মানবিক বিপর্যয় : নেপালে মৃতের সংখ্যা ৩২শ ছাড়িয়ে
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ নেপালে মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। শনিবারের ভূমিকম্পে রাজধানী কাঠমুণ্ডুসহ পুরো দেশটাই পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। দ্য নেপালি টাইমস জানায়, নিহতের সংখ্যা বত্রিশশো ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ৬ হাজার ২৩৯ জন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অত্যন্ত নাজুক এ মানবিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চেয়েছে নেপাল। এর মধ্যে রোববার দুপুর ১টা ১৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) ফের ভূকম্পনে নেপালসহ একযোগে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ, ভারতও। রোববার রাতেও নেপাল ও ভারত কেঁপে উঠে তৃতীয়বারের মতো। তবে এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।
ইউরোপীয়-ভুমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের (ইএমএসসি) হিসাবে রিখটার স্কেলে এ কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৫। তবে ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্যমতে এর মাত্রা ছিল ৬.৭। আর রাতের ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৪। নেপালের রাজধানী কাঠমুণ্ডু থেকে ৮৫ কিলোমিটার পূর্বে ও কোদারি থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল বলে জানিয়েছে ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে।
ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুর অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ভূমিকম্পের পরের নেপালকে যেন চেনাই যাচ্ছে না। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকের মৃতদেহ মিলছে। উদ্ধারকর্মীরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। তবে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে সময় লাগছে। রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঠিক চিত্র এখনো জানা যাচ্ছে না। কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা তাবুতে অপারেটিং থিয়েটার তৈরি করে আহত মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ভারতে নেপালের রাষ্ট্রদূত দিপ কুমার উপাধ্যায়া বলেন, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আর স্থানের সংকুলান হচ্ছে না। আহতদের খোলা স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নেপালের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মিনেন্ডা রিজাল বলেন, আমরা মহাদুর্যোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রচুর সাহায্য ও সমর্থন দরকার।
এদিকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব নেপালের ডাকে সাড়া দিয়ে দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশেষ দল পাঠাচ্ছে। প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে তারা ১০ লাখ ডলার সাহায্য দিয়েছে। ভারত হেলিকপ্টার, মোবেইল হাসপাতাল, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ৪০টি শক্তিশালী উদ্ধারকর্মী দল ও ডগ স্কোয়াড পাঠিয়েছে। চীন ডগ স্কোয়াডসহ উদ্ধারকর্মীদের ৬২টি দল পাঠিয়েছে। পাকিস্তান চারটি এয়ারক্রাফট, ৩০টি হাসপাতাল শয্যা, সেনাবাহিনীর চিকিৎসক দল, খাবার, তাঁবু ও কম্বল পাঠাচ্ছে। যুক্তরাজ্য আটটি সাহায্যকারী দল ও ৫০ লাখ পাউন্ড সাহায্য পাঠিয়েছে। এছাড়া জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইসরায়েল ও স্পেনের কাছ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।বাংলাদেশ সরকারও নেপালকে সহায়তায় ছয়টি চিকিৎসা দলসহ ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে।