জৈন্তায় লিয়াকত লীলা : লাগামহীন লিয়াকত

ছামির মাহমুদঃ সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় লিয়াকত আলীর নাম উঠলেই এমপি ইমরান আহমদের নামও আসে। ‘এমপির খাস লোক’ নামে পরিচিত। নিজস্ব বাহিনী গঠন করে সরকারি-বেসরকারি ভূমি দখল, লুটপাট এমন কোনো অপরাধ নেই যা তার হাত দিয়ে হয়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মখলিছুর রহমান দৌলাহীন জৈন্তাপুর যেন তার। দলীয় পদ করায়ত্ব করে এমপির প্রভাবে লাগামহীন। বিনা বাঁধায় তিনি এসব অপকর্ম করে আবার প্রকাশ্যে বলে বেড়ান তার অপরাধ লিলার কথা। তিনি কউকে পরোয়া করেন না। শুধু জৈন্তাপুর উপজেলায় তাঁর এই অপরাধ লীলা সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর এই অপকর্মের জাল বিস্তার করেছেন গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত। ওইসব এলাকায় তাঁর নাম শুনলেই নিরীহ জনগণ আতঙ্কে কেপে ওঠেন। পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে অপরাধ কর্মকান্ড চললেও নির্যাতনের ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না।
Liyakot_jaintyaএকসময়ে লিয়াকত ছিলেন, আওয়ামীলীগ নেতা ইমরান আহমেদ এর গাড়ি চালক। গাড়ি চালক থেকে তিনি এখন দুর্দন্ড প্রভাবশালী এক আওয়ামীলীগ নেতা। গত ৩ জানুয়ারি খাসিয়া জনগোষ্ঠির পান সুপারীর বাগান আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দিনেদপুরে বাগানের প্রায় ২ শতাধিক সুপারির গাছ কেটে দখলের চেষ্টা চালান। এনিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মোকামপুঞ্জির খাসিয়াদের পান-সুপারির বাগান দখলের একটি সচিত্র রিপোর্ট গত ৮ জানুয়ারি দৈনিক সবুজ সিলেট-এ প্রকাশিত হওয়ায় স্থানীয় প্রতিনিধিকে অফিস থেকে তুলে নিয়ে লিয়াকতরে নির্যাতন সেল হিসেবে পরিচিত থানা সংলগ্ন তাঁর কার্যলয়ে নিয়ে টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে সাংবাদিক রেজওয়ান করিম সাব্বিরকে অমানবিক নির্যাতন করেন তিনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। নির্যাতন করেই তারা ক্লান্ত হয়নি সাংবাদিককে নির্যাতনের কথা প্রকাশ্যে অন্যান্য সাংবাদিকদের কাছেও বলে বেড়ান। এমনকি ওই নির্যাতনের একটি দৃশ্য তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আপলোড করে দেন। ফেইসবুকে নির্যাতনের দৃশ্য ছাড়ার কারণে সবুজ সিলেটের হাতেও এর তিনটি ছবি হস্তগত হয়।
এই ঘটনায় জৈন্তাপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় তিনি এখনও বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন এনিয়ে যেন কেউ আর বাড়বাড়ি না করে। বিভিন্ন দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধিদের এই হুমকি ধমকি এখনও অব্যাহত আছে। তিনি শুধু নিজেই হুমকি দিচ্ছেন না তার হয়ে খোদ জৈন্তাপুর থানা পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে দাড়ালে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়ারানি করার।
সরেজমিনে জৈন্তাপুর গেলে লিয়াকতের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসী কাউকে পাওয়া যায়নি। ক্ষমতার দাপটে এমন অবস্থা স্বাভাবিক। তবে সাংবাদিক নির্যাতন নিয়ে সরব অনেকেই। কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সঙ্গত কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জৈন্তাপুরের বেশ কয়েকজন অভিযোগের ঢালা খুলে দেন। সম্প্রতি সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরে অনেকেই সবুজ সিলেটকে বলেন, লিয়াকত আলীর এমন বর্বর কান্ড ফেনির গডফাদার জয়নাল হাজারিকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার কথা ছাড়া জৈন্তাপুর প্রশাসনও চলে না। অভিযোগ আছে, জৈন্তাপুর থানায় লিযাকতের অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে গেলে উল্টো পুলিশ বলে লিয়াকতের সাথে আপোসে বসে শেষ করে নেন। মামলা নেয়া যাবে না। অনেক উপরে তার লোক আছে বিবাদে জড়ালে বিপদে পড়ে যাবেন বলে থানা কম্পাউন্ড থেকে অভিযোগ কারীদের তাড়িয়ে দেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
জৈন্তাপুরে লিয়াকতের অন্যতম সহযোগি খায়রুল ইসলামের বাসায় লিয়াকত আলীর কাছে সাংবাদিককে ধরে নিয়ে নির্য়াতন করা প্রসঙ্গেকে জানতে চাওয়া হলে লিয়াকত আলী অকপটে স্বীকারও করেন সবুজ সিলেটের জৈন্তাপুর প্রতিনিধি সাব্বিরকে তার লোকজন ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা। তবে তিনি দাবি করেন, তাকে (সাব্বির) অফিসে এনে শুধু প্রকাশিত রিপোর্ট সর্ম্পকে জানতে চেয়েছি, নির্যাতন করা হয়নি।
টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে নির্যাতন করেছেন আমাদের কাছে এর তথ্য প্রমাণ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাই আমি তাকে বলিনি সে নিজেই মেজে বসে পড়ে কাপছিল। এসময় আমার দলীয় কিছু অতি উৎসাহী ছেলে-ফেলে এর ছবি উঠায়। তাই আপনে এই ঘটনার ছবি পেয়ে থাকতে পারেন।

আরও পড়ূনঃ