মৌলভীবাজারের কালার বাজার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে
আব্দুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজারঃ কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে পড়ে মৌলভীবাজারের নলুয়ারমূখ কালারবাজার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। গত তিন বছরে প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা-পাকা দোকান ও বাড়িঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। মাটি ধসে নদীতে পড়ায় অনেক দোকান ঘর প্রায় শূন্যে ঝুলে আছে। অপরদিকে ভারত থেকে বেরিয়ে আসা ধলাই নদী কমলগঞ্জ উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মনু নদীতে মিলিত হয়েছে। কিন্তু নদী সংস্কার ও খনন না হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে পলিবালি জমে সম্পূর্ন ভরাট হয়ে যাচ্ছে ধলাইনদী। খর স্রোতা ধলাইনদী বর্ষা মৌসুমে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়িঘর ও ফসলাদির। আর শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে চর জেগে উঠে। আতঙ্কে আছেন ব্যবসায়ীসহ নলুয়ারমুখ এলাকার মানুষ। ভাঙ্গন রোধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় হুমরি মুখে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ জন্য স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও উদাসীনতাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলাই নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে দ্রুত বন্যায় নদী ভাঙনের কবলে নিঃস্ব হয় শত শত পরিবার। নদী খনন ও সংস্কার কাজ না করায় বাঁধ ভেঙে শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায়, বাস্তুহারায় পরিণত হচ্ছে। মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা, ধলাইপার, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের নারায়নপুর, চৈতন্যগঞ্জ, রহিমপুর ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নেরও বেশ কিছু এলাকায় নদীর কবলে বাড়িঘর বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। ভারত থেকে বেরিয়ে এসে মাধবপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু হয়ে উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়ে মনু নদীতে মিলিত হয়েছে ধলাই নদী। কিন্তু এর মধ্যে ধলাই নদীর দু’পারে অবস্থান করছে শত শত পরিবার। আঁকা বাঁকা নদী ফিবছর গিলে খাচ্ছে নদী পারের মানুষের বসতঘর। গৃহহারা হয়ে অনেকেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও অনেক বাড়িঘর নদী ভাঙনের কবলে রয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে তাদের বাড়ি ঘরও গিলে নেবে ধলাই।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় সত্তর বছর আগে গড়ে উঠা নলূয়ারমূখ কালার বাজার কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে গত কয়েক বছর ধরে। পুরাতন এই বাজারের এক পাশের প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচাপাকা দোকান ও বাজার সংলগ্ন কয়েকটি বাড়ী এরই মধ্যে ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিন দেখা দিচ্ছে বড় বড় ফাটল । মাটি ধসে নদীতে পড়ে সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে কয়েকটি দোকান । বাজারের স্থায়ী-অস্থায়ী প্রায় পাঁচ শতাধীক ব্যাবসায়ী ও বাজার সংলগ্ন বসবাস কারীরা আতক্ষে দিন কাটাচ্ছেন। উত্তরভাগ ইউনিয়নের ২৫-৩০টি গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকার উৎস এই বাজার। গত দুই বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসাযী ও এলাকাবাসী সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন সহ যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে স্বারকলিপি দেয়। কিন্তু বাজার রক্ষায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙনরোধে জরুরী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বাজারের অবশিষ্ঠ দোকানগুলো নদীগর্ভে চলে যাবার আশংঙ্কা বাজার কমিটির সদস্যদের।
রাজনগর উত্তরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিতু মিয়া জানান, ভাঙন থেকে বাজার রক্ষায় সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের আমলে পাথর ফেলার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে পরে কোনো কাজ হয়নি। ধলাইপার গ্রামের মো. নূর মিয়া বলেন, ধলাইনদীর বাঁক কেটে সোজা ও কিছুটা সংস্কার করে দিলে এতো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙনের ফলে এমন অবস্থা ধারণ করেছে, আগামী দু’চার বছরে ভানুগাছ-হামিদুর রহমান সড়কটিও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই এলাকার লেখিকা শিরিন শীলা বলেন, বন্যার পর ত্রান সাহায্য আর বাঁধ মেরামতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। অথচ ওই টাকা দিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে নদী খনন ও সংস্কার করা হলে ধলাই নদীর বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। নদী সংস্কার ও খনন না হওয়ায় ফিবছর পলিমাটি জমে ভরাট হওয়ার কারণে বর্ষাকালে নদী উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়। আর বন্যায় পানিবন্দি হয় হাজার হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষজনকে। বর্ষা আসলে নদী কখন যে নিয়ে যাবে তাদের মাথা গোজার ঠাঁইটুকু। সেই চিন্তুটুকুই সবসময় ধলাইপারের মানুষের যেন মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পলিবালি জমে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে চর জেগে উঠে। নদীতে শুধু খাঁ খাঁ বালুচর দেখা যায়। ফলে অল্প বর্ষনেই বন্যার সৃষ্টি হয়। তারা বলেন, পরিকল্পিত উপায়ে ধলাই নদী খনন ও সংস্কার অতীব জরুরী।
মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, ফিবছর নদী ভাঙনে ধলাইপার, শিমুলতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ধলাইনদীর ওই এলাকায় বøক দিয়ে নদীর বাঁধ মেরামতের জন্য বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের জানালেন, ডিও লেটার পেলে মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে ফান্ডের ব্যবস্থা করে এ বছরেই কাজ করার ব্যবস্থা করা হবে। এমতাবস্থায় আশারবানী শুনালেন মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী আজিজ মোহাম্মদ চৌধুরী। তিনি জানান, প্রকল্প অনুমোদন ও টাকা বরাদ্ধ চেয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কোন আশার বানী নয় পুরাতন ভাঙ্গন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড- এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।