ওসমানীনগরে আ’লীগ নেতা তনয়ের যৌতুকের দাবী পূরনে ব্যার্থিতায় ভেঙ্গে গেল বিয়ে
শিপন আহমদ,ওসমানীনগরঃ সিলেটের ওসমানীনগরে বরের দাবিকৃত পালসার মোটরসাইকেল না দিতে পারায় ভেঙ্গে গেলো (ছদ্মনাম) রুমার বিয়ে। বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথিরা কনের বাড়িতে মিলিত হয়ে চলছিল বিয়ের মহা ধুমধাম। রুমার বাবাও মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ব্যস্থ। কারন গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর আদরের কন্যার বিয়ে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্টিত হবে। গত বুধবার বিকাল থেকে সিএনজি ভাড়া করে বাড়ি থেকে কমিউনিটি সেন্টারে একাধিকবার যাতায়ত করছেন। বিয়ের বাজার করতে পাঠিয়েছেন মুরব্বিদের। রাতে গায়েঁ হলুদ অনুষ্টান। সব মিলিয়ে কনের মা-বাবাসহ সবাই ব্যস্থ বিয়ের আয়োজন নিয়ে। হঠাৎ বাজারে যাওয়া মুরব্বিদের মধ্যে একজন মোবাইল ফোনে রুমার বাবাকে জানালেন পালসার মোটর সাইকেল কিনে না দিতে পারায় বর পক্ষ চলে গেছে বিয়ে হবে না। এমন খবর শুনার পর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছে রুমার বাবার। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পরেন তিনি। সারা দিনের এত আনন্দ আয়োজনের মধ্যে গোটা বাড়িতে হঠাৎ নেমে এল নীরবতা। উৎসবের আমেজ রূপ নিলো বিষাদে।
কনের বাবা-মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। গত বুধবার রাতে ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহ পুর গ্রামের আ’লীগ নেতা আজল মিয়ার পুত্র যৌতুক লোভী রাশেদ মিয়া কনের পিতার কাছে পালসার মোটরসাইকেল দাবি করেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় বিয়ে ভেঙ্গে গেলে পার্শ্ববর্তী কনের বাড়িতে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার কনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কনের মা জ্ঞান হারা হয়ে বিছানায় রয়েছেন। কনে রুমা কান্না-কাটি করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন ।
কনের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়ের আব্দুল্লাহ পুর গ্রামের আ’লীগ নেতা আজল মিয়ার পুত্র রাশেদ মিয়া (২৭) এর সাথে পাশ্ববর্তী গ্রামের ছদ্মনাম রুমা বেগম (২১) এর সাথে গতকাল বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন ধার্য ছিল। বিয়ের দিন তারিখ হওয়ার পর বর ও যৌতুক লোভি পিতা আজল মিয়া কনের পিতার কাছে প্রস্তাব করেন প্রথমপুত্রের বিয়েতে ডিসকভারী মোটর সাইকেল পেয়েছেন। তাই বরকে পালসার সাইকেল দিতে হবে। এঅবস্থায় কনের পিতা মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আজল মিয়ার দাবিকৃত সাইকেল কিনে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে গ্রামের এক প্রবীন মুরব্বির মাধ্যমে মোটর সাইকেল কেনার জন্য ১ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন বরের পিতার নিকট। এসময় যৌতুক লোভী বরের পিতা আজল মিয়া টাকা রেখে গত বুধবার স্থানীয় গোয়ালাবাজারে বিয়ের বাজার করার জন্য কনের পক্ষের লোকজন উপস্থিত থাকার দাওয়াত দেন। বরের পিতার কথা অনুযায়ী কনের পিতা নিজে বিয়ের আয়োজনে ব্যস্থ থাকায় মুরব্বিদের বাজারে পাঠান। মুরব্বিরা বাজারে এসে বর রাশেদ ও তাদের নিকট আত্মীয়দের সাথে মিলত হন। এসময় বরের পক্ষের এক আত্বীয় কনের পক্ষের মুরব্বিদের কাছে সাইকেল বাবতে আরও দেড় লক্ষ টাকা দাবি করেন। কনের পক্ষের মুরব্বিরা সাইকেল ক্রয় করার জন্য এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে জানালে যৌথুক লোভী রাশেদ বলে পালসার সাইকেলের দাম দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা তাই আরও দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে। এসময় কনের পক্ষের লোকজন দেড় লক্ষ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পালসার মোটর সাইকেল না পেলে আমি বিয়ে করব না বলে তাঁর আত্বীয়দের নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায়। এসময় কনের পক্ষ পূর্বের দেয়া ১ লাখ টাকা ফেরত চাইলে সে বলে কিসের টাকা পারলে নিয়ে নিও।
কনের পিতা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় আমি যখন বিয়ের আয়োজন নিয়ে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে ব্যস্থ এ সময় বাজারে যাওয়া মুরব্বিদের মধ্যে একজন আমাকে মোবাইল ফোনে জানান ১ ঘন্টার মধ্যে বরকে আড়াই লক্ষ টাকা দামের মটোর সাইকেল কিনে দিতে না পারলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিয়ে হবে না। সাথে সাথে আমি বরের পিতা আজল মিয়াকে মোবাইল ফোনে হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করি আমি আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে দিব। এর পরও আজল মিয়া উত্তেজিত হয়ে পালসার সাইকেল না দিতে পারলে বিয়ে হবে না বলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোন কেটে দেন।
বর রাশেদ মিয়া বলেন, ‘আমি তো বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কনের পিতার রাজি না হওয়া বিয়ে হয়নি। এখানে আমার কি দোষ মোটর সাইকেল কনের পক্ষে দিবে এটাতো আগেই ঠিক ছিল।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুরসালিন বলেন এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।