মৌলভীবাজারে চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুমৃত্যুর অভিযোগ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রিয়াদ নামের দেড় মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রিয়াদ কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা গ্রামের জসিম মিয়ার ছেলে। শনিবার বিকালে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে এ ঘটনাটি ঘটে।
শিশুটি পিতা জসিম মিয়া জানান, তার ৪৫ দিনের শিশুপুত্র রিয়াদ মিয়া জ্বরে ভোগলে তিনি তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতলে নিয়ে আসেন। সেখানকার ডাক্তারের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী তার শিশুপুত্রকে ওষুধ খাওয়ান। রাতে ওষুধ খাওয়ানোর পর থেকে তার শিশুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরদিন সকালে শিশুটির পেট ফুলে প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে গেলে তারা শিশুটিকে নিয়ে আবার হাসপাতালে আসেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর চেষ্টা করেও কোন ডাক্তার দেখাতে না পেরে অসহায় হয়ে পড়েন তারা। পরে শিশুটির স্বজনদের অনুনয় বিনয় আর আহাজারিতে জরুরি বিভাগের একজন ডাক্তার কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা ভর্তি ছাড়াই তাকে হাসপাতালের ৩ তলায় শিশু বিভাগে পাঠান। সেখানে তাকে অক্সিজেন দেয়ার পর আর কোন ডাক্তার কিংবা নার্স তার পরিচর্যা বা খোঁজখবর নেননি।
বিকাল ৩টায় কর্তব্যরত স্টাফরা তাদের জানান শিশুটি মারা গেছে। তখন জরুরি বিভাগে এসে শিশুটির স্বজনরা শুনতে পান সেখানকার দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তাদের মধ্যেই কানাঘুষা করছেন ৩ তলায় পাঠানোর আগেই নাকি শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
তাদের এমন কথার রেশ ধরেই শিশুটির স্বজনরা তাদের কাছে জানতে চান তখন শিশুটি মৃত হলে কেন তাদের ৩ তলায় পাঠানো হলো।
এ খবর কেন তারা আগে না জানিয়ে এমন প্রতারণা করলেন। এ সময় শিশুটির স্বজনদের সঙ্গে জরুরি বিভাগ ও শিশু ওয়ার্ডের ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হয়। লোকমুখে এমন ঘটনা ছড়াতে থাকলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে শিশুটির স্বজন ও অন্য লোকজন জড়ো হতে থাকেন। ঘটনা বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে এবং পুলিশ ডেকে ঘটনাটি আড়াল করে।
শিশুটির মা লাভলী বেগম (২৫) জানান, দুপুর পর্যন্ত তার শিশুপুত্র পেট ফুলে যাওয়া ছাড়া আর অন্য কোন লক্ষণ ছিল না। তিনি আহাজারি করে বারবার মূর্চা যাচ্ছিলেন আর আবদার করছিলেন তার শিশুপুত্রটিকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে হ্রদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
শিশুটির মামা মাসুদ আহমদ অভিযোগ করে বলেন, আমরা ভাগিনা জন্মের পর থেকে সুস্থ ছিল কিন্তু সামান্য জ্বরের কারণে এ হাসপাতালের ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। আজ তাদের গাফিলতির শিকার হয়ে আমার ভাগিনাকে মৃত্যুবরণ করতে হলো।
মৌলভীবাজার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুব্রত কুমার রায়ের সেলফোনটি বন্ধ পাওয়ায় হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. পলাশ রায়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ডাক্তারের অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে চিকিৎসার কোন অবহেলা ছিল না এবং যে ওষুধগুলো দেয়া হয়েছে তা সঠিক ছিল।