চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতার আধিপত্যের দ্বন্ধে জগন্নাথপুরে রানীগঞ্জে ইউনিয়নের কার্যক্রমে স্থবিরতা
আলী আহমদ, জগন্নাথপুর থেকে: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মজলুল হক ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সুন্দর আলীর মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্ধে কারণে পরিষদের কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। যে কারণে ভিজিডির চাল বিতরণ কার্যক্রম এ ইউনিয়নে স্থগিত রাখা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মজলুল হকের সাথে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সুন্দর আলীর আধিপত্যর দ্বন্ধ রয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এদ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করে । সর্বশেষ গত ৪ মার্চ রানীগঞ্জে বসন্ত মেলার আয়োজন নিয়ে এ দুই নেতার দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারণ করে। চেয়ারম্যান মজলুল হকের নের্তৃত্বে কলেজের উন্নয়ন ও সুন্দর আলীর নের্তৃত্বে এলাকার উন্নয়নের নামে একই সময় ও দিনে একস্থানে মেলা আয়োজন করায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে প্রশাসন মেলার অনুমতি না দিয়ে মেলাভেঙ্গে দেয়। ৫ মার্চ রানীগঞ্জ বাজার থেকে ভিজিডির ২৩ বস্তা গম আটক করা হলে সুন্দর আলীর নের্তৃত্বে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গমগুলো আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন ৬ মার্চ উপজেলা মহিলা পরিষদের অফিস সহকারী ননী গোপাল দাস বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় আটপাড়া থানার টেংগা গ্রামের ইসমাইল আলীর ছেলে তৌহিদ মিয়া, শফিকুর রহমান ও ইসমান মিয়া নামে তিনজনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা রানীগঞ্জ বাজারে দিনমজুরের কাজ করেন। এঘটনায় পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গর্ন¦বপুর গ্রামের মনফর আলীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মনফর আলী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ইউপি সচিব মুকুল রঞ্জন দাসের কথায় গমগুলো ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে বের করে দেয়ার কথা জানান। তার কথামতো মঙ্গলবার গভীর রাতে পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে গ্রেফতার করে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। অপরদিকে সুন্দর আলীর ভাতিজা ইউপি সদস্য আব্দুল তাহিদ জুয়েলের নের্তৃত্বে ১০ ইউপি সদস্য গত ৯ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে চেয়ারম্যান মজলুল হকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গ্রেফতার ও ইউপি সদস্যদের সাথে চেয়ারম্যানের দ্বন্ধের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এপ্রিল মাসের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত ভিজিডির চাল সকল ইউনিয়নে বিতরণের সিদ্ধান্ত হলেও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চাল বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বরাদ্দ নিয়ে মূলত ইউপি চেয়ারম্যান ও সুন্দর আলীর মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ রানীগঞ্জ ইউনিয়নে খাবিকার ৮ টনের একটি বরাদ্দ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পিআইসি নিয়ে তাদের মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্ধ চলছে। খাবকিার বরাদ্দ সুন্দর আলীর বাধা উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান মজলুল হক নিজে কমিটি দিয়ে নিয়ে গেলে এদ্বন্ধ প্রকট আকার ধারণ করে। যার জের ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রানীগঞ্জ এলাকায় তিনটি পিআইসির মধ্যে একটি পিআইপিসর কমিটিতে চেয়ারম্যান মজলুল হকের নের্তৃত্বে কাজ করছেন। অপর দুটির মধ্যে একটিতে সুন্দর আলীর ভার্তিজা ইউপি সদস্য আব্দুল তাহিদ জুয়েল সভাপতি ও সুন্দর আলী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। অপর কমিটি এ দুনেতার দ্বন্ধে এখনও ঝুলে আছে।
এদিকে রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কাওছর উদ্দিন ও মমরাজ হোসেন রাজ এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় তাদের সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজলুল হক বলেন, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের উন্নয়ন নিয়ে সুন্দর আলীর অনৈতিক হস্তপেক্ষ উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্থ করছে। তিনি নিজেকে আওয়ামীলীগের বড় নেতা দাবী করে ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে ইউনিয়নের সকল উন্নয়ন কাজ নিজে করতে চান। আমাদেরকে উনার আওয়ামীলীগ মনে হয়না। আমি ১৯৭০ সাল থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। আর তিনি আওয়ামীলীগ করেন ১৯৯০ সালের পর থেকে।
অপরদিকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সুন্দর আলী তার বিরুদ্ধে আণিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার আমি নয়, যে আমার কারনে ইউনিয়নেয়র কার্যক্রম স্থগিত হবে।
চেয়ারম্যান মজলুল হক বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী স্থানীয় সাংসদ অর্থ প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রভাব বিস্তার করেন। তার কারণে ইউনিয়নের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পরিষদের সদস্যরা তার অনিয়ম দুনীর্তির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে। আমার সাথে কোন বিরোধ নেই।
উপজেলা মহিলা পরিষদের কর্মকর্তা পপি মোদক বলেন, রানীগঞ্জ ইউনিয়নে চলতি মাসের বরাদ্দকৃত ভিজিডির চাল বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেশে আসার পর এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃত গ্রাম পুলিশের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিত্বে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ হারুণ অর রশীদ বলেন, ইউপি সদস্যদের লিখিত অভিযোগের বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। যেহেতু ওই ইউনিয়নে সমস্য চলছে আপাতত ইউনিয়নের ভিজিডির বরাদ্দ স্থগিত রাখা হয়েছে।