‘হোয়াট এ ফিগার’

Raju Ahmedরাজু আহমেদঃ শিরোনামের বিষয়ে আসার আগে হবিগঞ্জের ঘটনাটি একটু বলি । সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেট দুনিয়ায় একটি ভিডিও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে । স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্রীকে রুহুল আমীন নামের এক বখাটে প্রকাশ্য রাস্তায় ৪/৫টি চড় ও হুমকি দিয়ে সে ভিডিও ভার্চুয়াল জগতে ছড়িয়ে দিয়েছে । এলাকাবাসী রুহুল আমীনকে গ্রেফতার করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে । আক্রান্ত কিংবা অপরাধীর বয়স ১৮/২০ এর বেশি হবে না । মেয়েটির স্কুলের ড্রেস এবং ছেলেটির দৈহিক আকৃতি ওদের শিশু আকৃতি প্রকাশ করছে । কিন্তু এ কোন আচরণ ? একটি ছেলে এতটা সাহস কোথায় পেল ? পরিবার কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এরা কি শিখেছে ? অপরাধী তো শুধু রুহুল আমীন নামের বখাটে নয় বরং ওর পরিবারও এমনকি সমাজকেও দায়মুক্তি দেয়া যায়না । যারা ভিডিও ধারণ করেছে তারা প্রতিবাদের বিপরীতে পশুসূলভ সুখ পাওয়ার কারণে ওদের গুরুতর শাস্তি হওয়া দরকার । নারীর নিরাপত্তার দিন তবে শেষ হয়েই গেল ? আজ নারীরাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ ।
জুমআর নামাজের কিছু পূর্বে অটো রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম একটি বাইপাস সড়কের মুখে । মূল রাস্তা থেকে একটি মেয়ে এসে বাইপাস হয়ে অন্য দিকে চলে যাচ্ছিল । রাস্তার অপর পাশ ‍দিয়ে ৫টি ছেলে হেঁটে বিপরীত মুখী আসছিল । যে মেয়েটি আমার পাশ থেকে চলে গেল তার বয়স ১৬-১৭ এর বেশি বোধহয় হবে না । যে ছেলেগুলো আসছিল তাদের বয়সও ঐ রকম । ছেলেদের মধ্য থেকে একটা ছেলে রাস্তার পাশ পরিবর্তন করে আমি যে পাশে দাঁড়িয়ে অর্থ্যাৎ মেয়েটি যে পাশ দিয়ে হেঁটে গেল সে পাশে চলে এসে মেয়েটির দিক ফিরে ফিরে বার তিনেক একই ধরণের শব্দ করল । প্রথম দিকে শব্দটি বুঝতে পারিনি কিন্তু শেষবার অনেক কষ্টে উদ্ধার করলাম-‘হোয়াট এ ফিগার’ । ইংরেজীতে এগুলো বললে হয়ত টিজিং হয়না ! কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা ছিল প্রতিবাদ করার কিন্তু তাতে পরিণতি কি হত ? পাঁচটা ছেলের মারও খেতে পারতাম । খুব ইচ্ছা করছিল, মেয়েটার অসহায় মুখটা দেখে নিজের প্রতি ধিক্কারের তীব্রতা বাড়িয়ে নিব কিন্তু সম্ভব হয়নি । ছেলেগুলো একটু দূরে গিয়ে একত্রিত হয়ে আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠল । এইসব ছেলেদের শাস্তি দেয়ার আগে শাস্তি দেয়া উচিত ওদের জন্মদাতা-জন্মদাত্রীদের । কি শিক্ষা দিয়ে ওদেরকে বড় করে তোলা হয়েছে । আমার একজন বন্ধু কাম বিবাহিত বড়ভাই আফসুস করে একদিন বলছিল-ছোট ভাই দোয়া করিস আমাদের যেন কন্যা সন্তান না হয় । সেদিন তার এ কথার অর্থ সেঅর্থে বুঝতে চেষ্টা করিনি কিন্তু আজ যেন আপনভাবেই বুঝে গেলাম ।
কোন আইন এই ধরণের অপরাধীকে রুখতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে । রাস্তায় টিজিং নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কি কম চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়েছে । নৈতিক শিক্ষা দান এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবী । এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে পিতামাতা তথা পরিবারকে । সবাই ভালো সেটা বলা চলে না কিন্তু ভালোদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মন্দকে ভালোর কাতারে না হোক অন্তত মন্দত্ব ত্যাগে বাধ্য করারটা বোধহয় অসম্ভব নয় ।