ভূমি দখলে শাহপরান থানার ওসি সাখাওয়াত!
॥ সুরমা টাইমস রিপোর্ট ॥
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন। আইন শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ বিভাগের অতি গুরুত্বপূর্ণ এক পদের মালিক হলেও টাকার জন্য ভূমি দখল থেকে শুরু করে হেন কোন অপরাধমূলক কাজ নেই যা তিনি করেননি। দুর্ধর্ষ অপরাধীদের সাথে রয়েছে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সিলেট পুলিশের বিভিন্ন দুর্যোগকালের অকৃতিম বন্ধু সাংবাদিক নিপিড়নেও তিনি পটু। এর আগে সাংবাদিক আব্দুল হালিম সাগর সহ অনেক ক্রাইম রিপোর্টরকে হেনাস্তা করেছেন গুনধর ওসি সাখাওয়াত। বরিশালের জেলার অন্তরা নামের এক মেয়ের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল ওসি সাখাওয়াতের। তারই প্ররোচনায় সাংবাদিক সাগরকে মিথ্যা মামলায় জড়ান ওসি সাখাওয়াত।
এছাড়াও ওসি সাখাওয়াতের সময়কালে শাহপরান থানায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আরও অন্তত পাঁচটি মিথ্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। সর্বশেষ তার দ্বারা নিগ্রিহিত হন সিলেটের স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, প্রতিষ্টিত ব্যাবসায়ী সাংবাদিক মুজিবুর রহমান। অভিযোগে প্রকাশ রাতের আধারে সাংবাদিক মুজিবুর রহমানের স্বত্তদখলীয় ভূমি দখলে তিন তিনবার সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ওসি সাখাওয়াত। পরবর্তীতে ওই ভূমি দখলে ব্যার্থ হয়ে ওসি সাখাওয়াত মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে শাহপরান এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বি ও মসজিদের মোতাওয়াল্লী আনসার মিয়াকে আসামী করে একটি কল্পিত ‘ধান চুরি’র মামলা দায়ের করান।
আদালতে নিষেদাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও ডাঃ এনায়েত উল্লাহর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে আদর সোসাইটি নামক একটি এনজিও’র জায়গা জবরদখল করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। জায়গাটি এখন ডাঃ এনায়েত উল্লাহর দখলে আছে।
জামায়াত শিবির ও হেফাজতে ইসলামের সাথে ওসি সাখাওয়াতের সম্পর্ক অতি গভীর। হেফাজত নেতা মাওলানা আতিকুর রহমানের স্বত্বদখলীয় বাসাটিতে দীর্ঘদিন থেকে বিনে ভাড়ায় স্বপরিবারে বসবাস করেন ওসি সাখাওয়াত। মৌলানা আতিকুর রহমান ফুলবাড়ী মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আদালতে হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট মামলা থাকায় তিনি ফেরারী আছেন।
নগরীর তেররতনে তুহিন আহমেদের বাসার (৫ম তলা বাসা নামে পরিচিত) পুরোটাই জুড়ে বসবাস করে জামাত-শিবির ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এলাকায় শিবিরের ঘাটি বলে সুপরিচিতি আছে বাসাটির।
উপশহরে সৈয়দ মঞ্জিল, বাসা নং ৬১, ব্লক এ মেইন রোডের দ্বিতীয় তলা বাসাটিও শিবিরের আস্তানা। এলাকার সচেতন মহল, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কর্মীরা অনেক অভিযোগ করলেও ওই বাসায় কোনদিনই রেইড দেননি ওসি সাখাওয়াত। এনিয়ে সরকারদলে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
দরবস্ত এলাকার কুখ্যাত মাদক বিক্রেতা মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে বড় অংকের মাসোয়ারা আদায় করে থাকেন ওসি সাখাওয়াত। সম্প্রতি শাহপরান থানাধীন দাসপাড়া এলাকার বাইপাস সড়কের কাছে ১০ বোতল ফেন্সিডিল সহ মুজিবুরকে এলাকাবাসী আটক করে তাৎক্ষণিক শাহপরান থানায় ফোন করেন। শাহপরান পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে এসআই আলমগীর সংগীয় ফোর্স নিয়ে মাদকসহ মুজিবুরকে থানা হাজতে নিয়ে আসেন। আসার সময় স্বাক্ষী হিসেবে বাবুল নামের এক যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে থানায় আনা হয়। বাবুলের নেতৃত্বে মুজিবকে এলাকাবাসী আটক করে ভেবে ক্ষুব্দ হয়ে ওসি সাখাওয়াত বাবুলকেও মুজিবুরের সাথে মাদক মামলায় থানা হাজতে আটক করে রাখেন। পুরাতন যুবলীগ কর্মী হিসেবে এলাকায় বাবুলের সুখ্যাতি থাকার কারনে এলাকাবাসী সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে থানায় যান। তখন ওসি অজুহাত দেখান যে বাবুলকে ছাড়তে হলে মুজিবুরকেও ছেড়ে দিতে হবে। সারারাত ও পরদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত থানা হাজতে রেখে পরে লক্ষাধিক টাকা ঘুষের বিনিময়ে উদ্ধারকৃত ১০ বোতল ফেন্সিডিল পরিত্যাক্ত দেখিয়ে আসামী মুজিবুর ও যুবলীগ নেতা বাবুলকে থানা থেকে ছেড়ে দেন ওসি সাখাওয়াত।
বর্তমান সরকারের একটি জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে ‘গাছ লাগান-পরিবেশ বাচান’। ওসি সাখাওয়াত এই স্লোগানটিকেও নিজের মত করে পাল্টে দিয়েছেন। তার সেøাগান হচ্ছে ‘গাছ কাটেন-টাকা দেন’।
জানা যায়, বটেশ্বর হইতে গোয়াইনঘাটের আহমদ আলী নামে জনৈক ব্যাক্তি প্রতিদিন মধ্যরাতে একট্রাক গাছ বটেশ্বর এলাকা থেকে শাহপরান বাইপাস সড়ক ব্যাবহার করে বিয়ানীবাজার-জকিগঞ্জ রোডের বিভিন্ন ইট ভাটায় পাচার করেন। যাহা হইতে ট্রাক প্রতি পাঁচ হাজার টাকা যায় ওসি সাখাওয়াতের পকেটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ অফিসার জানান, শাহপরান থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করিলে প্রথমেই ওসির ডানহাত বলে পরিচিত কনেস্টেবল মাহবুবের সাথে দফারফা করতে হয়।
২০১৩ সালে এসআই পদ থেকে পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। প্রথমে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মোগলাবাজার থানায় ইন্সপেক্টর তদন্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। কিছুদিনের মধ্যেই এসএমপি’র শাহপরান থানায় ইন্সপেক্টর তদন্ত হিসেবে বদলি হন। বরিশাল জেলার বাসিন্দা এই ইন্সপেক্টর শাহপরান থানায় যোগদান করার সময় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ছিলেন বর্তমান সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের দায়ীত্বে থাকাকালীন সময় শাহপরান থানার ওসি সাখাওয়াত ঢাকা জেলা ডিবিতে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সুবাদে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মিজানুর রহমান অত্যন্ত ফেরেস্থা হিসেবে জানতেন ওসি সাখাওয়াতকে। যে কারনে তিনি তাকে শাহপরান থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ দেন। ওসি সাখাওয়াত শাহপরান থানার দায়িত্ব প্রাপ্তির পর থেকে যতদিন এসএমপি’র কমিশনার মিজানুর রহমান ছিলেন ততদিন শাহপরান থানায় ওসি তদন্ত পদটি শূণ্য ছিল। কমিশনার কামরুল আহসান যোগদান করার অনেক পরে বিতর্কিত ইন্সপেক্টর মনিরুল ওসি শাখাওয়াতের ব্যাচমেট হওয়ার সুবাদে শাহপরান থানার ওসি তদন্তের দায়ীত্ব পান বলে জানা যায়।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ওসি সাখাওয়াতের সময় বহু নিরপরাদ ব্যাক্তি কারাভোগ করিয়াছে। সিলেটে জামায়াত শিবিরের অনেক দুর্ধষ ব্যাক্তি তার ছত্রছায়ায় তারই থানা এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকে, অথচ ভূমি বিরোদের জেরে তিনি অনেক ব্যাক্তিকে জামায়াত-শিবির অথবা বিএনপি বলে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন।