সত্যকে জানুন – কোরআন-হাদিস ও অলি-বুযুর্গদের শিক্ষার আলোকে
মুজাহিদ মসিঃ ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায় ।নীতি-নৈতিকতা ও উদার মানবিকতা শিক্ষার মাধ্যমে সেই পথ সুগম-ই হয়। বর্তমানে নতুন প্রজন্ম ধর্ম বিমুখ হয়ে যাচ্ছে।যার ফলশ্রুতিতে মনোজাগতিক নানা সমস্যা যেমন টেনশন-হতাশা,লক্ষ্যহীনতা,দুঃখ এবং ব্যর্থতা তাদের গ্রাস করছে।
এদিকে সমাজে যারা ইসলাম ধর্মের অথোরিটি হিসেবে চিহ্নিত আলেম-উলামা,পীর-মাশায়েক রয়েছেন তাদের কেউ কেউ একই ধর্মে নানা মত-বিভক্তি তৈরি করেন। এক দল অন্য দলকে সহ্য করতে না পেরে নানা দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হন। তা যেন আরবের জাহিলি যুগকেও হার মানায়। অথচ কোরআন বলছে æঅন্যের দেবতাকে গালিও দিও না’(সূরাঃআনআমঃ১০৮)
সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি,এক দল নবীজি(স)কে অতিরঞ্জিত করে অপর দল নবীজি সম্পর্কে নির্ভুল দলিল পেশ করেন না।
আল্লাহ্পাক বলেন,æহে নবী জেনে রাখো, যারা তাদের ধর্ম বিশ্বাসকে খণ্ড খণ্ড করে নানা মতের সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়েছে,তাদের কোনো দায়িত্ব তোমার উপর বর্তায় না।তাদের বিষয়টি পুরোপুরি আল্লাহর এখতিয়ারে সময় হলেই তিনি তাদের বুঝিয়ে দেবেন,তারা কে কী করেছে”(আল কোরআন,সূরাঃআনআম:১৫৯)
আমাদের সমাজে কথিত সুন্নি অহাবীদের মধ্যে যে যে দ্বন্দ্ব মতভেদ সংঘাত রয়েছে। শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ সত্য না জেনে এসব নিয়ে বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। সময়ের প্রয়োজনেই তা এক এক করে তুলে ধরছি এবং একজন সচেতন ধার্মিক হিসেবে কোরআন হাদিস বিজ্ঞান এবং সহজাত বিচার-বুদ্ধির আলোকে তা সমাধানের চেষ্টা করছি।
মত বিরোধের প্রসঙ্গ সমূহ:
(১)নবীজি কি গায়েব জানেন কি জানেন না?
(২)নবীজি কি নূরের তৈরি না মাটির?
(৩)দাড়িয়ে সালাম প্রসঙ্গে।
(৪)পীর প্রসঙ্গ।
(৫)মাজার প্রসঙ্গ।
(৬)অমুসলিমদের কি আল্লাহ্ বেহেশত দিতে সক্ষম?
(১)নবীজি(স)কি গায়েব জানেন কি জানেন না?
গায়েব শব্দের অর্থ অদৃশ্য ।যা সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে বুঝা যায় না।
যারা কামেল ব্যক্তি যারা নিজেদের নফস বা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।তারা নিজেদের অন্তরের জ্ঞানের দ্বারাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।একে বলে প্রজ্ঞা।শরিয়তের বিধিবিধান পালন ছাড়া প্রজ্ঞা অর্জন করা যায় না।
প্রজ্ঞাকে শানিত করতে পারলে অদৃশ্য দৃশ্য হয়। তবে অবশ্যই তা মহান আল্লাহতালার নিয়ন্রনাধীন।কারণ আমাদের মনকে নিয়ন্রন করা বড়ই কঠিন।প্রতিনিয়ত আমাদের জান্তে-অজান্তে পাপ হচ্ছে।ফলে অন্তরের পবিত্রতা বিনষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ্ যদি আমাদের পাপ ক্ষমা না করতেন আমাদের অন্তরও কখনো পবিত্র হতো না।
তাই আমরা এভাবে বলতে পারি, নির্মোহ পবিত্র অন্তরই প্রজ্ঞা,এলহাম,গায়েব বা অদৃশ্যের বিমানবন্দর আর এই অন্তর নামক বিমানবন্দরেই স্রষ্টার ইচ্ছে বা করুণাতেই অতিইন্দ্রিয় জ্ঞান বা তথ্যের আগমন ঘটে।
নবী হযরত ইয়াকুব (আ)কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,আপনার ছেলেকে(ইউসুফ)যখন আপনার হিংসুটে ছেলেরা কোয়ায় ফেলে দিয়েছিলো তখন তা আপনি দেখেন নি।কিন্তু সুদূর মিশর থেকেও হারানো ছেলের ঘ্রাণ পেলেন কিভাবে?হযরত ইয়াকুব(আ) বলেছিলেন এ অদৃশ্য জ্ঞান(গায়েব) বিজলীর মতন যখন তা ঘটে তা সব কিছুই দেখা যায়।
আল্লাহ্পাক বলেন,æহে নবী ওদের বলো,আমি তো কখনো তোমাদের বলি নি যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভাণ্ডার রয়েছে বা গায়েবের বিষয়ে আমার জ্ঞান রয়েছে।অথবা কখনো বলি নি যে,আমি ফেরেশতা।আমি তো শুধু আমার উপর নাজিল হওয়া ওহীর অনুসরণ করি”।(সূরাঃআনআমঃ৫০)
আল্লাহ্পাক আরো বলেন,æগায়েবের সকল জ্ঞানের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে। তিনি ছাড়া এ বিষয়ে আর কেউ জানে না।জমিনে বা পানির অভ্যন্তরে যা কিছু আছে সবই তিনি অবগত। তার অগোচরে গাছের একটি পাতাও পরে না। তার অজ্ঞাতসারে মাটির ভিতরে কোনো শস্যদানা অঙ্করিত হয় না। শুষ্ক প্রতিটি বস্তুর প্রকৃতি লিপিবদ্ধ রয়েছে উন্মুক্ত কিতাবে(দৃষ্টিমানদের পড়ার জন্যে)”।(সূরাঃআনআমঃ৫৯)
লেবাননের বিখ্যাত দার্শনিক খলিল জিব্রান আমার স্রষ্টা না বলে স্রষ্টার আমি বলতে বলেছেন।স্রষ্টা বড় বিষয় অসীম আর সৃষ্টি ক্ষুদ্র সসীম।
আল্লাহ্ বলেন,æদৃশ্যমান বা অদৃশ্য সব কিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকুন জানাবেন এর বাহিরে তার জ্ঞানের সীমানা সম্পর্কে কারো পক্ষেই ধারনা করা সম্ভব নয়”।(সূরাঃবাকারা,আয়াত ২৫৫ এর অংশ বিশেষ)
রসুলুল্লাহ(স) বলেন,æআমি মানুষের অতিরিক্ত কিছু নই।আমি যখন ধর্ম বা জীবনাচরণ সম্পর্কে কোনো নির্দেশ দিই তখন তা পুরোপুরি অনুসরণ করো।আর যখন পার্থিব বিষয়ে কিছু বলি তখন আমি তোমাদেরই মতো একজন”।(সহিহ্ মুসলিম)
আলাহপাকে একশটি গুণবাচক নাম রয়েছে। তিনি তার রূপ গুণে গুণান্বিত হওয়ার কথাও বলেছেন।আল্লাহ্ বলেন,æহে নবী বলো আমাদের জীবন আল্লাহর রং এ রঙ্গিন।আল্লাহ্ ছাড়া (জীবনকে) এত সুন্দর রং কে দিতে পারে?” (সূরাঃবাকারাঃ১৩৮)
নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি রসুলুল্লাহ(স)আল্লাহ্র গুনে বা রঙ্গে সর্বাধিক গুণান্বিত। এবার নবীজি(স)গায়েব জানেন কি জানেন না তার উত্তর আল্লাহ্ পাক দিচ্ছেন কোরআনের সূরা জীনের ২৬-২৭ আয়াতে।বলা হয়েছে,
æতিনি একাই গায়েবের বা অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। গায়েবের জ্ঞান কারো পক্ষেই জানা সম্ভব নয়, যদি না তিনি কাউকে জানান,যেমন তিনি নবী রসুলদের জানিয়েছেন”।
সর্বশেষ সূরা তাকবিরে আয়াত ২২-২৫ এ আল্লাহ্ বলেন, æআর (হে মক্কাবাসী!)তোমাদের সাথী পাগল নয়। সে পয়গামবাহক ফেরেশতাকে উজ্জ্বল দিগন্তে স্পষ্ট দেখেছে।গায়েব অর্থাৎ মানবীয় বিচার বুদ্ধির অগম্য বিষয় সম্পর্কে বলার ব্যাপারেও তার কোনো কার্পণ্য নেই।আর এ বাণী কোনো অভিশপ্ত শয়তানের বাক্য নয়”।
পরিশেষে বলতে পারি,সাধারণ মানুষের চেয়ে নবী রসুলদের সম্মান সব সময় বেশি। নবীজি হচ্ছেন রসুলদের প্রধান রসুলুল্লাহ ।তার জীবন মানবতার জন্য মহা-আদর্শ।অহিংসা ও মানবাধিকারের সফল রূপকার তিনি। নবুওয়তের বহুবিধ দায়িত্ব পালনের জন্যেই তিনি গায়েব বা অদৃশ্য জানেন । অদৃশ্য যখন দৃশ্যমান হয় তখন তা আর গায়েব থাকে না।
(চলবে…)
মুজাহিদ মসি
লেখক-কবি
কমলপুর-মনতলা-মাধবপুর-হবিগঞ্জ
[email protected]