এ দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকান্ড: শাবি শিক্ষকের কাণ্ডে ক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা
ডেস্ক রিপোর্টঃ শাবি শিক্ষককের গাড়ি চাপায় দু’জন নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ প্রাণহানির ঘটনাকে নিছকই একটি সড়ক দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকান্ড হিসেবে অভিহিত করেছে শিক্ষার্থীরা।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং শিক্ষক ড. আরিফুল ইসলামের বিচার দাবি করেছেন তাঁরা।
রোববার সারাদিন শাবি ক্যাম্পাসে এ ঘটনা নিয়ে আলোচনায় মুখর ছিলেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকের এমন কাণ্ডের সমালোচনা করেছেন সকলেই। একইসঙ্গে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শিক্ষক ড. আরিফুল সমাজের উচ্চ পযায়ের ব্যক্তি হওয়ায় নিহতের পরিবার সুষ্ঠ বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
এদিকে, দায়ী শিক্ষকের সুষ্ঠু বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে সোমবার দুপুরে শাবি লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ের সামনে ‘মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ’ এর আয়োজন করেছে ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শাবিপ্রবি’।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে শাবি’র বিভিন্ন পেইজে শিক্ষককের ‘খামখেয়ালি’ আচরণের চরম ক্ষোভ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অনেকে প্রশ্ন রাখেন-, শাবি’র ভেতরের এক কিলোমিটার সড়কে সারাদিন শিক্ষক–শিক্ষার্থীসহ নানা শেণীর মানুষ চলাফেরা করে, তা জানা সত্ত্বেও ড. আরিফুল কেন এই সড়কে ড্রাইভিং শিখতে গেলেন?
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন- ‘এ ক্যাম্পাসে আরও কতকিছু দেখতে মিলবে। দিনে দিনে সবই উন্নত হবে। আজ এ ক্যাম্পাস ড্রাইভিং স্কুল হয়েছে, কাল হকি খেলার মাঠ হয়ে যাবে।’
সৈয়দ মুক্তাদির আল সিয়াম নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন- ‘ক্যাম্পাসে আজ দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কালকে আরও মরবে। এই সড়কে গতিসীমা ১৫ কি.মি/ঘন্টা নির্ধারিত থাকলেও। ১০/১২ গুণ বেশী গতিতে ভয় পাইয়ে দিয়ে বাতাস উড়িয়ে চলে যাওয়া মোটর সাইকেলগুলোর ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে তাদেরকে ধরে গাছের সাথে বেধেঁ নিজ হাতে পেটাবো।’
সাবিহা আরেফিন লিখেছেন-, গতিসীমা ১৫ কি.মি/ঘন্টা লেখা থাকলেও এই সড়কে এই নিয়ম মানে না। ভিসি’র গাড়িই তা মানে না।’
এদিকে, শাবি সাংস্কৃতিক জোটের সোমবারের মানববন্ধনের জন্য ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে। এই ইভেন্টের বর্ণনায় লিখা রয়েছে- ‘গত ২৩ জানুয়ারি, শনিবার সকালে শাবিপ্রবি’র প্রাণ ‘এক কিলো’তে সংঘটিত হয় ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনা! বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের খামখেয়ালির কারণে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে দুইজনকে। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। সচেতন নাগরিক মাত্রই বুঝবেন এটা নিতান্তই একটি সড়ক দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকান্ড! শিক্ষক মহোদয় গাড়ি চালনা শিখতে বেছে নিয়েছিলেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ককে!
আমরা ভেবেছিলাম একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি অন্তত পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিকট দায় স্বীকার করবেন! কিন্তু এ ঘটনার পর থেকেই পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী শিক্ষককে বাঁচাতে ও ঘটনা ধামাচাপা দিতে সুষ্ঠু তদন্ত করছেন না! আমরা এর তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা জানাই।
দায়ী শিক্ষকের সুষ্ঠু বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ২৫ জানুয়ারি, দুপুর সাড়ে বারোটায়, লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ের সামনে ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শাবিপ্রবি’ একটি ‘মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ’ এর আয়োজন করেছে।
সবাই চলে আসুন, কন্ঠে আওয়াজ তুলি! দায়ী ব্যক্তি যেই হোক না কেন, তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে!’
উল্লেখ, শনিবার শাবি প্রধান ফটকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. আরিফুল ইসলামের প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রাণ হারান দুজন এবং আহত হন তিন জন। ড. আরিফুল নিজের গাড়ি নিয়ে গাড়ি চালানো শিখছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।