কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

HE the HC speaking_2সদেরা সুজন সিবিএনএ কানাডা থেকে।। যথাযোগ্য মর্যাদায় একুশে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৬ উদযাপন করেছে কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন। এ উপলক্ষ্যে ২১শে ফেব্রুয়ারী সকালে বাংলাদেশ হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার কামরুল আহসান। এ সময় শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও ফাতিহা পাঠ করা হয়।

Children performing_2 (1)২১শের সন্ধ্যায় অটোয়ার রিচলিউ ভ্যানিয়ার কমিউনিটি সেন্টারে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাই কমিশন। অনুষ্ঠানে সকলকে স্বাগত জানিয়ে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার কামরুল আহাসান বলেন, ১৯৫২’র মহান ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালী জাতির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। মাতৃভাষা রক্ষার সংগ্রামে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ আরও যাঁরা শহীদ হয়েছেন, যাঁরা সারা দেশে এ আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছেন – তাঁদের কাছে আমরা চিরঋণী। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই একে একে ‘৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবী, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং পরিশেষে ‘৭১ এর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তাই ‘৫২-র মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালী জাতির ইতিহাসে এতো গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ভাষা শহীদদের দিবস তথা ২১শে ফেব্রুয়ারী বিশ্বসভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করেছে যা আমাদের জন্য সারা পৃথিবীতে গর্বের বিষয়। তিনি নতুন প্রজন্মকে বিশেষত: প্রবাসে বসবাসরত বাঙালী শিশু-কিশোরদের মাঝে আমাদের ভাষা আন্দোলন এবং বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহিাস তুলে ধরার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।

HE the High Commissioner raising the National Flag half-mastঅনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘৫২-র মহান​ ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুথান, ১৯৭১ এর মহান​ মুক্তিযু​দ্ধের​সকল শহীদ এবং ‘৭৫ -এর কালো রাতে শহীদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারবর্গসহ সকল শহীদের স্মৃতির​ ​​প্রতি ​গভীর ​শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ঢাকা থেকে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সিলর নাইম আহমেদ, প্রথম সচিব দেওয়ান মাহমুদ, প্রথম সচিব মোঃ আলাউদ্দিন ভুঁইয়া এবং প্রথম সচিব অপর্ণা রাণী পাল।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়কে গান, নাচ ও কবিতার মাধ্যমে পরিবেশন করেন অটোয়ার শিল্পীবৃন্দ। একে একে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি?”, “সালাম সালাম, হাজার সালাম, সকল শহীদ স্মরণে”, ‘ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেছো প্রাণ, ভুলিনি আমরা”, তীর হারা এ ঢেউএর সাগর পাড়ি দিব রে” – গানগুলো। একক পরিবেশনায় ছিলো “সালাম নওজোয়ান, শহীদ নওজোয়ান”, “অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা”, “মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেবো না”, গানগুলো। আবৃত্তি করা হয় আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর “কোন এক মা কে” এবং মাহবুবুল আলম চৌধুরী’র একুশের প্রথম কবিতা “কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি”। শিশুশিল্পীরা পরিবেশন করে “ক/খ/গ/ঘ/ঙ, তোমরা যে ভাই লিখে গেছো বুকের রক্ত দিয়ে”, “রক্তে আমার আবার প্রলয় দোলা”, “মোদের গরব, মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা “, “বর্ণমালা ও প্রিয় বর্ণমালা”, “পলাশ ঢাকা, কোকিল ডাকা আমার এ দেশ ভাইরে” এবং “সেই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দাঁড়িয়ে” গানগুলো। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী অং সোয়ে থোয়াই, নার্গিস আক্তার রুবি, মইনুল আহসান, ডালিয়া ইয়াসমীন, আফরোজা খান লিপি, এবং সুপ্তা। আবৃত্তি করেন দেওয়ান মাহমুদ, শিউলী হক, গিয়াস ইকবাল সোহেল এবং জিল্লুর রহমান বাবু। যন্ত্রে ছিলেন তবলায় শুভঙ্কর পন্ডিত, বাঁশীতে শাহীন মাহমুদ, কী-বোর্ডে আরেফিন কবীর।​শিশু শিল্পীদের মধ্যে সঙ্গীতে সহীহ, চন্দ্রিমা, বর্ষন, এ্যালিসিয়া, আলিনা এবং ইস্টি। নৃত্য পরিবেশন করে শিশু শিল্পী লারিসা, পৃথা ও তাম্মি। অনুষ্ঠান গ্রন্থনা​,​ সঞ্চালনা​ ও সমন্বয়ে ছিলেন​ছিলেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব ​(বাণিজ্যিক)​ ​দেওয়ান​ মাহমুদ। অটোয়া ও মন্ট্রিয়েলসহ নিকটবর্তী শহরগুলোর ​দেড়-​শতাধিক বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কানাডীয় নাগরিক এ মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।