সর্পরূপে জিনের দংশন!

Jhenidah-2সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অদৃশ্য সাপ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপার গ্রামবাসী। কিন্তু সাপটি এখনো কারো চোখে পড়েনি। মানুষের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে একটি জিন সর্পরূপ ধারণ করে দংশন করছে বলে ধারণা করছেন গ্রামবাসী।
তবে এলাকাবাসীর এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে, গত এক সপ্তাহে কথিত সাপের দংশনে এক জনের মৃত্যু ও অন্তত ৩০ জন নারী-পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
উপজেলার দুধসর ইউনিয়নের ভাটই ও নাকোল গ্রাম দুটি পাশাপাশি। গত ৩১ আগস্ট রাতে ভাটই গ্রামের মফিরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (১৭) সাপের দংশনে মারা যান। এরপর থেকে ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাপ আতঙ্কে এলাকার স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা অনেকেই স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী প্রিন্স বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এক সপ্তাহ আগে সাপের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। কয়েকজন মানুষের ক্ষত স্থান আমরা দেখেছি। এটা আদৌ সাপের কামড় নয়। তারা বিভিন্ন ওঝা, কবিরাজের কাছে গিয়ে অপচিকিৎসার ফাঁদে পড়ছে।’
এ সময় বিভ্রান্ত থেকে গ্রামবাসীকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
Jhenidah-3এলাকাবাসী জানান, ভাটই উত্তর পাড়ায় রাস্তার পাশে প্রকাণ্ড একটি কড়াই গাছ রয়েছে। কড়াই গাছটির উপর সম্প্রতি বজ্রপাত হলে ওই গাছটি মারা যায়। মরা গাছটিতে জিন থাকতো। গাছটি মরে যাওয়ায় মানুষের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে জিন সাপের রুপ ধারণ করে দংশন করছে। বেশ কয়েকদিন আগে সর্পরূপী জিনের দংশনে এক জন মারা গেছেন।
এলাকাবাসী আরো জানান, প্রতিদিন তিন থেকে চার জনকে সাপে কামড়াচ্ছে। কিন্তু এখনো তারা কোনো সাপ দেখতে পায়নি।
এদিকে, সাপে কামড়ানো এসব রোগীন চলছে ওঝার চিকিৎসা ও কবিরাজের তেল-পানি পড়া এবং ঝাড়ফুঁক। এ থেকে মুক্তি লাভের জন্য ওঝার চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষের মাঝে সিরনি বিতরণও করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অপূর্ব কুমার সাহা বলেন, ‘শৈলকুপায় সাপের কামড়ে একজন মারা গেছেন। অনেকে সাপের কামড়ে আহত হয়েছেন। কিন্তু আক্রান্তরা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ওঝার কাছে যাচ্ছে। এটা কোনো বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা নয়। এতে মানুষের ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।’
তাই প্রকৃতই যদি এটি সাপের কামড় হয় তাহলে এসব অপচিকিৎসার পরিবর্তে হাসপাতালে এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা আহ্বান জানান তিনি।
আক্রান্ত রোগীরা জানান, সাপে কামড়ানোর পর তাদের ক্ষত স্থানসহ শরীরে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। এমন যন্ত্রণা সহ্য করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য গ্রামের মানুষের পরামর্শে তারা ওঝার চিকিৎসা নিচ্ছেন।