সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ-দুর্নীতি : সিলেটের সাবেক দুই স্বাস্থ্য পরিচালক কারাগারে
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জে স্বাস্থ্য বিভাগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সিলেট বিভাগের সাবেক বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও সাবেক সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবদুল মুনিম চৌধুরীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. ইসরাইল হোসেন তাঁদের জেল হাজতে প্রেরণের এ আদেশ দেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের মার্চ মাসে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। এতে ১২০জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটে। পরে নিয়োগ বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে এই নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। একইভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়েও অভিযোগ করা হয়। এরপর দুদুকের সহকারী পরিচালক শেখ আবদুস সালাম এ বিষয়ে তদন্ত করে নিয়োগে নানা অনিয়ম হয়েছে বলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ১২০টি পদের মধ্যে ৩৬জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৩২জন, এতিম-প্রতিবন্ধী কোটায় ১২জনের মধ্যে একজন, আনসার-ভিডিপি কোটায় ১২জনের মধ্যে চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া উপজাতী কোটায় ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও কাউকে দেওয়া হয়নি। এর বাইরে যোগ্য প্রার্থীকে অযোগ্য বিবেচনায় এনে কমিটির পছন্দের লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নম্বরপত্রে কাটাকাটি করে কোনো কোনো পরীক্ষার্থীকে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরপর গত বছরের ২২এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শেখ আবদুস সালাম বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সুনামগঞ্জের তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. মো. হারিস উদ্দিন আহমেদ, সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. ইকবাল হোসেন চৌধুরী, সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল মুনিম চৌধুরী, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হালিম মিয়া, সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল আলম ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আব্দুল খালেককে বিবাদী করা হয়। এই ছয়জনের মধ্যে কামরুল আলম ছাড়া সবাই বর্তমানে অবসরে আছেন।
মামলার তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত গত ১৯ অক্টোবর বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এই মামলায় গতকাল বুধবার সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে ডা. ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও ডা. আবদুল মুনিম চৌধুরী হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালতে জামিন শুনানীকালে বাদী পক্ষে ছিলেন সুনামগঞ্জে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর আইনুল ইসলাম বাবলু ও পরিতোষ চন্দ্র রায়, বিবাদী পক্ষে ছিলেন শহীদুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ শামছুল ইসলাম ও রবিউল লেইছ রোকেস।