লোপা আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে !
স্বামীর পরকীয়ার বাধা দেওয়ার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে টুনিকে হত্যা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’র টুনি খ্যাত নায়ার সুলতানা লোপা আত্মহত্যা করেনি, স্বামীর পরকীয়ার বাধা দেওয়ার জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। টুনি’র স্বামী আলী আমিন মাদক ও পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। আর স্বামীর এসব কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে টুনিকে হত্যা করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টুনি’র মা রাজিয়া সুলতানা এসব অভিযোগ করেন।
রাজিয়া সুলতানা বলেন, পুলিশের সুরতহাল ও ডাক্তারের ময়নাতদন্ত রিপোর্টের মধ্যে অনেক গরমিল রয়েছে। যার কারণে প্রথমবার করা ময়নাতদন্তে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসেনি। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত টুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, টুনি’র দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্টে যেনো প্রকৃত ঘটনা উঠে আসে। এছাড়া টুনি হত্যার সঠিক বিচার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীসহ তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজিয়া সুলতানা বলেন, ২০০০ সালে আলী আমিনের সঙ্গে টুনির বিয়ে হয়। এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারেন আলী মাদক ও পরকীয়ায় আসক্ত। টুনিকে হত্যার কিছুদিন আগে গুলশান ওয়েস্টিন হোটেলের সামনে আলী কয়েকজন বন্ধুসহ নেশাগ্রস্থ অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সম্প্রতি সাজ নামে আমেরিকা প্রবাসী এক মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরকীয়ায় জড়ায় আলী। সাজ দেশে আসলেই আলীর বাসায় চলে আসতো। সারারাত একসঙ্গে থাকার পর ভোরে গাড়ি দিয়ে সাজকে বাসায় পৌঁছে দিতো। তার একাধিক পরকীয়ার বিষয় ধীরে ধীরে টুনির কাছে স্পষ্ট হতে থাকে। যা সহ্য করতে পারেনি আলী।
রাজিয়া সুলতানা আরো বলেন, টুনিকে বিভিন্ন সময় স্বামীসহ তার পরিবার মানসিক নির্যাতন করত। ঘটনার দিনও টুনির শ্বাশুড়ি ইয়াসমিনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এই ঘটনার জেরে টুনিকে হত্যা করা হয়। আর এটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেবার জন্য টুনি’র লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। হত্যার আগেই আলী বাসার দলিল, ব্যাংকের চেক, লকারের চাবি, আইপ্যাড, প্রেমিকার দেয়া উপহার সামগ্রীসহ মূল্যবান জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে ফেলে। এছাড়া আলী বাচ্চাদের বলেছিল তাদের মা আত্মহত্যা করবে। ফলে তারা ভাল থাকবে।
রাজিয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, আত্মহত্যা করলে গলার হাড় ভেঙ্গে যেত কিন্তু সেটা ভাঙ্গেনি। ঝুলন্ত অবস্থায় টুনি’র কোমরে ওড়না বাধা ছিল। কেউ নিজে ফাঁস দিলে তার কাপড় কোমরে পেঁচানো থাকার কথা না। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে হাত, কনুই ও গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার পুরোটাই চেপে যাওয়া হয়েছে। আলী ও তার পরিবার বিপুল পরিমান অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে ময়নতদন্ত রিপোর্ট পাল্টে দিয়েছে। সম্প্রতি আলী আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হুমকি দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর গুলশান-১, রোড-১২৬, বাড়ি-১২ এর সি-৩ ফ্ল্যাট থেকে টুনির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় টুনি’র মা রাজিয়া সুলতানা গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় টুনি’র স্বামী আলী আমিন, শ্বশুর আমিন আলী ও শ্বাশুড়ি ইয়াসমিনকে আসামি করা হয়। জানা গেছে, টুনি দম্পতির আনায়া (৯) ও আজারা (৬) নামে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তারা নানী রাজিয়া সুলতানার হেফাজতে রয়েছেন।