প্রধানমন্ত্রীকে আজমীরের ওড়না পরিয়ে দিলেন চিশতি
বিএনপি-জামায়াত সত্যিই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে কিনা? : প্রধানমন্ত্রী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থের জন্যই বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মারছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘তা নাহলে একজন মুসলমান হয়ে আরেকজন মুসলমানকে কীভাবে পুড়িয়ে মারে?’
শনিবার বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আর্ন্তজাতিক সুফি সম্মেলনে প্রধান অথিতির বক্তেব্যে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশন এ সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ পুড়িয়ে মেরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার অর্থ সম্পদ রক্ষা করতে চান এবং যুদ্ধপরাধীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে জামায়াত ইসলামী সন্ত্রাস করছে। আমাদের দেশে তো বিচার কাজ এক রকম। এটা যদি কোনো ইসলামিক দেশে হতো তবে তাদের শিরশ্চ্ছেদ করা হতো। প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে বিচার হচ্ছে বলে তারা আপিল করারও সুযোগ পাচ্ছে।’
বাংলাদেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতিকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও মানবেতর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন দেশের সার্বিক উন্নতি হচ্ছে ঠিক সেই সময় কেন এ তাণ্ডব? মানুষের কান্না, কষ্ট, মানুষের ব্যথা-বেদনা তাদের মনে কি নাড়া দেয় না?
শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘তিনি মানুষ পুড়িয়ে মেরে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান যাতে এদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। মানুষ ধ্বংস হবে। তবু ওনার টাকা রক্ষা করবেন।’
বিএনপি এভাবে মানুষ পুড়িয়ে কী অর্জন করছে? প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে কেন মানুষকে পুড়িয়ে মারছে? ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে। শত বাধা উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিয়েছে। গত এক বছরে মানুষ শান্তিতে ছিল। বিগত ৬ বছর আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মানুষের মধ্যে যখন আস্থা, বিশ্বাস, স্বস্তি ও শান্তি ফিরে এসেছে। ঠিক সেই সময় বিনা কারণে বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে বিএনপি।’
বিএনপি-জামায়াত সত্যিই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে কিনা? প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘পেট্রোলবোমা দিয়ে নারী, শিশুসহ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। মানুষের মনে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অবস্থা দেখে সন্দেহ হয় এরা সত্যিই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে কিনা। সবচেয়ে কষ্ট লাগে ধর্মের নাম নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট রাজনীতি করে ঠিকই। আবার তাদের হাত থেকে আমাদের মসজিদও রেহাই পায় না।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম সবচেয়ে শান্তির ধর্ম, প্রগতির ধর্ম। কিন্তু সেই ধর্মের কথা বলে যারা রাজনীতি করে তারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, এতে আমার পবিত্র ধর্মের বদনাম হয়। মুষ্টিমেয় লোকের জন্য পবিত্র ধর্ম ইসলামের অপমানজনক অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। মহান আল্লাহ তাদের সুমতি দিক।’
ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামের যথাযথ প্রচার, প্রসার ও ধর্মকে যেন ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কেউ অপব্যবহার করতে না পারে সে জন্য বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, তাবলিগ জামায়াতের জন্য টঙ্গিতে জমি দান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।’
সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সম্মেলনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন- ভারতের রাজস্থানের আজমীরে খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর (র.) দরগাহর সভাপতি ওয়াহিদ হোসেন চিশতী, দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগাহের সভাপতি সৈয়দ নজিব আল নিজামী, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ রেজাউল হক, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক তৈয়বুর বশর মাইজভাণ্ডারী প্রমুখ। ওয়াহিদ হোসেন চিশতী তার বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রীকে আজমীর থেকে আনা একটি ওড়না পরিয়ে দেন।