সংকেত মিললেই এরশাদের পদত্যাগ!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সরকারের সবুজ সংকেত মিললেই ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত’ পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের তিন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিয়ে সরকার থেকে জাতীয় পার্টিকে বের করে আনার লক্ষ্যেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির এ সিদ্ধান্ত। তবে সবকিছুই সরকারি দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, এইচ এম এরশাদের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই দলের তিন নেতাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করানো হবে। এর মধ্য দিয়েই সরকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে আসবে জাতীয় পার্টি।
সূত্র আরো জানায়, ‘মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগ করতে এরশাদ উদগ্রীব হয়ে আছেন। এরশাদ বৃহস্পতিবার রংপুর থেকে ফিরেছেন। শিগগির দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সরকারের হাইকমান্ডের সঙ্গে পৃথক আলোচনা করবেন তিনি। তারপরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এরশাদ। তবে তার এ সিদ্ধান্তে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ একটি অংশ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এর আগে মন্ত্রীদের পদত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু করেও তাদের আপত্তির কারণে পিছু হটেন এরশাদ।’
দলের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পার্টির চেয়ারম্যানসহ জাতীয় পার্টির অপর তিন মন্ত্রীর পদত্যাগ করা এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের মতের সঙ্গে নেতা-কর্মীরাও একমত পোষণ করেন। স্যার তো প্রায় সময়ই বলেন, আমাদের (জাতীয় পার্টি) নিয়ে সাধারণ মানুষ হাসাহাসি করে। স্যার নিজেই বিব্রত। নেতা-কর্মীরাও প্রশ্নবিদ্ধ। এ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে মন্ত্রিসভা থেকে জাপা নেতাদের পদত্যাগ।’
জানা গেছে, সরকারের সবুজ সংকেত মিললেই এইচ এম এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। একই সঙ্গে দলের তিন মন্ত্রীকেও পদত্যাগের নির্দেশ দেবেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন এরশাদ। কয়েক দিন আগে রংপুরে অবস্থানকালে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, বিরোধী দল হিসেবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হলে দলের তিন নেতাকে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি নিজেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগে প্রস্তুত বলেও জানান তার ঘনিষ্ঠজনরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রভাবশালী নেতা জানান, ‘স্যার (এরশাদ) পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। সরকার হ্যাঁ বললেই পদত্যাগ করবেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান এই নেতা।
সূত্র জানায়, একই সঙ্গে সরকারে এবং বিরোধী দলে জাতীয় পার্টির এমন ভূমিকায় আলোচনা-সমালোচনায় বিরক্ত এরশাদ। শুরু থেকেই মন্ত্রিসভায় যোগদান নিয়ে আপত্তি ছিল এরশাদ ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের। দলের সরকারপন্থি একটি অংশের চাপে এরশাদকে মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব নিতে হয়। এ নিয়ে শুরু থেকেই নাখোশ ছিলেন তিনি। বর্তমান সরকারের এক বছর না যেতেই বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সরকারে থাকা নিয়ে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠে। সত্যিকারের বিরোধীদল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ একাধিকবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের উদ্যোগ নেন। কিন্তু বারবার দলের প্রভাবশালী ওই অংশের বিরোধিতার মুখে তাদের সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। বরং মন্ত্রীদের পদত্যাগের ইস্যু নিয়ে ঝড় উঠে জাতীয় পার্টিতে। এ নিয়ে এরশাদের সমালোচনা করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা ও বিরোধী চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ নিয়ে একপর্যায়ে তাদের বহিষ্কার করা হয়। যদিও তাদের পরে আবারও দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারপরও মন্ত্রীদের পদত্যাগে অনড় মনোভাব এরশাদ-রওশনের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বিরোধী দলীয় নেতা দীর্ঘদিন ধরে চাচ্ছেন জাতীয় পার্টিকে সত্যিকারের বিরোধী দলে পরিণত করতে। দলের একটি অংশের বিরোধিতা সত্বেও পার্টির দুই শীর্ষ নেতা মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করেন। সরকারের সবুজ সংকেত মিলে কিন্তু ওই মুহূর্তে হঠাৎ করে বিএনপি-জামায়াতের লাগাতার কর্মসূচি শুরু হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়টি ঝুলে যায়।’
এ বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ফোন ধরে লাইন কেটে দেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও ফোন ধরেননি।