প্রধানমন্ত্রীকে টার্গেট করে তাঁতীপাড়ায় জঙ্গিদের অবস্থান !
ডেস্ক রিপোর্টঃ বিকেল সাড়ে ৩ টা। প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউস থেকে জনসভায় যাবেন। এমন সময় ডিবি পুলিশের কাছে একটি তথ্য যায়, প্রধানমন্ত্রীকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যাওয়ার পথে টার্গেট করতে পারে জঙ্গিরা! সিলেট নগরীর ৪৭ নম্বর বাসায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে। একই খবর চলে যায় রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সিআইডি পুলিশের কাছে। খবরটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁতীপাড়ায় ছুটে যায় ডিবি পুলিশ, বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ, গোয়েন্দা দল ও সিআইডি কর্মকর্তারা। সেখানে ওই বাসাটির তৃতীয় তলার কক্ষ তল্লাশি করে পুলিশ। একটি ব্যাগ সতর্ককর্তার সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু ওটাতে কিছু টাকা ছাড়া কিছুই ছিল না। তবু প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলে কথা, সন্দেহের আওতায় রাখা হয় ওই বাসাটিকে। প্রধানমন্ত্রী সিলেট থেকে না যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাসাটিকে পুলিশ পাহারায় রাখা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, বাসাটির সামনে ডিবি ও সিআইডি পুলিশের দুটি দল। চারতলা বাসা। তৃতীয় তলায় একটি ব্যাচেলর কক্ষ ঘিরে চলছে তল্লাশি। বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশও ঘেরাও করেছে ওই কক্ষের বাসিন্দা আবু সুলতান আজাদ। তার কক্ষ তল্লাশি করে একটি কালো রঙের ব্যাগ ছাড়া কিছ্ইু পায়নি পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, বাসাটির মালিক আমেরিকা প্রবাসী সেলিম মিয়া। বাসা দেখাশোনা করেন তার বড় ভাই সিরাজ উদ্দিন ও কেয়ারটেকার আজিমুল হুদা। বাসাটির তৃতীয় কলার একটি কক্ষ ব্যাচেলর রুম হিসেবে ভাড়া নেন আবু সুলতান আজাদ। এখানে তিনি তার দুই ভাই ইমাদ ও সামাদ। আবু সুলতানের গ্রামের বাড়ি কুলাউড়া মোনোহরপুর গ্রামে। তার দুই ভাই সিলেটের একটি বেসরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশে পড়েন। আবু সুলতান আর এন টাইওয়ারে মানকো সিকিউরিটিজের হিসাব রক্ষক হিসেবে কাজ করেন।
জানতে চাইলে আবু সুলতান বলেন,‘ তার দুই ভাই গ্রামে। সকালে তিনি রুম বন্ধ করে অফিসে যান। বিকেলে তাকে পুলিশ ফোন করে বাসায় আসতে বলে। তারপর বাসা খুলে তল্লাশি হয়েছে। কিন্তু কিছুই পায়নি পুলিশ। বুঝতেছি না, কে বা কারা বাসাটির তথ্য দিল ?
বাসার কেয়ারটেকার আজিমুল হুদা বলেন,‘ আবু সুলতান দুবছর ধরে এখানে আছেন। আমরা সন্দেহমূলক কিছুই পাইনি। এখানে তার দুভাই নিয়ে তিনি থাকেন।’
ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আইন উদ্দিন জানান, তারা খবর পান এখানে জঙ্গিরা অবস্থান করছে। এসে তল্লাশি করেছেন। তবে, কিছুই পাননি। তবু পুলিশ মোতায়েন থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাসার ভেতর পুরোটা তল্লাশি করে পুলিশ। একটি ব্যাগে কিছু আছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তা-ও তল্লাশি করে দেখা হয়। কিন্তু আমরা কিছুই পাইনি। তবু নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী সিলেট ত্যাগের পর পুলিশ সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়।’
সিআইডি পুলিশের এএসপি গোপাল চন্দ্র বলেন,‘ খবর পেয়ে আমরাও এসেছিলাম। তবে, তেমন কিছুই পাইনি ওই বাসায়। তারপরও সাময়িক সময়ের জন্য সন্দেহের আওতায় কর্ডন করে রাখা হয় বাসাটি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন,‘ ওই বাসায় তিন ভাই থাকতো। এক ভাই তার কর্মস্থলে সকালে চলে যায়। বাকি দুজন কুলাউড়া গ্রামের বাড়ি ছিল। একজন কুলাউড়া থেকে সিলেটে আসার পথে ট্রেনে অবস্থান করছিল। সেখানে ওই বাসায় জঙ্গিরা থাকার কথা নয়। তাছাড়া তৃতীয় তলার ওই কক্ষটি তালাবদ্ধ করে আবু সুলতান কর্মস্থলে গিয়েছিলেন। ধারণা, করা হচ্ছে, এদের কোনো শত্রু ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। তবু প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলে কথা, বিষয়টি আরও গভীরে তদন্ত হচ্ছে।’