অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে পোস্টবক্স : কর্মহীন ডাকপিয়ন
শিপন আহমদ, ওসমানীনগরঃ ‘ডাকপিয়নের একটি ডাকে ঘুম আমার ভাঙলো ও বুজি তোমার চিঠি এলো’- খ্যাতিমান শিল্পীর এই অমর সঙ্গীত এখন আর মানুষের মনকে নাড়া দেয় না। এমনকি সময়ের পরিক্রমায় এবং অমোঘ বাস্তবতার বিচারে এই গানের কথা আজ আর দৈনন্দিন জীবনে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। অথচ বেশিদিন আগের কথা নয়। সত্যিই মানুষ সেদিন কাক ডাকা ভোরে প্রিয়জনের হাতের একটি চিঠি বা অন্য কোন পত্রাদির জন্য ডাকপিয়নের অপোয় পথ চেয়ে থাকতেন। সে কি অপো, সে কি ব্যাকুলতা। শুধু তাই নয়। মানুষ তখন প্রিয়জন বা প্রিয় মানুষের খবর পেতে তার লেখা একটি চিঠি পাওয়ার সকালে-বিকেলে ডাক পিয়নের বাড়িতে ছুটোছুটি করতেন। এরপরও যখন আপনজনের কোন চিঠি বা অন্য কোন সংবাদ সংবলিত পত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি তখন তারা তাদের চিঠি আসতে পারে এই প্রত্যাশা থেকে ডাকপিয়নকে পোস্ট অফিসে খোঁজ নিতে বার বার অনুরোধ করতেন। বিশেষ করে তখন যাদের কোন আত্মীয়-স্বজন বিদেশে থাকতো তাদের কাছে ডাকপিয়নের হৃদয়ের কথাতো বলাই বাহুল্য। প্রাপকের হাতে বিদেশী কোন চিঠি তুলে দিতে পারলেই প্রাপক পিয়নকে বখশিষ দিয়ে খুশি করতেন। কেবল চিঠি নয়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রিয়জনদের পাঠানো টাকা-পয়সা বা অন্যান্য ডকুমেন্টসের জন্যও ডাকপিয়নের খুঁজতে হতো। অবশ্য ডাকপিয়নও তখন তার দায়িত্ব কর্তব্য যথারীতি পালন করতেন। অনেক সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাপকের কাছে তার কাঙ্খিত চিঠিপত্র, টাকা-পয়সা বা অন্য কোন ডকুমেন্ট পৌঁছে দিতেন। পাশাপাশি ওই সময় যারা প্রিয়জনের কাছে চিঠিপত্র বা অন্য কোন ডকুমেন্ট পাঠাতেন তারা ছুটে যেতেন কাঙ্খিত ডাকবাক্সের কাছে। ঝড়, বৃষ্টি ও রোদ উপো করে আপনজনের কাছে লেখা চিঠি ডাকবাক্সে পোস্ট করতে পারলে তবেই স্বস্তি আর তখন ডাকবাক্সগুলোও সবসময় লাল রঙে রাঙিয়ে বেশ যত্নে রাখা হতো। যাতে সহজেই তাতে মানুষের দৃষ্টি পড়ে। শুধু তাই নয়, সে সময় ডাকবাক্সে থাকা কোন চিঠিপত্র যাতে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট না হয় সে জন্য কোন কোন ডাকবাক্স বৃষ্টিমুক্ত রাখারও ব্যবস্থা নেয়া হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন তথা আধুনিক পদ্ধতির উদ্ভব হওয়ায় এখন আর প্রিয়জনের কোন খবরের জন্য ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকতে হয় না। প্রিয়জন পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই থাক না কেন মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে তার খবর নেয়ার পাশাপাশি তার সাথে যে কোন চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা যায়। আর তাদের সাথে টাকা-পয়সা লেনদেন করতেও এখন আর পোস্ট অফিস বা ডাকপিয়নের শরণাপন্ন হতে হয় না। নিমিষের মধ্যে অনলাইন, বিকাশ এবং এম ক্যাশসহ বিভিন্ন উন্নত প্রক্রিয়ায় টাকা-পয়সা লেনদেন করা যায়। সে কারণে এখন আর মানুষের কাছে ডাকপিয়নের কদর নেই। পাশাপাশি একই কারণে মানুষ এখন আর ডাকবাক্স বা পোস্ট অফিসে গিয়ে চিঠিপত্র পোস্ট করেন না। কেবল চাকরি বা অফিসিয়াল কিছু চিঠিপত্র বা অন্য কোন ডকুমেন্টস সরাসরি পোস্ট অফিসে গিয়ে অথবা ডাকবাক্সের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। ফলে সৃষ্ট এ পরিস্থিতিতে ডাকবাক্সের গুরুত্ব একদমই কমে যাওয়ায় সংশিষ্ট কর্তৃপও সেটির আর খুব যত্ন নেয় না। এমনকি ডাকপিয়নও ডাকবাক্সের নিয়মিত খবর রাখেন না। চলার পথে কখনও কোথাও ২/১টি ডাকবাক্স চোখে পড়লেও সেটি জরাজীর্ণ অথবা ব্যবহার অনুপযোগি। চিঠিপত্র পোস্ট করার অবস্থায় নেই। সব মিলিয়ে বলা যায় এখন আর ডাকপিয়নের যেমন কদর নেই, তেমনিভাবে ডাকবাক্সেরও যত্ন নেই।
উপজেলার বিভিন্ন পোষ্ট অফিসে কর্মরত একাধিক ডাক পিয়নরা জানান এক সময় আমাদের কদর ছিল । পিয়নদের মরগী জবাই করে বাড়িতে নিয়ে খাওয়ানো হত। এখন কালের বিবর্তনে আমাদের মর্যাদা কমে গেছে অফিসে গিয়ে কাজ না থাকায় বসে থাকতে হয়।