কমলগঞ্জ পৌরসভায় অন্তহীন নেই এর মাঝেও মানুষজন খুশী
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ পৌরসভা নির্বাচন। হালকা শীতের অলস দুপুর। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার প্রধান বাজার ভানুগাছ বাজারের একটি দোকানে ছোট জটলা। পরিচয় দিয়ে আলাপ শুরু হলো পৌরসভা ও নির্বাচন নিয়ে। ৭ নং বাসিন্দা আবুল মনসুর রোকেন নামের একজন বলে উঠলেন, ‘নামে পৌর শহর, কামে কিছু না। তবুও আমরা খুশী, একদিন হয়তো আমাদের সকল চাওয়া পূরণ হবে। উপস্থিত বাকিরাও তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করলেন।
কমলগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। পৌরসভাটি গঠন হয় ১৯৯৯ সালে। পৌরসভাটি “সি” শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। ২৯টি গ্রামের সম্বনয়ে ৯ টি ওয়ার্ডে বিভক্ত পৌরসভাটি ১৬ বছরেও এখানে পুরোপুরি শহুরে আবহ তৈরি হয়নি। পৌরসভার প্রধান সড়কটি ধরে এর আশপাশে দোকানপাট, সরকারি অফিস-আদালত ঘিরে শহরতলি ভাব আছে। কিন্তু শহর ছেড়ে বাহির হলে শহরের কোনো চিহ্ন চোখে পড়ে না। বেশির ভাগ বাড়িতেই গ্রামীণ গৃহস্থ পরিবেশ। ধান কাটা, ধানমাড়াই নিয়ে ব্যস্ত অধিকাংশ বাড়ির মানুষ।
পৌরসভার বাসিন্দা হিসেবে কেমন সেবা পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজু আহমেদ খাজা বললেন, এলাকার রাস্তাঘাট মোটামুটি ভালো। কিন্তু পর্যাপ্ত ড্রেন নেই, পয়:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। বর্ষায় অনেক জায়গায় পানি জমে। ভানুগাছ বাজার ছাড়া আর কোথাও সড়কবাতি নেই। এক প্রশ্নে ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফয়ছল আহমদ বলেন, শিশু কিশোরদের জন্য শিশু পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র নেই, থাকলে ভালো হতো। পয়:নিষ্কাষণ ও গ্যাস এর ব্যবস্থা করা ও জরুরী। এছাড়া এখানে কোন গণ শৌচাগার নেই, বাহির থেকে লোকজন আসলে বিড়ম্বনায় পরতে হয়। একই ধরনের প্রশ্নে ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুলতান উদ্দিন চৌধুরী জানান, সেবা কী পাচ্ছি তা আপনারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে আমি এটুকু বলতে পারি গ্রামের বাড়িতে যে লাউ ২০ টাকা, এখানে সেটি কিনতে হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শহর এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। আছে মশার উপদ্রব। পৌরসভায় চিত্তবিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ভালো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। গ্রামীন এলাকায় এখনো কিছু সড়ক এখনো কাঁচা। সাপ্লাইয়ের পানির ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া বাড়ছে মাদক সেবন,এত কিছু না থাকার পরও বাসিন্দাদের অনেকে খুশি তাঁদের পৌরসভা নিয়ে। কেউ কেউ আশাবাদী, যেহেতু পৌরসভা হয়েছে, তাই তাঁদের জীবনমানও দ্রুত আরও উন্নত হবে। খালেদ আহমেদ বাড়ির আঙিনায় তিনি ধানমাড়াইয়ের কাজ তদারকি করছিলেন। পৌরসভার বাসিন্দা হিসেবে বর্তমান সেবায় খুশি কি না এমন প্রশ্নে হেসে উত্তর দিলেন ভালোই তো। তবে গ্যাস দরকার।
কমলগঞ্জ পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার মোঃ বেলাল চৌধুরীর দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় ৯.৮৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ১৯৯৯ সালের“ সি ”শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল কমলগঞ্জ পৌরসভা। লোক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার। ভোটার ১১হাজার ৬শ ৬১ জন। পৌরসভার মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৭ কিলোমিটারই পাকা। ড্রেন আছে শুধু মাত্র ভানুগাছ বাজার এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটারের মতো। সড়কবাতি আছে ভানুগাছ বাজার এলাকায়। ১টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, যা পৌরসভার পার্শ্বে অবস্থিত। গণ শৌচাগার ১টি স্থাপন করা হয়েছে, যা উপজেলা পৌর চৌমুহনী এলাকায়। ১টি গরুর খামার, কয়েকটি স’মিল, কয়েকটি আইসক্রিম ফ্যাক্টরী, পোল্টিফার্ম, রাইস মিল, ব্যাংক-বীমা অফিস, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্টান ও আবাসিক এলাকা ছাড়া বাকি এলাকা কৃষি জমি। তিনি আরো বলেন, পৌর এলাকায় ভানুগাছ বাজারে ১টি কিচেন মার্কেট ও শিশু পার্ক তৈরীর জন্য চেষ্টা চলছে। এছাড়া পুরাতন ধলাই ব্রীজটির পার্শ্বে নতুন ১টি ব্রীজ তৈরীর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা অচিরেই আলোর মূখ দেখতে পারবে বলে আশাবাদী। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌর এলাকার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ কৃষিনির্ভর। এখানে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা নেই। এ কারণে কাজের সুযোগও সীমিত।