তাহিরপুরে দলীয় অভ্যান্তরীন কোন্দলে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পরাজয়
কামাল হোসেন,তাহিরপুরঃ তাহিরপুরে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ মনে করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলীয় আভ্যান্তরীন কোন্দলকে বড়ইসু হিসেবে মনে করছেন ।গত ৩১ মার্চ তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুল ২৭৩০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দী হয়েছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুল হক পেয়েছেন ২০৩২৮ ভোট।আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন খান তিনি ১৪৫৯৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করেছেন।উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়,বিগত ২০০৩ সালের ১লা মার্চ উপজেলা আওয়ামীলীগ কমিটি গঠনের শুরু থেকে ১০ মার্চ ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামীলীগ এর যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক আলী মর্তূজা সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন খান এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার ও কুৎসা রটানোতে লিপ্ত ছিলেন।এমনকি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশীল ঘোষনার পূর্বে ২৫ শে ফেব্রুয়ারী জনৈক আলী মর্তূজা তাহিরপুর বাজারের তার ব্যাক্তিগত কার্যালয় দাবী করে সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন খানের বিরুদ্ধে ৫টি বিষয়ের উপর বিভিন্ন অপকর্মতুলে স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।উক্ত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত কপি স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ পায় এবং এর কপি দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখিত অভিযোগগুলো ছিল (১) ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আবুল হোসেন খান পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করেন।তৎকালীন পাকিস্থান সরকারের নিদেশে গঠিত থানা শান্তি কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।(২) ১৬.৯.৭১ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা সাফির উদ্দিনের বাড়ীতে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করেন। যাহা বিগত ১৮.১২.২০১০ ইং তারিখে সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আবুল হোসেন সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ আইনের আওতায় মামলা দায়ের করেন।(৩) এ সংক্রান্ত বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুছ ছোবাহান আখঞ্জি গত ২২.২.২০১১ তারিখে এক বর্ধিত সভা আহবান করেন।উক্ত সভায় আবুল হোসেন খানকে সাধারন সম্পাদক এর পদ থেকে বহিস্কার করে যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক আলী মর্তূজাকে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত হয়।এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ৬.৩.২০১১ তারিখে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমাদান করা হয়।
(৪) ২৯.১১.২০১২ ইং তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী বরাবরে আবুল হোসেন খানের বিরুদ্ধে লুটপাট ও চাঁদাবাজি ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ পত্রিকায় শিরোনাম হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে দাবী জানিয়ে আবেদন করা হয়।
(৫) একই বিষয়ে ১৯.২.২০১৪ ইং তারিখে দলীয় সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক বরাবরে আর একটি আবেদন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিশেষে যুদ্ধাপরাধী,চাঁদাবাজ,সন্ত্রাসী আবুল হোসেন খানকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষনা করা ঠিক হবে না তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে নাম ঘোষনার দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন সমাপ্তি করেন।সংবাদ সম্মেলনের ছায়ালিপি সকল গণমাধ্যম ও দলীয় কর্মীদের মাঝে বিতরন করা হয়। এ অবস্থায় যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আলী মর্তূজা নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করলে সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন খা তার সাথে সমন্বয় করে সুকৌশলে আলী মর্তূজার মনোনয়ন প্রত্যাহার করান এবং তার নির্বাচন পরিচালনার জন্য তাকে এবং দলের সভাপতি আব্দুছ ছোবাহান আখঞ্জিকে নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব প্রদান করেন।ফলে আওয়ামীলীগের মূল ধারা,সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।যাহা নির্বাচনে ভরাডুবির অন্যতম কারণ হিসাবে তৃণমূল কর্মীরা মনে করেন।
বিশেষ করে বিগত সংসদ নির্বাচনে দলের যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তাদের দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা করা হয়। এতে করে দলের মূল ধারার কর্মীরা হেয় পতিপন্ন হয়।যাহার কারণে দলের তৃণমূল কর্মীরা সংসদ নির্বাচন থেকেই বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়।অপরদিকে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা হতাশ হয়েছেন।
এছাড়া স্থানীয় সাংসদ নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ না নেয়ায় প্রার্থীর অন্যতম ভরাডুবির কারন।