিশকে দেয়ার কথা বলে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। এমতাবস্থায় মামলার তদন্ত চলাকালে গত ১৭ ফেব্র“য়ারী সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইন্চার্জ মোঃ আব্দুল হাইকে এর দায়িত্বভার দেওয়া হলে টাকাগুলো আরো সহজে হজম করার সুযোগ হয় তাদের। এতেও বসে থাকেনি তারা। দলের নিরীহ কর্মী সমর্থকদের তালিকা তৈরী করে ঐ তালিকাটি গোয়েন্দা পুলিশের দাবী করে এবং এজাহার নামীয় আসামীদের কাছ থেকে ব্যাপক টাকা উত্তোলন করেন এসব নেতারা। সম্প্রতি জামায়াত নেতা ফয়ছলের মাধ্যমে ডিবি পুলিশকে ৬ লক্ষ টাকা ঘোষ দেয়া হয়েছে বলে দলের নেতাকর্মীদেও জানানো হয়। কিন্ত গত ২ জুলাই নজরুল হত্যা মামলায় জামায়াত-শিবিরের ২৩ নেতাকমীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হলে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আত্মসাৎকারীদেও বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেন দলের ভূক্তভোগিরা।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে দায়িত্বশীল পর্যায়ের একজন নেতা জানান, ‘বিগত সাড়ে ৫ বছরে কানাইঘাটে বিভিন্ন ইস্যুতে অর্ধ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। তবে এর অধিকাংশ টাকার কোন হদিস এখনো মিলেনি। বাকী টাকা সম্পর্কে মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা উপজেলা জামায়াতের সহ সেক্রেটারী শরিফ ও পৌর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর ফয়ছল আহমদের সাথে কথা হলে তারা কানাইঘাট থানার বদলী হওয়া কয়েকজন এস আইকে বিভিন্ন সময় এসব টাকা দিয়েছেন বলে জানান।’ এব্যাপারে অভিযোক্ত জামায়াত নেতা শরিফ উদ্দিন ও ফয়ছল আহমদের মুটোফোন (০১৭১২-৮৫৫৫৮৯ ও ০১৭১১-৯১২১৭২) এ বার বার চেষ্ঠা করেও পাওয়া যায়নি।