বালাগঞ্জে খুন হওয়া ইমাম ও অটোরিক্সা চালকের দাফন সম্পন্ন
উভয় পরিবারে মধ্যে চলছে শোকের মাতম : জনতার ঢল : ইমামের শালিসহ ২জনকে আসামি করে মামলা
শাহ মো. হেলাল, বালাগঞ্জ: বালাগঞ্জে খুন হওয়া ইমাম ও অটোরিকসা চালকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দু’দফা জানাযা শেষে নিহতদের পারিবারিক কবর স্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। প্রথম জানাযা বালাগঞ্জের ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়ে রাত ৮ টায় অনুষ্টিত হয়। সর্বসাধারনের অংশ গ্রহনে অনুষ্টিত জানাযার নামাজে বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দাল মিয়া, ভাইসচেয়ার চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী আছগর, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনহার মিয়া, বালাগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মতিন, বোয়ালজুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল নুর, সমাজ সেবী নাছির উদ্দিন. সিরাজুজ্জামান মঙ্গু, শেখ জামাল আহমদ খলকু, মাওলানা আসিকুর রহমান, মো. জুনেদ মিয়াসহ এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারন এবং বিভিন্ন গনমাধ্যমের কর্মীরা শরিক হন। রাতে ২য় জানাযার বোয়ালজুড় বাজারে শেষে উপজেলার খারমা পুর গ্রামে নিহত ইমামের ও বালাগঞ্জ্ সদর ইউনিয়নের কাশীপুর গ্রামে চালক আরশ আলীর দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
এ হত্যা কান্ডে ঘটনায় ইমামের শালী আফিয়া বেগম (৪২), তার ছেলে মারজানুল আলম শিমুল (২২)সহ অঞ্জাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত ইমামের ছোট ভাই আব্দুল খালিক বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার বালাগঞ্জ থানায় এ মামলা করেন। মামলা নং ১৬/তারিখ ২৪/১০/২০১৪ইং।
এদিকে চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনায় জনমনে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় বালাগঞ্জ পুর্ব বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ আব্দুল হামিদ ওরফে আব্দুস শুকুর কালা হুজুর’র নির্মম এ হত্যা, হত্যার রহস্য অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাঁরা ইমামের ভাল চরিত্র, বয়স কোনটাই রহস্যের সাথে মিলছে না বলে মন্তব্য করে এ খুনের ঘটনাকে বালাগঞ্জের ইতিহাসে সর্বকালের মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। দীর্ঘদিন যাবত কবিরাজি করার সুবাদে এলাকায় ইমাম সাহেবের অনেক ভক্ত অনুসারি রয়েছেন। এ হত্যাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই হুজুর সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রদান করা হয়েছে বলে ভক্ত অনুসারি মন্তব্য করেছেন। আলাপকালে নিহত ইমামের ছোট ভাই আব্দুল খালিক কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ভাইয়ের মোটা অংকের টাকার আত্মসাত করার জন্য তাকে খুন করা হয়েছে। আমি খুনদের ফাসি চাই। ইমাম ও চালকের উভয় পরিবারে মধ্যে চলছে শোকের মাতম।
উল্লেখ্য বালাগঞ্জ পুর্ব বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ইমাম হাফেজ আব্দুল হামিদ ওরফে আব্দুস শুকুর কালা হুজুর (৫৫) ও অটোরিক্সা চালক আরশ আলী (২৫) গত ১৮ অক্টোবর রাতে নিখোজ হন। এর পর থেকে নিখোজদের আত্মীয় স্বজনদের দফায়-দফায় জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের বাড়ীতে পুলিশের পক্ষ থেকে গোপন তল্লাশী করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিকরা পুলিশকে তথ্য দেয় যে, হুজুর প্রায়ই রাতের বেলা তিনির শালীর বাড়ীতে যেতেন এবং শালীর বড় ছেলে মারজানুল আলম শিমুল সার্বক্ষনিক হুজুরের সাথে থাকত। সে হুজুরের আশয়-বিষয়সহ অর্থনৈতিক বিষয় দেখাশুনা করত। নিখোজ হওয়ার ছয় দিন পর নিখোজ দুজনের লাশ উদ্ধার করা বৃহস্পতিবার সন্ধা ৬টায় নিখোঁজ ইমামের নিজ শালীর বসত ঘরের অবহৃত একটি বাথরুমের ভিতরে কবর দেয়া অবস্থায় ইটের ঢালাই ভেঙ্গে ইমাম ও চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ইমামের শালী আফিয়া বেগম (৪২), তার ছেলে মারজানুল আলম শিমুল (২২), শাকিল (১৭) এবং মেয়ে শারমিন (১৫) কে আটক করা হয়। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে খুনিরা অকপটে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। তবে অনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারনে খুনিরা এক সাথে দুটি হত্যা কান্ড ঘটাতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছে পুলিশ।