জানুয়ারিতে খুলছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সংঘর্ষের ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে এখনো কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র শাবি ভিসির নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি চা চক্রের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এতে শাবি কবে চালু করা যেতে পারে সেব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ অবস্থায় চলতি বছর এ বিশ্ববিদ্যালয়টি খোলার কোন সম্ভাবনা নেই। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি কোন সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি খোলা হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষই হলে উঠার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পাস খোলার পর আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। সংঘর্ষের পরে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা করে গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্যকে নিয়ে ভিসির বিদেশ সফর, প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দিষ্ট সময় বেধে না দেয়ায় তদন্ত কমিটির কাজের ঢিলেমি, সংঘর্ষের ঘটনায় প্রক্টর ও প্রভোস্টদের পরস্পর দোষারোপ, প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টার দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা, সংঘর্ষের জেরে কয়েকজন সহকারী প্রক্টরের তড়িগড়ি পদত্যাগ, প্রক্টরের মেয়াদ শেষ হলেও পদে রাখা না রাখা নিয়ে ধুম্রজাল, পুরো প্রশাসনের দায়সাড়া ভাব, মহান মুক্তিযুদ্ধের চতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের মধ্যে মতানৈক্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় উদ্বুদ্ধ ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক পরিষদ ও শিক্ষক সমিতির নিশ্চুপ ভুমিকা, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নিষ্কৃয়তা, রেজিস্ট্রার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা এসোসিয়েশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করা, ভিসির গা ছাড়া ভাব সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত করছে। কোন ক্ষেত্রেই শাবি খোলার কোন আলামত দেখা যাচ্ছেনা।
বর্তমান সরকারের শাসনামলে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান শাবির ছাত্র ররাজনীতির অভিভাবক হয়ে উঠেন সিলেটের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও টেন্ডার বানিজ্য করতেই ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। সংঘর্ষের জেরে তাদের মাঝেও মতনৈক্য দেখা দেয়। এতে ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের সমস্যা সমাধানেও দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিয়েছে।
ফলে ক্যাম্পাসের বর্তমান অবস্থা প্রাণহীন হয়ে আছে। এ অবস্থায় সংকটের সমাধান না করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ একে অপরকে এবং শিক্ষকরা পরস্পরকে দোষারোপ করায় ব্যস্ত রয়েছে।
এদিকে অচল ক্যাম্পাসে আগামী ২৪ ডিসেম্বরের অফিসার্স এসোসিয়েশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন কর্মকর্তারা। সংঘর্ষের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ভিসির কনফারেন্স রুমে নাম মাত্র একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কি উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব সে বিষয়ে কার্যকর কোন সিদ্ধান্ত কিংবা কমিটি গঠন না করে চা চক্রের মাধ্যমেই সভার সমাপ্তি ঘটে বলে জানা গেছে।
জামায়াতপন্থি এক শিক্ষক নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে কিনা সন্দেহ করেছেন করছেন অনেকে। এঅবস্থায় বিশ্ববিদ্যালের পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। কেউ বলতে পারছেন কবে খুলবে শাবি।
ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে কি ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে ভিসি প্রফেসর আমিনুল হক ভূইয়া বিরক্ত হয়ে উঠেন। উল্টো বন্ধের দিন কেন ফোন করা হল এ প্রশ্ন করেন সাংবাদিকদের। সময় সুযোগ হলে ক্যাম্পাস খোলা হবে বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এর আগে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষনা করে তদন্ত কমিটির এক সদস্যকে নিয়ে ভিসির বিদেশ সফর নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশে তোপের মুখে পড়েন ভিসি। সফর সংক্ষিত করে দুই দিন আগেই ২৫ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরেন।
তবে দেশে ফিরেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তিনি। সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যে বিভাজন হয়েছে তা মেটানোরও কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। একারণে শিক্ষকদের মধ্যেও অনেকটা গা ছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে। শাবি খোলার ব্যাপারে তাদের মধ্যেও অনেকটা আন্তরিকতার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।