‘সব শিশুকে মেরে ফেলেছি, আমরা এখন কী করব’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মঙ্গলবার হামলার এক পর্যায়ে পেশোয়ারে স্কুলে হামলাকারীদের একজন তাদের কমান্ডারকে জিজ্ঞেস করে, “অডিটরিয়ামের সব শিশুকে আমরা মেরে ফেলেছি, এখন কী করব?” কমান্ডারের আদেশ, “সেনাবাহিনীর লোকদের জন্য অপেক্ষা কর, নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার আগে তাদেরও হত্যা কর।”
মঙ্গলবার পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে তখনো পর্যন্ত বেঁচে থাকা হামলাকারী শেষ দুই জঙ্গির সঙ্গে তাদের কমান্ডারের শেষ কথোপকথন এটি। এর পরপরই স্কুলের এক পাশের প্রবেশ পথের বাইরে প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করে থাকা সেনা কমান্ডোদের লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের উড়িয়ে দেয় ওই দুই হামলাকারী। বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এসব কথা জানিয়েছে দ্য ডন। এই কথোপকথনসহ সাড়ে সাত ঘন্টাব্যাপী ওই হামলা চলাকালে হামলাকারীদের আরো কিছু কথোপকথন গোয়েন্দারা রেকর্ড করেছেন। হামলাকারীদের নাম ও যে দুইজনের কথাপোকথন উপরে দেওয়া হয়েছে তাদের সনাক্ত করেছে পাকিস্তান। এদের একজনের নাম আবুজর, অপরজন তার কমান্ডার যার নাম ‘কমান্ডার’ উমর।
উমর আদিজাই পেশোয়ারের ফ্রন্টিয়ার এলাকার একজন জ্যেষ্ঠ জঙ্গি। এই জঙ্গি উমর নারায়ি বা উমর খলিফা নামেও পরিচিত। পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, উমর আফগানিস্তানের নানগ্রাহর প্রদেশের নাজিয়ান জেলা থেকে পেশোয়ারের হামলাটি পরিচালনা করেছেন এবং সেখান থেকেই কলগুলো করেছেন।সাত জঙ্গির একটি দল স্কুলে হামলাটি চালিয়েছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে পাঁচজন স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিজেদের উড়িয়ে দেন অপর দুজন বাইরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান।
স্কুলের পেছনের দেয়াল বেয়ে হামলাকারীরা স্কুলটিতে প্রবেশ করে। এ কাজে একটি মই ও কাঁটাতার কাটার জন্য কাটার ব্যবহার করে। নেমেই তারা সবাই স্কুলের প্রধান অডিটরিয়ামের দিকে অগ্রসর হন। ওই অডিটরিয়ামে তখন স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার নিয়ম-কানুন শেখাচ্ছিলেন এক শিক্ষক। প্রধান অডিটরিয়ামে স্কুলের সব জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা আছে, এটি কি আগে থেকেই জানতো হামলাকারীরা? “আমরা এখনো এটি জানতে পারিনি, যেসব প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজছি এটি তাদের অন্যতম,” বলেন এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। অডিটরিয়ামটির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক রক্ষী সম্ভবত হামলাকারীদের প্রথম শিকারে পরিণত হন, সেখানে অনেক রক্তের মাঝ দিয়ে বেশ কয়েকটি পায়ের ছাপ সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।
পেছনের দরজাটি বন্ধ পেয়ে জঙ্গিরা অডিটরিয়ামের প্রধান দুই প্রবেশ পথ ও বের হওয়ার দরজা দিয়ে ঢুকে হামলা শুরু করে। এখানেই হত্যাকাণ্ডের মূল অংশটি সম্পন্ন হয়।
জঙ্গিদের সঙ্গে পাল্টা হামলায় অংশ নেয়া এক সেনা কর্মকর্তা তাই মনে করেন। দুই পাশের প্রবেশ দরজার পাশে রক্তে ভেসে যাওয়া মেঝে স্বাক্ষ্য দিচ্ছে এখানে কী ভয়াবহ, নারকীয় কাণ্ড ঘটেছিল।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “এখানে নিস্তেজ শরীরগুলো স্তুপ হয়ে পড়েছিল, কিছু মৃত, কিছু জীবিত। আমি মনে করতে চাই, আমি এটি দেখিনি।”
বাইরে গোলাগুলির আওয়াজে শিক্ষার্থীরা সবাই হয়তো অডিটরিয়াম ছেড়ে যেতে চেয়েছিল, এখানেই জঙ্গিদের মুখোমুখি পড়ে যায় তারা যারা মৃত্যুদূত হয়ে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল।
এই হলের প্রতি ইঞ্চি জায়গায় রক্তের স্তুপ জমে ছিল। যারা বেঞ্চের পেছনে লুকিয় ছিল তাদের একজন একজন করে প্রত্যেকের মাথায় গুলি করা হয়।
এই হলের প্রবেশ পথ ও ভিতর থেকে একশ’রও বেশি লাশ ও আহতদের বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। হলের এক পাশে কোনায় এক নারী শিক্ষিকার লাশ পড়ে ছিল। তার লাশটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এক সময় সেনা কমান্ডোরা এসে পাল্টা হামলা চালালে জঙ্গিরা কয়েক মিটার দূরে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে অবস্থান নেয়। দুপক্ষের গোলাগুলির এক পর্যায়ে জঙ্গিরা কোনঠাসা হয়ে পড়লে তাদের চারজন আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এদের একজন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার ঘরে যেয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রধান শিক্ষিকা তাহিরা কাজি’র লাশ পরে সনাক্ত হয়।
প্রশাসনিক ভবনে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে স্কুলের তিনজন কর্মী ও দুজন শিক্ষার্থীও নিহত হন। অপর দুই জঙ্গি প্রশাসনিক ভবনের বাইরে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেনারা কাছাকাছি আসতেই পরপর দুজনই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কাছাকাছি অবস্থান নেয়া সাত সেনা আহত হন। এই বিস্ফোরণেই আগেই নাজিয়ানে থাকা নিজেদের কমান্ডার উমরের সঙ্গে শেষ কথা বলেন হামলাকারী জঙ্গি আবুজর।