এপিজে আবুল কালাম – প্রেরণার বাতিঘরের বিদায়

Abul Kalamরাজু আহমেদ, কলামিস্টঃ ‘‘রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে, স্যার ! এ দায়িত্বভার শেষে আপনি কি করবেন ? আবার অধ্যাপনায় ফিরে যাবো” । (ভারতীয় সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারে)
পাঠক ইনিই ছিলেন বৃহত্তর ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি। ২০০২-২০০৭ সাল পর‌্যন্ত সুনামের সাথে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ভারতের মিশাইল ম্যান খ্যাত আবুল পাকির জয়নুল আবদিন কালাম । ভারতের সবগুলো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদক প্রাপ্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি এখন জীবন থেকেও সাবেক । গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিংশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্নলিল্লাহি………রাজিউন) । তার মৃত্যুতে শুধু ভারতবাসী নয় বরং সমগ্র বিশ্বাবাসী বিশেষত বাংলাদেশের সকল মানুষ গভীরভাবে শোকাহত ।
কৃষকের পরিবারে জন্ম নিয়ে চরম দারিদ্র্যের মাঝেও যিনি এক মূহুর্ত সময়কে হেলায় নষ্ট না করে জ্ঞানারোহনের তপস্যায় আমৃত্যু নিবেদিত ছিলেন সেই মহামানবের মৃত্যুতে বিশ্ববাসীর অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়লো । বাবা-মায়ের মৃত্যুর দিন ছাড়া যিনি কর্মস্থল থেকে আর কোন দিন ছুটি ভোগ করেননি সেই মানুষটির মৃত্যুও যে সাধারণভাবে হবে না তা পূর্বেই অনুমানযোগ্য ছিলো । শিক্ষার্থীদের সামনে লেকচার দিতে দিতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে মৃত্যু হয় । ভারত যেভাবে তাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানিত নাগরিকের খেতাব দিয়েছে তেমনি তিনিও তার জীবনকালকে ভারতের উন্নয়নে বিলীন করে দিয়েছিলেন । তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে তার বাস-প্রসাদকের সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছিলেন বিশেষ করে শিশুদেরকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন ও ভালোবাসতেন । তার সকল উপদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো, ‘মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ণের কোন বিকল্প নাই’ । গভীর অধ্যয়ণের মাধ্যমেই তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং তার গরীব মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবতার চাদরে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন । তার মা অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করে যা আয় করতেন তার বেশিরভাগ দিয়েই তাকে কেরোসিন হত কেননা তারা ছেলে প্রায়ই সারা রাত পড়াশুনা করে । এমন ত্যাগী মায়ের উদ্যম সন্তান সফল না হয়ে উপায় আছে ?
মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি বলে গিয়েছেলেন, আমি যখন মারা যাবো তখন আমার শোকদিবস পালন না করে তোমরা যদি কাজে মনোযোগী হও সেটাই হবে আমার প্রতি তোমাদের ভালোবাসার প্রমাণ । এমন মহৎ ও উদার পন্ডিত ব্যক্তির মৃত্যুতে অশ্রু বিসর্জন দেওয়া ছাড়া আর কি করার থাকে ? কায়মনো বাক্যে প্রার্থণা করি, যেন পরকালের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের কাতারে তিনিও স্থান পান । ভালো থেকো ডঃ আবুল পাকির জয়নুল আবদিন কালাম ।