ছাত্রীকে কটুক্তি : শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে উত্তপ্ত শাবি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ছাত্রীকে জড়িয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাছির উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত, বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে স্বপদ থেকে অব্যাহতি, যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত আবু সালেহ’র স্থায়ী বহিষ্কার, ও সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আতিকুর রহমানকে অপসারণের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। একই দাবিতে টানা ৪দিন বিােভ মিছিল, বিভাগের কাস ও অফিসে তালা, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন শেষে গতকাল উপাচার্যকে আবারো স্মারকলিপি দিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন এবং আগামী ১০মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেও আলটিমেটামে লোকপ্রশাসন বিভাগ এখন অচলাবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন আর বিভাগে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ক্যাম্পাসে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে (ভিসি ভবন) শিক্ষার্থীরা অবস্থান ধর্মঘট করে এবং উপাচার্যের সাথে দেখা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ কওে অচিরেই দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানায়।
জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবারো নতুন তিনদফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ‘ডি’ এর সামনে এসে জড়ো হয়। মৌন মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর সামনে এসে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। পরে শিক্ষার্থীদের ২০/৩০জনের একটি প্রতিনিধি দল সাড়ে ১২টায় উপাচার্যের সাথে দেখা করে তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। শিক্ষক নাছির উদ্দিনের হয়রানি ও নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীরা এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। শিক্ষার্থীদের এসব কথা শুনে উপাচার্য ও প্রক্টরকেও চোখ মুছতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের সময় সেখানে মেয়েদের গোসলের ছবি ভিডিও ও ছবি তুলেন শিক্ষক নাছির উদ্দিন। এছাড়াও দুপুরে মেয়েদের ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের কক্ষে উঁকি মারতেন এবং অনুমিত না নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করার অভিযোগ তুলেছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয় মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীরা সী বীচে গ্রুপ ছবি তুলার সময় তীর্যক ও আপত্তিকর মন্তব্য ছুড়তেন নাছির উদ্দিন। এছাড়াও শিক্ষা সফরের সময় মেয়েদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে দুইদিন আটক রেখেছেন ওই শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, যে মেয়েদের কাপড়ের ঠিক নেই তাদেরকে নিয়ে কিভাবে সেন্টমার্টিনে যাবে এসব বিষয়ে ছেলে শিক্ষার্থীদেও কাছে খারাপ মন্তব্য করতেন শিক্ষক নাছির উদ্দিন। অন্যদিকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ছেলে শিক্ষার্থীদের চরিত্র নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতেন তিনি। উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ দায়ের শেষে ৩দফা দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন।
দাবিগুলো হল- যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত আবু সালেহকে তদন্ত সাপেক্ষে স্থায়ী বহিষ্কার ও ছাত্রীদের সাথে অসদাচারণকারী সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আতিকুর রহমানকে বিভাগ থেকে অপসারণ ও মা। সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো ও বিভাগের শিার্থীদের সাথে একাডেমিকভাবে হয়রানিকারী ও ছাত্রীকে জড়িয়ে আপত্তিকর মন্তব্যকারী শিক সহকারী অধ্যাপক মো. নাছির উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে চাকুরীচ্যুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যৌন হয়রানির ঘটনায় বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা এবং আপত্তিকর মন্তব্যকারী শিকের প্রতি পপাতিত্বের জন্য বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে স্বপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া। শিার্থীদের অভিযোগ ও অনুযোগ শোনা শেষে উপাচার্য শিার্থীদেরকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া যৌন হয়রানি, আশ্রয়দাতা, প্রশ্রয়দাতা, আপত্তিকর মন্তব্যকারী ও বিভাগের নীরব ভুমিকায় যাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদেও প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মার্চ বিভাগের ৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টারের এক ছাত্রী বিভাগের কর্মচারী আবু সালেহ কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হন। বিভাগের অফিসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওই ছাত্রীর হাত ধরে টেনে নিয়ে আপত্তিকর ইঙ্গিত করেন আবু সালেহ। পরে গত ৩১মার্চ বিষয়টি নিয়ে ওই ছাত্রী বিভাগীয় প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও কোন ব্যবস্থাই নেননি তিনি। শুধু তাই নয়, বিভাগের সভায় একজন সম্মানিত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো. নাছির উদ্দিন অভিযোগকারী ছাত্রী সম্পর্কে উল্টো আপত্তিকর মন্তব্য করলেও এতে নীরব থাকেন বিভাগের প্রধান সহযোগী অ্যধাপক আনোয়ারা বেগম।