হারিছ চৌধুরী জটিল রোগে আক্রান্ত, চিকিৎসা নিচ্ছেন ইরানে

haris chowdhurসুরমা টাইমস রপোর্টঃ এক সময়ের দুর্দণ্ড প্রতাপশালী বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এখন চর্মরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ইরানের একটি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন! দুদকের দুর্নীতি মামলার ফেরারি আসামি হয়ে গোপনে বিভিন্ন দেশ ঘুরে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্বে থাকা বিএনপির সাবেক এই যুগ্ম মহাসচিব বর্তমানে ইরানে অবস্থান করছেন। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন যুক্তরাজ্যে। নর্থ লন্ডনের উডগ্রীনের বিলাসবহুল একটি বাড়িতে হারিছ চৌধুরীর তাঁর স্ত্রী জোসনা বেগম, ছেলে নাঈম চৌধুরী জনি এবং মেয়ে সামিরা তানজিম বসবাস করছেন। হারিছ চৌধুরীর ছেলে লন্ডনে নরওয়েভিত্তিক একটি তেল কোম্পানিতে কর্মরত এবং মেয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত।
বিভিন্ন সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, হারিছ চৌধুরী ইরানে তার ছোটভাই ডা. আবদুল মুকিত চৌধুরীর আশ্রয়ে থাকলেও নিজের ব্যবসা এবং স্ত্রী সন্তানের অবস্থানের কারণে মাঝেমধ্যে তাকে লন্ডনে যেতে হয়।
হারিছ চৌধুরীরা চার ভাই, পাঁচ বোন। ছোট এক ভাই মারা গেলেও অন্য ভাইয়েরাও দেশের বাইরে থাকেন।
সূত্র মতে, হারিছ চৌধুরী বিদেশে পালিয়ে বেড়ালেও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এমনকি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও খোঁজখবর রাখছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে এলে দেশে ফিরে আসার ইচ্ছেও প্রকাশ করেন। ২০১২ সালের ৭ ডিসেম্বর হারিছ চৌধুরীর ছোটভাই আল-রাজি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আবুল হাসনাত চৌধুরী ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার দাফন সম্পন্ন হয় গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগর গ্রামে। ওই সময় হারিছ চৌধুরী ও তাঁর ছোটভাই আবদুল মুকিত চৌধুরী ইরান থেকে ফোনে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ক’বার কথা বলেন। এখনও মাঝে মধ্যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
বিএনপি আমলে হাওয়া ভবন ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দাপট খাটিয়ে সরকারী বাড়ি ও জমি দখল করা, নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি-পদায়ন, বড় বড় টেন্ডার পাইয়ে দেয়া, চাঁদাবাজি, মানিলন্ডারিং, বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া নিজ বাড়িতে হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রাখাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের তালিকায় নাম উঠে আসে হারিছ চৌধুরীর। এমনকি জঙ্গী মদদসহ নানা অঘটনেও তার নাম যুক্ত হয়। এ কারণে ওয়ান ইলেভেনের পর খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন হারিছ চৌধুরী। এ কারণে তাঁকে ধরতে যৌথবাহিনী সারাদেশে তল্লাশি চালায়। কিন্তু নিজের অপকর্মের পরিণতি কি হতে পারে তা আঁচ করতে পেরে আগে ভাগেই সিলেট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রথমে ভারতের করিমগঞ্জে মামার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে পরে লন্ডনে চলে যান। এক সময় লন্ডনেও নিজেকে নিরাপদ মনে না করে তিনি চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ওখানে কিছুদিন থাকার পর চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। এর পর আরও নিরাপদে থাকার জন্য চলে যান ইরানে। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ইরানে আত্মগোপনে থাকা হারিছ চৌধুরী একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি। এ ছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রথম ৫০ দুর্নীতিবাজের তালিকায় পাঁচ নম্বরে হারিছ চৌধুরী। দুদক তার বিরুদ্ধে বেশক’টি মামলা করে। কয়েকটি মামলায় সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশীটে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
হারিছ ছৌধুরীর ১৮টি বাড়ি থাকলেও তিনি গুলশান-২ এর ৫৩ নম্বর সড়কে ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের কাছে ৬ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। সরকারী এ বাড়িটি তিনি ক্ষমতার দাপটে দখল করেছিলেন। অভিজাত এ বিশাল বাড়ির আঙিনাতেই তিনি অবৈধভাবে হরিণ পুষেছিলেন। দোতলা ওই বাড়িটি এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নামে। এ ছাড়া আগেই হারিছ চৌধুরী তাঁর স্থাবর সম্পত্তির বেশিরভাগই তার ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীর নামে দিয়ে দিয়েছেন।