কোরবানির গোস্ত কিনতে ভিক্ষুকবাজারে ক্রেতাদের ভীড়
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ত্যাগের সুমহান আর্দশ নিয়ে সোমবার পালিত হল মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মিলন মেলা ঈদ-উল আজহা। আর এ মিলন মেলার প্রধান আর্কষণ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পশু কোরবানী করা। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরিদ্র অসহায় অনেক মানুষই কোরবানির গোস্ত সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু এখানেই তা শেষ নয়! বরং সেই কোরবানির গোস্ত বিক্রি করার জন্য প্রতি বছর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রেলগেইটে বসে অস্থায়ী মাংসের বাজার। ওই বাজারের বিক্রেতারা হলেন ভিক্ষুক ও দরিদ্র মানুষ। আর ক্রেতারা হলেন বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টের মালিক ও স্বল্প আয়ের মানুষ। তবে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে এ বাজারটি খুবই পছন্দনীয় ও গুরুত্ত্বপূর্ন। আত্মমর্যাদাবোধের কারণে তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করতে পারেন না। তাই সেখান থেকে ক্রয় করে পরিবারবর্গ নিয়ে কিছুটা হলেও কোরবানির আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। অস্থায়ী গোস্তের বাজারে প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা।
ঈদের দিন বিকেল ২টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে গোস্ত বিক্রির এ অস্থায়ী বাজার। তবে অবিক্রিত গোস্ত হলুদ ও মরিচ দিয়ে সিদ্ধ দিয়ে ঈদের দ্বিতীয় দিন আবার নিয়ে আসা হয় ওই অস্থায়ী গোস্তের দোকানে। ভোর থেকে দিনভর চলে আবারো এ বাজার। রেলগেইট ছাড়াও কদমতলী পয়েন্ট, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, বন্দর বাজার ও আম্বরখানায় বসেছে অস্থায়ী বাজার। তবে রেইগেইটের বাজারটি সবার কাছে প্রসিদ্ধ। নগরীর রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা এই সুবাধে স্বল্প মূল্যে অধিক গোস্ত ক্রয় করে ব্যবসার জন্য সংগ্রহ করছেন। ঈদেও দিন গোস্তের অস্থায়ী বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ভিক্ষুক বাজারের অস্থায়ী ব্যবসায়ী রুবেল জানান, রেলগেইটের ভিক্ষুক বাজারে অস্থায়ী গোস্তের দোকান বসেছে প্রায় সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ। বাজারে বিভিন্ন খশাইর দোকানে গরুর গোস্ত প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা। কিন্তু এ বাজেরর চিত্র ভিন্ন। অস্থায়ী বাজারে কেজি হিসেবে গোস্ত বিক্রি করা নানা সমস্যা। তাই কেজি দেড় কেজির গোস্ত ভর্তি এক ব্যাগ বিক্রি করছেন ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। গরুর একটা মাথা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, খাসির মাথা একটা ১০০ টাকা, গরুর লেজ প্রতি পিছ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর ৫ থেকে ৭ কেজি ভর্তি গোস্ত বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
মৌলভীবাজারের লাকসাম থেকে আসা সুমন জানায়, প্রতি বছরের কোরবানীর ঈদে সে সিলেটে আসেন গোস্ত সংগ্রহ বিক্রির জন্য। এতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা তার আয় হয়।
নাম প্রকাশে নিম্নবিত্ত্ব এক ক্রেতা জানান, কোরবানি দেওয়ার সাধ্য তার নেই। ভিক্ষুক বাজারে কম মূল্যে ভালো গোস্ত পাওয়া যায়। তাই তিনি পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে কোরবানীর আনন্দ ভাগাভাগির জন্য ১৫ কেজি গোস্ত ১৭ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন।
বয়োজৈষ্ঠ ভিক্ষুক লালবানু জানান, সাড়ে ৪কেজি গোস্ত পেয়ে ৬শ টাকায় বিক্রি করেছেন।
নেত্রকোনার সুফিয়া বেগম (৫০) জানান, ১০ কেজি গোস্ত নিয়ে বাজে এসেছি। এতো গোস্ত ঘরে প্রয়োজন নেই, তাই বিক্রি করতে এসেছি। কারণ এই বাজারে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতা রয়েছেন। তাই বেশি মূল্য পাওয়ার আশায় বাজারে এসেছি।
সাইস্ত মিয়া নামের ভিক্ষুক বাজারের বিক্রেতা জানান, মাইনসের দ্বারে দ্বারে ঘুইরা গোস্ত সংগ্রহ করতে বালা লাগে না। তাই সস্তায় কিনে, কিছু লাভ ধরে আবার তা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। এতেই আমি অনেক খুশি। তিনি বলেন এ বাজার থেকে কিছু হোটেল ব্যবসায়ী ও হালিম ব্যবসায়ী দাম দিয়ে গোস্ত কিনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখেন।
তবে রেলগেইটের এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ভিক্ষুক বাজার থেকে গোস্ত শুধু আমরা অল্প কিনি। তবে অনেক অভিজাত হোটেলের মালিকরা এসে গোস্ত কিনে এখান থেকে নিয়ে যান।